চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সদকায়ে ফিতরা আদায়ে ইসলামের নির্দেশনা

মুফতি ইবরাহীম আনোয়ারী

২৩ মে, ২০২০ | ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ

যে ব্যক্তির উপর কুরবানি ওয়াজিব, তার উপর ঈদুল ফিতরের দিন সদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। চাই তা ব্যবসার সম্পদ হোক বা না হোক, বছর অতিবাহিত হোক বা না হোক, পুরুষ হোক বা মহিলা হোক। (হেদায়া)। সদকায়ে ফিতরা ঈদুল ফিতরের দিন সূর্য উদয়ের সময় আদায় করা ওয়াজিব হয়, তবে এর পূর্বেও সদকায়ে ফিতরা আদায় করা জায়েয আছে। যে ব্যক্তি উক্ত সময়ের পূর্বে ইন্তেকাল করবে বা গরিব হয়ে যাবে, তার উপর সদকায়ে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব নয়। সদকায়ে ফিতরা হচ্ছে খেজুর, যব, গম, আটা বা এগুলোর নগদ মূল্য টাকা-পয়সা দ্বারা সদকায়ে ফিতরা আদায় করা যাবে। যদি সদকায়ে ফিতরা গম বা আটা দ্বারা আদায় করতে চায়, তাহলে এক ছা’ অর্থাৎ আনুমানিক সাড়ে তিন সের ভালো মানের খেজুর বা তার মূল্য আদায় করতে হবে, (ফতোয়ায়ে রশিদিয়া, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)। যদি সদকায়ে ফিতরা গম বা আটা দ্বারা আদায় করতে চায়, তাহলে পৌনে দুই সের ভালো মানের গম বা আটা সদকা করতে হবে। আর যদি মূল্য আদায় করতে চায়, তাহলে উক্ত গম বা আটা পরিমাণ মূল্য সদকা করে দিবে। (দুররে মুখতার)। যে সমস্ত লোকদেরকে জাকাত দেওয়া যায়, তাদেরকে সদকায়ে ফিতরাও দেওয়া যায়। আর যে লোকদেরকে জাকাত দেওয়া জায়েয নেই, তাদেরকে সদকায়ে ফিতরা দেওয়াও জায়েয নেই। (ফতোয়ায়ে শামি)। যে ব্যক্তির উপর সদকায়ে ফিতরা ওয়াজিব হবে, তার ছেলে-মেয়েদের পক্ষ থেকেও সদকায়ে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। (ফতোয়ায়ে রহমানিয়া)। যে মহিলার নিকট প্রয়োজনাতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা তার সমপরিমাণ টাকার সম্পদ থাকবে, তার উপর শুধু নিজের সদকায়ে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। তার উপর নিজ ছেলে-মেয়ে, মাতা-পিতা, ভাই-বোন এমনকি গরীব স্বামীর পক্ষ থেকে সদকায়ে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব নয়। (আহকামে রমযান)।
যদি সুবহে সাদিকের পূর্বে বা সুবহে সাদিকের সময় নবজাতক সন্তান জন্ম গ্রহণ করে, তাহলে সম্পদশালী পিতা তার নবজাতক সন্তানের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা তার উপর ওয়াজিব। আর যদি সুবহে সাদিকের পর জন্ম গ্রহণ করে, তাহলে তার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব নয়। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া)। যদি কোন কাফির বা ফকির ঈদুল ফিতরের দিন সূর্য উদয়ের পূর্বে বা সূর্য উদয়ের সময় মুসলমান বা সম্পদশালী হয়ে যায়, তাহলে তার উপর সদকায়ে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। আর যদি সূর্য উদিত হওয়ার পর মুসলমান হয় বা কেউ সম্পদশালী হয়, তাহলে তার উপর সদকায়ে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব নয়। (ফতোয়ায়ে রশিদিয়া)। ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাজের পূর্বে সদকায়ে ফিতরা করতে হবে। ঈদের নামাজের পূর্বে সদকায়ে ফিতরা আদায় না করে পরে আদায় করা সুন্নত পরিপন্থী ও মাকরূহ হবে। তবে দেরীতে আদায় করলেও আদায় হয়ে যাবে। (দুররে মুখতার)। যদি সম্পদশালী ব্যক্তি কোনো কারণবশত রমযানের রোজা রাখতে না পারে, এরপরেও তার সদকায়ে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। না হয় সে গুনাহগার হবে। (ফতোয়ায়ে শামি)। সদকায়ে ফিতরের টাকা দিয়ে মসজিদ, মাদ্রাসা, রাস্তা, হাসপাতাল নির্মাণসহ জনকল্যাণমূলক কাজ করা জায়েয নেই। বরং উক্ত টাকা গরিব-মিসকিন তথা যাকাতের উপযোগীদেরকে বন্টন করে দিতে হবে। মাদ্রাসার গরিব ছাত্রদেরকে সদকায়ে ফিতর দেওয়া অধিক উত্তম। এতে সদকায়ে ফিতরা আদায়ের সাথে সাথে সদকায়ে জারিয়াহ্র সওয়াবও অর্জন হয়। একটি সদকায়ে ফিতরা একজন ফকির মিসকিন বা একাধিক ফকির মিসকিনকেও প্রদান করা জায়েয। এমনিভাবে একজনকে একাধিক সদকায়ে ফিতরা দেওয়াও জায়েয। (ফতোয়ায়ে শামি)। সাদকাতুল ফিতরাকে ওয়াজিব করার উদ্দেশ্য হল, অভাবীদের অভাব দূর করা, অসহায় নিঃস্ব ব্যক্তিদের প্রয়োজন পূরণ করা; বিশেষত রোজা রাখাকালে হওয়া ভুল-ত্রুটি মুক্ত করা।

মুফতি ইবরাহীম আনোয়ারী খতিব ও সিনিয়র শিক্ষক, জামিয়া বায়তুল করিম চট্টগ্রাম

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট