চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চিকিৎসকদের পেশা পরিবর্তন-প্রবণতা রোধে করণীয়

ডা. হাসান শহীদুল আলম

২৮ অক্টোবর, ২০২০ | ১:২৭ অপরাহ্ণ

দ্বিতীয় পর্ব। চৈত্রের মাঝামাঝি। ১৪২৬ বঙ্গাব্দ। পটিয়াস্থ চেম্বার। লিখছিলাম চিকিৎসকদের পেশা পরিবর্তন প্রবণতা রোধে করণীয় সম্পর্কে।
জ) স্বাস্থ্য ক্যাডারে অভ্যন্তরীণ শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করা : ১) চিকিৎসকদের জন্য আলাদা সার্ভিস কমিশন বা স্বাস্থ্যসেবা কমিশন গঠন করতে হবে। ২) চিকিৎসকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ঘোষণা করতে হবে। ৩) স্বাস্থ্য ক্যাডারের গ্রেড বিন্যাস নিম্নরূপ বাস্তবমুখী ও সম্মানসূচক হওয়া উচিৎ : এক) চাকুরীর শুরুতে মেডিকেল অফিসার ৯ম গ্রেড দুই) পাঁচ বছর পর সিনিয়র মেডিকেল অফিসার,৭ম গ্রেড। তিন) আট বছর পর চীফ মেডিকেল অফিসার/আরএমও, জুনিয়র কনসালটেন্ট/সহকারী অধ্যাপক ৬ষ্ঠ গ্রেড। চার) ইউএইচএফপিও, ডিসিএস, ৫ম গ্রেড। পাঁচ) সিভিল সার্জন/এসিস্টেন্ট ডিরেক্টার/সিনিয়র কনসালটেন্ট/সহযোগী অধ্যাপক, ৪র্থ গ্রেড। ছয়) ডেপুটি ডিরেক্টার/ডিরেকটার জেনারেল (এডমিন)/অধ্যাপক ,৩য় গ্রেড। সাত) অধ্যক্ষ/হাসপাতাল পরিচালক/লাইন ডিরেকটার/অতিরিক্ত মহাপরিচালক (স্বাস্থ্য),২য় গ্রেড। আট) সিনিয়র অধ্যাপক/মহাপরিচালক (স্বাস্থ্য)-১ম গ্রেড।

৪) একটি সুনির্দিষ্ট বদলী নীতিমালা থাকতে হবে। ৫) পোস্ট গ্রেজুয়েশন ছাড়া কেবল প্রশাসনিক ট্রেনিং দিয়ে হেলথ এডমিনিস্ট্রেটর তৈরি ও পদপূরণ করা। ৬) স্বীয় পদে ভাসমান পদোন্নতি দেয়া যদি পদ না থাকে : পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে পদ না থাকলেও স্বীয় পদেই ভাসমান পদোন্নতি দেবার বিধান রয়েছে। স্বাস্থ্য ক্যাডারে বা অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিস এ এই নিয়ম কার্যকর থাকলে ক্যাডার বৈষম্যের সমাধান হবে। ৭) সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহাল করা। ৮) সচিব পর্যন্ত যাবার বিধান রেখে প্রশাসনিক সংস্কার করা : মেডিকেল কলেজের অধ্যাপকদের প্রথম গ্রেডের মর্যাদা দিতে হবে। চিকিৎসকগণ দেশের অন্যতম মেধাবী অংশ। মেডিকেল ভর্তির অফিশিয়াল পদ্ধতি অনুযায়ী এই মেধার বিষয়টি স্বীকৃত। চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ পদ হচ্ছে অধ্যাপক। মেডিকেল কলেজের শিক্ষকগণ একাধারে শিক্ষকতা করেন, আবার চিকিৎসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। অর্থাৎ তারা দুইটি পদের কাজ করেন, কিন্তু একটি পদের বেতন নেন। কিন্তু অধ্যাপকগণ তৃতীয় গ্রেডের মর্যাদা ভোগ করছেন। এটা বর্তমান সরকারী বেতন স্কেলের একটি অন্যতম ত্রুটি। এভাবে কাউকে দমিয়ে রেখে প্রাপ্য মর্যাদা না দিয়ে তার নিকট সর্বোচ্চ সার্ভিস আশা করা যায় না। ৯) স্বাস্থ্য প্রশাসনের শীর্ষ পদে তাদেরই অগ্রাধিকার দেয়া উচিৎ যারা মাঠ পর্যায়ে প্রশাসকের পদে ছিলেন।

ঝ) আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করতে হবে : অন্যান্য ক্যাডারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পদোন্নতি প্রক্রিয়া আরও সহজ ও দ্রুততর করতে হবে। ঞ) কর্মরত অবস্থায় চিকিৎসককে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা অর্পণ করতে হবে : ১) ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতা কি? ১৮৯৭ সালে প্রণীত, জেনারেল ক্লসেস্ এ্যাক্ট, ১৮৯৭ অনুযায়ী ফৌজদারী আইন সম্পর্কে জানা ও তার প্রয়োগের ক্ষমতা। ২) ম্যাজিস্ট্রেট কাহারা? আইন প্রয়োগ ও বিচারিক দায়িত্ব পালনকারী একজন সরকারী কর্মকর্তা। বাংলাদেশে ম্যাজিস্ট্রেটদের দুইভাগে ভাগ করা হয় : নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। ২০০৭ সালে সংশোধিত ফৌজদারী কার্যবিধি অনুসারে ম্যাজিস্ট্রেট বলতে শুধুমাত্র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বোঝানো হয়। ৩) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাহারা? বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস এর প্রশাসন ক্যাডারগণই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হন। ৪) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর কাজ কি? বাংলাদেশের নির্বাহী ম্যাজিস্টেট্রদের কাজ হচ্ছে : আইন রক্ষা, নির্দেশ দান, বিভিন্ন সামাজিক সমস্যায় যেমন, খাদ্যে ভেজাল, ইভটিজিং, মাদকদ্রব্য চোরাচালান, সরকারী সম্পত্তি বেদখল ইত্যাদিতে সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মোবাইল কোর্ট বা ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠন ও তা কার্যকর করা।

৫) চিকিৎসকের কেন প্রয়োজন ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতা? এক) গ্রাম পর্যায়ে অপচিকিৎসা নির্মূল করতে হলে : স্বাস্থ্যখাতের প্রকৃত পরিবর্তন ও সংস্কার শুধুমাত্র চিকিৎসকদের মেধার দ্বারাই সম্ভব হবে। কিন্তু বর্তমানে বিসিএস দিয়ে একজন নবীন চিকিৎসক যখন ইউনিয়ন বা উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসা দিতে যান তখন প্রচলিত পদ্ধতি তাকে চলমান পদ্ধতিতে নিয়ে আসে। অর্থাৎ ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যখাতে তিনি কোন পরিবর্তন আনতে পারেন না।

এর ফলে প্রথম থেকেই তাঁর মেধার অবমূল্যায়ন এবং অপচয় হওয়া শুরু হয়। অথচ প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড বিসিএস কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা সহকারী সচিব এর সমান ক্ষমতা ও দায়িত্ব প্রাপ্তির কথা ছিলো। কিন্তু বহির্বিভাগে বসে কিছু সরকারী বিতরণকৃত ওষুধ লিখেই একজন নবীন সরকারী কর্মকর্তার মেধা, মনন ও শ্রমের অপচয় করা হয়। আমরা জানি যে, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য অচিকিৎসা ও অপচিকিৎসার কাছে জিম্মি হয়ে থাকে। এগুলোর কোন প্রতিবিধান হয় না কেন? যেহেতু ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতাবিহীন একজন চিকিৎসক তৃণমূল পর্যায়ে একজন নিধিরাম সর্দার ছাড়া আর কিছু হবার নয়। চিকিৎসকের কেন প্রয়োজন ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতার সে ব্যাপারে আরো তথ্যাদি পরবর্তী লেখায় থাকছে।

ডা. হাসান শহীদুল আলম ডায়াবেটিস ও চর্মযৌনরোগে স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক, চট্টগ্রাম।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট