চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

জাতির জনকের স্বপ্নের বাংলাদেশ

কবির কাঞ্চন

২৭ আগস্ট, ২০১৯ | ১:৫০ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে নাম শুনলেই বুকের ভেতর থেকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বেরিয়ে আসে। তিনি সমগ্র বাঙালি জাতির জনক ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। বাঙালি জাতির কাঙ্খিত স্বাধীন দেশের তিনিই প্রথম রূপকার। তিনিই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের একমাত্র স্থপতি।

দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানকে (বর্তমান বাংলাদেশ) পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে সংযুক্তির পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তান তার ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে এসেছে। সেই লড়াইয়ে অনেক বাঙালি নেতা এগিয়ে এসেছিলেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, সুভাষ বসু, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রমুখের অবদান বাঙালির মননে চিরস্মরণীয়। বাঙালিরাও পরম শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায় তাঁদের সম্বোধন করে থাকে ‘দেশবন্ধু’, ‘নেতাজী’, ‘শেরে বাংলা’, ‘মজলুম জননেতা’ ইত্যাদি নামে।

তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর অপরিসীম দেশপ্রেমের মাধ্যমে সব খেতাবকে ছাড়িয়ে গেছেন। বাংলাদেশকে হানাদারের করালগ্রাস থেকে মুক্ত করতে রাতের পর রাত নির্ঘুম থেকেছেন। তাঁর বজ্রকন্ঠে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি জাগ্রত হয়েছিলেন। সে কারণে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে আছে দেশ ছাপিয়ে বিশ্বময়।
ইতোমধ্যে তাঁর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর মধ্যে অন্যতম মর্যাদার আসনে স্থান করে নিয়েছে। ৭ই মার্চের ভাষণের অপর নাম ‘বজ্রকণ্ঠ’। তাঁর বজ্রকণ্ঠ কাঁপিয়ে দিয়েছিল সমগ্র দুনিয়ার মুক্তিকামী মানুষকেও। সহজ সরল মানুষকে তিনি বীরত্বের দীক্ষা দিয়ে জাগিয়ে দিয়েছিলেন। সাধারণের মনে স্বাধীনতা সুখের বীজ বপন করেছিলেন তিনিই। সাড়ে সাত কোটি মানুষের হৃদয়ের একজন আস্থাশীল বলিষ্ঠ নেতা হয়ে তিনি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তির বার্তা দিয়েছিলেন। তিনি শত দুঃখ কষ্ট সহ্য করেও মা, মাটি ও দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা ভেবেছিলেন। তাই বিশ্বখ্যাত বড় বড় নেতাদেরও তিনি ছাড়িয়ে গেছেন।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচনের ব্যপারে বিবিসির বাংলা সার্ভিস জরিপ চালিয়েছে। এই জরিপে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন। তাতে বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলে আনন্দের ঢেউ বয়ে যায়। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এই জরিপের ফলাফল সানন্দে মেনে নিয়েছে। এদেশের সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশ ও বাঙালির ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বলে অনেক আগ থেকেই মেনে নিয়েছে। কেউ ইচ্ছে করলেই তাঁকে ইতিহাস থেকে নির্বাসিত করতে পারবে না। মহাত্মা গান্ধীকে বাদ দিয়ে যেমন ভারতের ইতিহাস লেখা যায় না, মাও সেতুংকে বাদ দিয়ে চীনের, হো চি মিনকে বাদ দিয়ে ভিয়েতনামের, জর্জ ওয়াশিংটনকে বাদ দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, কামাল পাশাকে বাদ দিয়ে আধুনিক তুরস্কের, মাহাথির মোহাম্মদকে বাদ দিয়ে মালেশিয়ার, ম্যান্ডেলাকে বাদ দিয়ে যেমন কালো মানুষের দেশ আফ্রিকার ইতিহাসকে লেখা যায় না, তেমনি বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা যায় না। অন্যায়ের কাছে তিনি কখনও মাথা নত করেন নি। দেশের দুঃসময়ে বারবার তিনি হাল ধরেছেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি পরিবার পরিজনদের কথা চিন্তা না করে বাংলার মানুষের প্রাণের দাবী প্রতিষ্ঠা করতে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আর ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে মাত্র নয় মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে যাঁরাই অবদান রেখেছেন তাদের সবাইকে তিনি বীরের মর্যাদা দিয়েছেন। সারাজীবন তাদের পাশে থাকার নিশ্চয়তাও দিয়েছিলেন। বীরঙ্গনা নারীদের সম্মানিত করে তিনি এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘ঐ বীরঙ্গনা নারীদের বাবার নামটির পাশে তোমরা লিখে দিও আমার নামটি। আর ঠিকানা দিয়ে দিও ধানমন্ডি ৩২।’
যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে ঢেলে সাজাচ্ছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের সময়েই কিছু কুলাঙ্গার ঘাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তারা রাতের আঁধারে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার রূপকারকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেই সাথে কিছু সময়ের জন্য বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি আবার যেন পরাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে গেলো। কিন্তু সময় চলে তার আপন গতিতে। সেই চিরায়ত নিয়মেই বর্তমানে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে স্বপ্নের সোনার বাংলার রূপকারের স্বপ্নের মতো করে।

লেখক : সহকারী শিক্ষক, বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজ চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট