চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ কী?

নাওজিশ মাহমুদ

২৫ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:৪৮ পূর্বাহ্ণ

ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫ এ এর আওতায় কাশ্মীরকে প্রদত্ত বিশেষ মর্যাদা ভারত সরকার বাতিল করেছে। এই মর্যাদা বাতিলে ভারতীয় রাজনৈতিক দলসমূহ ও বুদ্ধিজীবী মহলের মধ্যে যেমন মতভেদ দেখা দিয়েছে, তেমিন বাংলাদেশের জনগণের মধ্যেও একটি মৃদু প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তবে এতে ভারতের গণতন্ত্রের ঐতিহ্যের ভাবমূর্তি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি নৈতিকতার প্রশ্নও দেখা দেবে। কারণ ভারতে কাশ্মীরের অন্তর্ভূক্তির শর্তই ছিল ৩৭০ ধারা। এটা বাতিল করতে হলে কাশ্মীরের জনগণের সম্মতির প্রয়োজন ছিল। এখন প্রশ্ন উঠবে কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভূূক্তির ভিত্তি কি? ৩৭০ ধারা ছিল ভারতের সংবিধানের একটি অস্থায়ী অনুচ্ছেদ। ৩৭০ ধারা বলে প্রতিরক্ষা অর্থ এবং যোগাযোগ ব্যাতিরেকে আর সকল ক্ষমতা ভোগ করতো কাশ্মীরের সরকার। একই ধারা বলে কাশ্মীরের নিজস্ব সংবিধান ও পতাকাও ছিল। ৩৫ এ ধারা বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে কাশ্মীরের স্থায়ী অধিবাসীরা কারা এবং তারা কি কি অধিকার ভোগ করবে।
বিশে^র ভূস্বর্গ নামে খ্যাত কাশ্মীর বর্তমানে অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন কাশ্মীর জানে না, তাঁদের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। কাশ্মীর একটি বিতর্কিত অঞ্চল হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত। কাশ্মীরের মূল ভূখন্ড তিনটি দেশে বিভক্ত। ভারত, পাকিস্তান ও চীন। ভারতে আছে জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখ, পাকিস্তানে আছে আজাদ কাশ্মীর ও গিলগিত-বাল্টিস্থান এবং চীনে আছে আকসান ও ট্রান্সকেরাকোরাম ট্যাক্ট অঞ্চল। কাশ্মীরের জনগোষ্ঠী বিভক্ত হয়ে আছে আজাদ কাশ্মীর ও জম্মু ও কাশ্মীরে। কাশ্মীরের জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ মুসলিম। ঐতিহাসিকভাবে কাশ্মীর উপত্যকা নামে খ্যাত এই অঞ্চলটি পঞ্চম শতাব্দীর পরে প্রথমে হিন্দুধর্ম এবং পরে বৌদ্ধধর্মের কেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। নবম শতাব্দীতে শৈব মতবাদ বিস্তার লাভ করে। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ইসলাম ধর্ম প্রবেশের পর শৈব মতবাদ সংকুচিত হয়ে পড়ে। হিন্দু ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্মের সাথে ইসলামের রাজনীতি ও সংস্কৃতির ইরানী ধারার প্রভাবে কাশ্মীরে জন্ম নেয় সুফিবাদের। ১৩৩৯ সালে শাহ মীর কাশ্মীরের প্রথম মুসলিম শাসক হিসেবে আবির্ভূত হন। পাঁচ শতাব্দীকাল এই মুসলিম শাসন অব্যাহত ছিল। ১৫৮৬ সাল থেকে ১৭৪৭ সাল পর্যন্ত মোঘল শাসন এবং ১৭৪৭ সাল থেকে ১৮১৯ সাল পর্যন্ত আফগান দুররানী স¤্রাটদের শাসানাধীন ছিল। ১৮১৯ সালে শিখদের নেতা রঞ্জিত সিং কাশ্মীর দখল করেন। ১৮৪৬ সালে ইংরেজদের হাতে শিখরা পরাজিত হলে অমৃতসর চুক্তি অনুয়ায়ী জম্মুর রাজা গুলাব সিংহ বৃটিশদের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে কাশ্মীরের শাসনক্ষমতা লাভ করেন। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এই শাসন অব্যাহত থাকে। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতের বিভাজন হলে, দেশীয় রাজ্যগুলিকে স্বাধীনভাবে ভারতে এবং পাকিস্তানে যোগদানের সুযোগ দেয়া হয়। অথবা স্বাধীনভাবে থেকে যাওয়ারও সুযোগ ছিল। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ হায়দ্রাবাদ (বর্তমানে মহারাষ্ট্রের একটি অংশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা এবং কর্ণাটক), যার শাসক ছিলেন মুসলিম নিজামরা, স্বাধীন থাকতে চেয়েও ব্যর্র্থ হয়। কারণ হায়দ্রাবাদের জনগণ ও ভারত সরকারে বিরোধীতা। কাশ্মীরে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বে¡ও তৎকালীন রাজা হরি সিংহ পাকিস্তানে যোগ না দিয়ে স্বাধীন থাকতে চেয়েছেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট হয়ে আফ্রিদি উপজাতীয় যোদ্ধারা কাশ্মীর দখলের চেষ্টা চালালে হরি সিংহ বাধ্য হয়ে ভারতের সাহায্য চান। ভারতে যোগদানের শর্তে ভারতীয় সেনা কাশ্মীরে প্রবেশ করে। ৩৭০ ধারার মাধ্যমে কাশ্মীর ভারতের সাথে অন্তর্ভূক্ত হয়। তাঁর পুর্বেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী বর্তমানে আজাদ কাশ্মীর ও বাল্টিস্থান দখল করে নেয়। ১৯৪৯ সালে জাতি সংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ঘটে এবং সীমানা নির্ধারিত হয়। কাশ্মীরের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে, এই ব্যাপারে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ে সম্মতি দেয়। কিন্তু গণভোট আর হয় নি । কাশ্মীর সমস্যা অমীমাংসিত থেকে যায়। ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধে চীন কাশ্মীরের আকসান ও ট্রানসকেরাকোরাম দখল করে নেয়। ভারত কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তিকালীন যে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছিল তা ধীরে ধীরে সংকুচিত করতে থাকে। কাশ্মীরের জনপ্রিয় নেতা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ এর প্রতিবাদ করলে তাঁকে দীর্ঘ ১৮ বছর জেলে আটকে রাখা হয়। ১৯৭৪ সালে ইন্ধিরা গান্ধীর সাথে নতুন চুক্তি করে শেখ আব্দুল্লাহ ক্ষমতায় আসেন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। এর ধারাবাহিকতায় কাশ্মীর ভারতে বিশেষ মর্যাদা প্রাপ্ত রাজ্য হিসেবে সংসদীয় গণতন্ত্র চর্চা অব্যাহত ছিল।
কাশ্মীরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণ, যাদের অধিকাংশই ভারতভুক্তি মন থেকে মেনে নিতে পারে নি। ভারত সরকারও কাশ্মীরের জনগণের আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। কাশ্মীরের ভাগ্য নির্ধারণে গণভোটের আয়োজনের প্রতি ভারতের আগ্রহ কোন দিন ছিল না। শুধুমাত্র জনতা দলের প্রধানমন্ত্রী ভিপি সিংহের আমলে মুফতি মোহাম্মদ সাইদকে (মেহবুবা মুফতির পিতা) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নিয়োগ করে কাশ্মীরীদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করেছিলেন। এতে কাশ্মীরিদের সম্মান প্রদর্শনের সাথে ভারতে ক্ষমতার শীর্ষে একজন কাশ্মীরির অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চেয়েছেন কাশ্মীর ভারতের একটি একীভূত রাজ্য। কাশ্মীরি জনগণ বিশে^র কয়েকটি জাতির মতো ভাগ্যাহত। বৃটিশ কূটচালের কারণে তাঁদের এই অবস্থা। বৃটিশ সরকার কাশ্মীরের মত বৃহৎ রাজ্যসমূহ স্বাধীন থাকার সুযোগ দিলেও তাঁদের পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করে নি। পাকিস্তান ও ভারতে আগ্রাসন থেকে রক্ষার কোন নিশ্চয়তা দিতে পারে নি। কাশ্মীর বা হায়দ্রাবাদসহ অন্যান্য দেশীয় রাজ্যসমূহ পাকিস্তান বা ভারতে যোগদান করবে এটা সিদ্ধান্তের অধিকার রাজাদের উপর ছেড়ে দিয়েছে অথচ ভারত ভাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনগণের আকাক্সক্ষার উপর ভিত্তি করে। দেশীয় রাজ্যসমূহে যদি গণভোটের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নিতো, তাহলে এই ধরনের সমস্যার উদ্ভবই হতো না। সংঘাতের স্থায়ী ব্যবস্থা বৃটিশেরাই করে গিয়েছে। তারা এই ভারতীয় উপমহাদেশ ত্যাগ করেছে সংঘাতের হাজারও রকমের ব্যবস্থা করে।
আরেকটি আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত ছিল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার। মাউন্ট ব্যাটেনকে গভর্নর জেনারেল রেখে কংগ্রেস বিশাল সুবিাধ নিয়ে গিয়েছে। আমরা সিলেটের করিমগঞ্জ হারিয়েছি, নদীয়া ভাগে পড়লেও ধরে রাখতে পারি নি, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল মুর্শিদাবাদ, মালদহ হারিয়েছি। ত্রিপুরা যোগদান করতে চাইলেও যোগ দিতে দেয়া হয় নি। আশেপাশের রাজ্যসমূহ হয়তো একটু চেষ্টা করলে পূর্ব পাকিস্তানের ভাগে পড়তো যা বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্ভূক্ত থাকতো। অন্তত মাউন্ট ব্যাটেনকে নিরপেক্ষ রাখার স্বার্থে ভারতের গভর্নর জেনারেল হিসেবে আপত্তি দিলে ভারত ও পাকিস্তানের অমীমাংসিত বিষয়সমূহ সালিশি কর্তৃপক্ষ হিসেবে কিছু সুবিধা হলেও পেতে পারতো। রাজনৈতিক নেতাদের অদূরদর্শী, ব্যক্তিগত ক্ষমতালোভ এবং আত্মম্ভরী আচরণের কারণে জনগণকে এর খেসারত দিতে হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, কাশ্মীরি জনগণ স্বাধীনতা চায় নাকি পাকিস্তনের সাথে অন্তর্ভূক্ত হতে চায়? না বিশেষ মর্যাদা নিয়ে ভারতে থাকবে? এটার উপর অনেকাংশে নির্ভর করে কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ। কাশ্মীরি জাতিসত্তাভিত্তিক রাজনীতি এবং ধর্মীয় ভিত্তিক রাজনীতি কোনটা প্রধান্য পাবে? কাশ্মীরের জাতিসত্তাভিত্তিক রাজনীতি প্রাধান্যের শর্তই হলো ২০% হিন্দুর সাথে মুসলিমদের বৈরিতার অবসান ঘটানো এবং একই সাথে তাদের সাথে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন তৈরী করা। এটা করতে না পরলে জাতিসত্তাভিত্তিক রাজনীতি বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। যতদিন জাতিসত্তাভিত্তিক রাজনীতি বিকশিত না হবে ততদিন ধর্মীয় রাজনীতি প্রাধান্য পাবে। ধর্মীয় রাজনীতির অন্যতম প্রধান ¯্রােতই হলো জঙ্গিবাদ। যা কাশ্মীরী জনগণের প্রতি বিশে^র সহানুভুতি পেতে একটি প্রধান বাধা। কাশ্মীরের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল ন্যাশানাল কনফারেন্স এবং পিডিপি। উভয়ে যদিও ধর্মনিরেপক্ষ রাজনীতির কথা বলে। আবার কংগ্রেস এবং বিজেপিরও একটি ভাল অবস্থান আছে। বিজেপী হিন্দুত্ববাদী পার্টি। কংগ্রেস ধর্মনিরেপক্ষেতার কথা বললেও দেশ বিভাজন থেকে শুরু করে বাংলা বিভাজন এবং পাঞ্জাব বিভাজন হিন্দু-মুসলিমের ভিত্তিতেই সম্পন্ন করেছে। ফলে ছদ্মবেশে হিন্দুত্ববাদকে আশ্রয় করে রাজনীতি করেছে। তাঁর প্রতিক্রিয়ায় ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং পিডিপিও মুসলিম জাতীয়তাবাদকে লালন করেছে। কাশ্মীরী জাতিসত্তার রাজনীতি কেউ করে নি। আজাদ কাশ্মীরের পাকিস্তান অধিকৃত থাকলে সেখানে মানুষ তো সার্বভৌম রাষ্ট্র করার কোন আন্দোলন করছে না। যদিও ভারতের ৩৭০ ধারার মত প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী আছে। ভারতে কেন সম্ভব হচ্ছে না? কারণ বাধা ধর্ম। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও কাশ্মীরের জনগণের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার প্রধান কারণ হচ্ছে ধর্ম। এই ধর্মের কারণে ইসলামের জঙ্গী গোষ্ঠী যেমন শিকড় গাড়ার সুযোগ পেয়েছে, তেমনি পাকিস্তান অর্থ, অস্ত্র এবং নৈতিক সমর্থন দিয়ে কাশ§ীরকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে। কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে এই পর্যন্ত তিনটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। তার মধ্যে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধ ছিল অনেক বেশী ব্যাপক এবং বিস্তৃত। এই যুদ্ধে বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) অরক্ষিত ছিল। ভারত চাইলে তখন সহজে পূর্ব পাকিস্তান দখল নিয়ে নিতে পারতো। এই যুদ্ধের পটভূমি বাংলাদেশে স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটে সৃষ্টিতে সহযোগিতা করেছে। কিন্তু কাশ্মীরের ব্যাপারে ভারত যেমন অসহিষ্ণু, তেমনি পাকিস্তান অনেক বেশী আক্রমণাত্মক। তার সাথে চীনের উপস্থিতি ভারতকে আতঙ্কিত করে, তেমনি পাকিস্তানকে প্রেরণা যোগায়। ভারতের বর্তমান সরকারের ৩৭০ ধারা বাতিলের বিপরীতে কাশ্মীরের জনগণের প্রতিক্রিয়া যতই নেতিবাচক হোক, এর প্রতিক্রিয়ায় হয়তো নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে উঠেবে, একটি সশস্ত্র সংগ্রাম করার চেষ্টা চালাবে। কিন্তু কাশ্মীরীদের জন্য “সুখী সমৃদ্ধ সুন্দর একটি কাশ্মীর” করতে পারবে কী না ভেবে দেখা দরকার। খুব ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বর্তমানে ভারতের বিরুদ্ধে আলাদা স্বকীয়তা এবং স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে হলে তাঁদেরকে আরো সুচিন্তিত ও দূরদর্শী হতে হবে। তামিলনাড়– ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে থেকে সংবিধান মোতাবেক ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চেয়েছিল। কিন্তু ভারত সরকার সংবিধান সংশোধন করে এই প্রবণতা রোধ করে। সেই তামিল নাড়– এখনও ভারতে রাজ্য হিসেবে আছে কিন্তু ভারতের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল তামিল নাড়–তে তাঁদের রাজনৈতিক ভিত্তি গড়ে তুলতে পারে নি।
কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলসমূহ কংগ্রেস বা বিজেপির উপর ভর করে ক্ষমতায় যায়। অর্থাৎ রাজনৈতিক দলসমূহ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের উপর নির্ভরশীলতার বার বার প্রমাণ দিয়েছে। কাশ্মীরের মেহবুবা মুফতি ও তাঁর পিপল্স ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) এবং ফারুক আবদুল্লাহ ও তাঁর ছেলে ওমর আব্দুল্লাহর ন্যাশানাল কনফারেন্স পরস্পরের বৈরী। এই বৈরীতায় জনগণ যেমন সম্পৃক্ত হয়েছে, তেমনি ভারতের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি ও কংগ্রেসও সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে। তার সাথে ভারতবিরোধী মুসলিম উগ্রবাদীরাতো আছেই। জনগণের বহুধাবিভক্তির সুযোগ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গ্রহণ করেছে। তাই কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের মানসিক সমর্থন বা মর্মবেদনা যতই থাকুক, বিশে^র জনগণের যতই সহানুভূতি থাকুক, ভবিষ্যত নির্ধারিত হবে কাশ্মীরের জনগণ ও রাজনৈতিক দলের পরস্পরের বোঝাপড়া এবং জনগণের ঐক্যবদ্ধ সামষ্টিক চেতনা দিয়ে। বর্তমান বিশে^র প্রেক্ষাপটে কাশ্মীরের স্বাধীনতা সুদূর পরাহত। তেমনি বিশেষ মর্যাদা ফিরে পাওয়াটাও অসম্ভব বলে মনে হয়। যদি ভারতের সুপ্রীম কোর্ট হস্তক্ষেপ না করে, এই সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন রদবদলের কোন সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। সরকার পরিবর্তন হলেও আবার ৩৭০ ধারা বহাল হবে তা আশা করা বাতুলতা। কারণ ভারতের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী কাশ্মীরের এই বিশেষ মর্যাদার প্রতি সহানভূতিশীল বলে মনে হচ্ছে না।
শুধুমাত্র অমর্ত্য সেনসহ বিবেকবান নাগরিক, মানবতাবাদী বুদ্ধিজীবী এবং বামপন্থী রাজনৈতিক দলসমূহ ৩৭০ ধারা বহাল রাখার পক্ষপাতি। ভারতের রাজনীতিতে তাঁদের প্রভাব ক্রমশ কমে আসছে। তবে কাশ্মীরের জনগণ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন অব্যাহত রেখে ভারত সরকারকে চাপে রাখতে পারে। কারণ ভারতে পর্যটকদের মাধ্যমে বিশাল বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের প্রধান উৎস কাশ্মীর। কাশ্মীরের জনগণেরও আয়ের প্রধান উৎস পর্যটন খাত থেকে। সুতরাং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক সংগ্রাম কীভাবে সমন্বিত করা হবে, তার উপর নির্ভর করবে কাশ্মীরের ভবিষ্যত। সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন জনগণের মধ্যে ঐক্য।
ধর্মীয় বিভাজন যেন রাজনীতিকে অতিক্রম করে না যায়। বাহিরের শক্তি দিয়েও এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যাবে না। কাশ্মীরি হিন্দু-মুসলিমের পারস্পরিক আস্থা এবং শ্রদ্ধা-ভালোবাসা, দৃঢ় ঐক্য এই সংকট মোকাবিলার প্রধান পথ। দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিষয়কে ভারত সরকার বাতিল করে দিয়ে যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে, এখন কাশ্মীরের রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী এবং তরুণসমাজ কিভাবে মোকাবিলা করবে তার উপর নির্মিত হবে কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ।

লেখক : রাজনীতি বিশ্লেষক ও কলামিস্ট।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট