চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

বিশ্ব হাতধোয়া দিবস

সুস্থ থাকার অন্যতম প্রধান কার্যকর উপায় নিয়ম মেনে হাতধোয়া

মোহাম্মদ শাহজাহান

১৫ অক্টোবর, ২০২০ | ২:০২ অপরাহ্ণ

আজ বিশ্ব হাতধোয়া দিবস। প্রতিবছর ১৫ অক্টোবর তারিখে বিশ্বব্যাপী ‘গ্লোবাল হ্যান্ডওয়াশিং ডে’ বা বিশ্ব হাতধোয়া দিবস পালিত হয়ে থাকে। জনসাধারণের মধ্যে সাবান দিয়ে হাতধোয়ার মাধ্যমে রোগের বিস্তার রোধ করার বিষয়ে সচেতনতা তৈরী করার উদ্দেশ্যে এই দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। বিশ্ববাপী মহামারী আকারে যখন করোনা নামক ভাইরাসটি ছড়ায় তখন এর বিস্তার রোধের সবচেয়ে সহজ, সাশ্রয়ী ও কার্যকর উপায়গুলোর একটি হল ঘনঘন সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া। শুনলে অবাক লাগতে পারে যে মানবজাতির ইতিহাসে যতো বড় বড় জীবনরক্ষাকারী আবিষ্কার হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো হাতধোয়া। ১৮৫০ সালে ব্যাপারটা প্রথম জনপ্রিয় হতে শুরু করে এবং তারপর মানুষের প্রত্যাশিত আয়ু অনেক বেড়ে যায়।

বিশ্বে প্রতিবছর ১৮ লাখ শিশু (যাদের বয়স পাঁচ বছরের নিচে) ডায়রিয়ায় মারা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, সাবান দিয়ে হাত ধুলে এই শিশুদের প্রতি তিনজনে একজন ডায়রিয়া থেকে এবং পাঁচজনে একজন শ্বাসনালির সংক্রমণ বা নিউমোনিয়া থেকে রক্ষা পেত। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, স্কুলের শিশুরা সাবান দিয়ে হাত ধুলে তাদের স্কুলের উপস্থিতির সংখ্যা বেড়ে যায়। অর্থাৎ তাদের রোগ কম হয় এবং ভালোভাবে স্কুলে আসতে পারে। তাই অল্পবয়সে সাবান দিয়ে হাতধোয়ার অভ্যাস তৈরি হলে সেটা সুস্থ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্মাণে কাজে লাগে। ২০০৬ সালের এক নিরীক্ষায় বের হয়েছে নিয়মিত হাতধোয়ার ফলে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ হবার সম্ভাবনাও ৬ থেকে ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। কোভিড-১৯ মহামারির প্রসঙ্গে বিজ্ঞানীরা বলছেন, একটা দেশে এই রোগ কী পরিমাণ ছড়াতে পারে তা বোঝা যেতে পারে সে দেশের হাতধোয়ার সংস্কৃতি থেকে। আধুনিক বিশ্বব্যবস্থা ইদানিং ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও হাত ধোয়ার ওপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করেছে এবং এর পক্ষে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়গুলো অনুসরণ করার জন্য ইসলামে আজ থেকে ১৪শ’ বছর আগেই তাগিদ ও হাতধোয়ার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, যাতে রোগ-জীবাণু আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে না পারে। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে সুরা আল মায়িদা এর ৬নং আয়াতে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন- তোমরা যখন সালাতের জন্য উঠবে, তখন তোমাদের মুখম-ল এবং কনুই পর্যন্ত হস্তদ্বয় ধৌত করবে। আর তোমাদের মাথা মাসেহ করবে এবং পা গোড়ালি পর্যন্ত ধৌত করবে। তোমরা যদি অপবিত্র অবস্থায় থাক তবে বিধিমতো পবিত্রতা অর্জন করবে। ফজর থেকে শুরু করে মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য ওজু করে পবিত্র হলে রোগ-জীবাণু আক্রমণের আশঙ্কা এমনিতেই কমে যায়। পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে অসুখ-বিসুখ থেকে মুক্ত থাকতে ইসলাম প্রতিদিন অন্তত ৫ বার এ চর্চাই তো করিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমের কোন কোন দেশে হাত পরিষ্কার করার একটি স্যানিটাইজার কেনার জন্য লোকে ৩৬০ পাউন্ড খরচ করেছে। আবার সাবান ছুঁতেও চায় না এমন লোকও আছে। একটা রহস্যময় প্রাণঘাতী নতুন ভাইরাসও যদি লোকের স্বভাব বদলাতে না পারে তাহলে কিসে বদলাবে?

ধারণা করা হয়, এর কারণ শুধুই আলস্য নয়। এর অনেক মানসিক কারণ আছে। যেমন মানুষের নিজস্ব চিন্তাধারা, ভ্রান্ত আত্মবিশ্বাস, ‘স্বাভাবিক’ থাকার চেষ্টা বা তাদের ঘৃণাবোধের মাত্রা এমন অনেক কিছুই হয়তো সম্পর্কিত। নভেল করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষায় বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে সাবান বা অন্যান্য জীবাণুনাশক দিয়ে হাত ধোয়া অন্যতম। বলতে গেলে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে এই স্বাস্থ্যবিধিটির প্রতি। হাতকে পুরোপুরি ভাইরাস মুক্ত করতে হলে ঝটপট হাতে সাবান মাখানো ও আলতোভাবে ধুয়ে ফেলায় কাজ হবে না। হাতধোয়ার নিয়মকানুনও বাতলে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সুরক্ষা পেতে কতোবার হাত ধুতে হবে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই।

তবে কার্যকর হাত ধোয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে ইউনিসেফ-এর দেয়া প্রতিটি ধাপ এবং বিশেষ করে কখন হাতধোয়া উচিত তা পাঠকের উদ্দেশ্যে এখানে উল্লেখ করা হল। প্রথম ধাপ : প্রবাহমান পানি দিয়ে হাত ভেজানো। দ্বিতীয় ধাপ : ভেজা হাতের পুরোটায় ভালোভাবে সাবান মাখানো। তৃতীয় ধাপ : অন্তত ২০ সেকেন্ড হাতের সামনের ও পেছন ভাগ, আঙুলগুলোর মধ্যে ও নখের নিচের অংশ ভালোভাবে ঘষতে হবে। চতুর্থ ধাপ : প্রবাহমান পানি দিয়ে পুরো হাত ভালোভাবে কচলে ধুয়ে নিতে হবে। পঞ্চম ধাপ : পরিষ্কার কাপড় বা শুধু এককভাবে ব্যবহার করা হয় এমন তোয়ালে দিয়ে হাত মুছে নিতে হবে। কোভিড-১৯ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত সময়গুলোতে হাত ধোয়া নিশ্চিত করতে হবে।

নাক ঝাড়া এবং হাঁচি ও কাশি দেওয়ার পর। গণপরিবহন, বাজার বা উপাসনালয়ের মতো জনসমাগমস্থল ঘুরে আসার পর। ঘরের বাইরের কোনো কিছু স্পর্শ করে, এমনকি টাকা ধরার পরেও। কোনো অসুস্থ লোককে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়ার আগে, নেওয়ার সময় এবং নেওয়ার পরে। খাওয়ার আগে ও খাওয়ার পরে। আর স্বাভাবিক অবস্থায় হাতধোয়া উচিত- টয়লেট ব্যবহারের পরে। খাওয়ার আগে ও পরে। ময়লা-আবর্জনা হাতানোর পরে। বাইরের পশু-প্রাণি এবং গৃহপালিত পশু-পাখি ধরার পরে। শিশুর ডায়াপার বদলানো বা শিশুকে টয়লেট ব্যবহারে সহযোগিতা করার পরে। যখন হাত নোংরা দেখাবে বা নোংরা বলে মনে হবে।
প্রতিটা ক্ষেত্রে হাতধোয়া, হাত পরিষ্কার রাখা সুস্বাস্থ্যের অন্যতম পূর্বশর্ত। আমাদের সবার উচিত প্রতিদিন সঠিকনিয়মে হাতধোয়া এবং অন্যদেরও হাতধোয়ায় উৎসাহিত করা। বিশ্ব হাতধোয়া দিবসে এই বার্তাগুলো সবার জন্য ছড়িয়ে দিতে হবে।

লেখক: মোহাম্মদ শাহজাহান ব্যাংকার, প্রাবন্ধিক।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট