চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বৈষম্যহীন সমাজ হোক মে দিবসের অঙ্গীকার

মোহাম্মদ ইলিয়াছ

১ মে, ২০১৯ | ১২:৫১ পূর্বাহ্ণ

ঐতি হাসিক মে দিবস বা আন্ত র্জাতিক শ্রমিক দিবস। বিশ্বের কোটি কোটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও দাবি আদায়ের দিবস। দৈনিক ১৬/১৭ ঘণ্টা কাজ করে সামান্য বেতনে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হত শ্রমিকদের। মালিকরা শ্রমিকদেরকে দাসের মতো ব্যবহার করত। প্রতিবাদে নামে একদল শ্রমিক। ১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমিকরা দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে নামে। শ্রমিকরা কারখানার মালিকগণকে দাবি মানার সময় বেঁধে দেয় ১৮৮৬ সালের পহেলা মে। কিন্তু কারখানার মালিকগণ দাবি মেনে না নিয়ে উল্টো পুলিশ বাহিনী লেলিয়ে দেয়। ১৮৮৬ সালের ৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের সামনে শ্রমিকরা মিছিলের উদ্দেশ্যে জড়ো হয়। তখন শ্রমিকদের উপর গুলি চালায় পুলিশ। এতে ১১ জন শ্রমিক নিহত হয়। দীর্ঘ এক আন্দোলন- সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে শেষ পর্যন্ত শ্রমিকরা দৈনিক আট ঘন্টা কাজ করার দাবি স্বীকৃতি পায়। প্রতিষ্ঠা পায় মে দিবস। প্রতিষ্ঠা পায় শ্রমিকদের দাবি আদায়ের দিবস হিসেবে। ১৮৮৯ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত অন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে পহেলা মে শ্রমিক দিবস ঘোষণা করা হয়। আত্মত্যাগকারী শ্রমিকদের কথা এবং শ্রমিকদের আন্দোলনের ্কথা স্মরণ করে ১৮৯০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী ১ মে বা মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত হয়ে আসছে। আমাদের দেশেও দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদ্য়া পালিত হয়। মে দিবসের শিক্ষা হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের বা সমাজের বৈপ্লবিক পরিবর্তন করার এবং বৈষম্য ও শোষণমুক্ত সমাজ উপহার দেয়ার। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিবসটি আমাদেরকে আরো শিক্ষা দেয় বৈষম্যহীন বেতন এবং শ্রম ঘন্টার মূল্যায়ন।
আমরা এখনো বৈষম্য সমাজ বলয় থেকে বের হতে পারিনি। কর্মস্থলে চলছে বৈষম্য। কেউ পায় কেউ পায় না। সমান চোখে দেখা হয় না। এদেশে আজও সরকারি ও বেসরকারি (এমপিওভূক্ত) শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে মাসিক বেতন প্রাপ্তির মধ্যে রয়েছে বৈষম্য। অথচ বেতন কোড ও স্কেল একই। রয়েছে বাড়ির ভাড়ার মধ্যে বৈষম্য। রয়েছে বিভিন্ন ভাতার মধ্যে বৈষম্য। রয়েছে কাজ করার মধ্যে বৈষম্য। আমাদের দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সরকারি ও বেসরকারি নামে দু‘ ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে। এ দুই ব্যবস্থার শিক্ষার্থীদেও মধ্যে চালু রয়েছে দু‘ধরণের ফি.ব্যবস্থা। শিক্ষকদের সুবিধাও দু‘ধরণের। সরকারি শিক্ষকরা পান উপযুক্ত অর্থিক সুবিধা। আর বেসরকারি শিক্ষকরা সরকারি শিক্ষকদের মতো সুবিধা পান না। অথচ বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা প্রায় শতকরা ৮৫ ভাগ শিক্ষার্থীকে পড়ান। পেনশন সুবিধা পান না বেসরকারি শিক্ষকরা। নামে মাত্র পান বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য সুবিধা। বেসরকারি শিক্ষকরা সরকারি দায়-দায়িত্ব পালন করে বেশি। নির্বাচনসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বেসরকারি শিক্ষকদের অংশ গ্রহণ বেশি। ফলে শিক্ষা ব্যবস্থায় অসঙ্গতি বিরাজ করছে। তবে স্বীকার করতে হবে শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য থাকলেও বর্তমান সরকার বেসরকারি শিক্ষকদের অর্থিক সুবিধা বাড়িয়েছে। প্রতি উপজেলায় একটি স্কুল ও একটি কলেজ সরকারিকরণের আওতায় এনেছে। কিন্তু এটি যথেষ্ট নয়।
মহান মে দিবসের আন্দোলনকারী শ্রমিকরা আমাদেরকে শ্রমের মূল্যায়নের শিক্ষা দিয়ে গেছে। মে দিবসের শ্রমিকদের আন্দোলন কলকারখানার শোষক মালিকদের বিরুদ্ধে। অমানবিক পরিশ্রমের বিরুদ্ধে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে। তাই বলে এই আন্দোলনের ফলাফল কলকারখানার মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সীমাবদ্ধ তা নয়। সব শ্রেণীর পেশার চাকুরীজীবীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সব পেশার বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছিল এই আন্দোলন। বৈষম্যহীন সমাজ চাই। শোষণমুক্ত সমাজ চাই। নির্দিষ্ট কর্মঘন্টা শেষে অতিরিক্ত কর্মঘন্টার জন্য আলাদা সম্মানীর ব্যবস্থা থাকা চাই। ঐতিহাসিক মে দিবসে সকলের এই শপথ নেয়া উচিত।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আলহাজ্ব মোস্তফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট