চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

অষ্টম কলাম

করোনকালে কষ্টের ঈদ

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম

২৩ মে, ২০২০ | ১১:১০ পূর্বাহ্ণ

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও পবিত্র মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা শেষে আমাদের দ্বারে এসেছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। তবে এবারের ঈদুল ফিতর ভিন্ন এক আমেজ নিয়ে এসেছে আমাদের মাঝে। বিশ্বকে বিপর্যস্ত করা করোনাভাইরাসের কারণে আনন্দ মলিন হয়েছে। নেই উৎসব পালনের কোন আয়োজন, নেই কোন তাড়া। সবার মাঝে আতঙ্ক আর নানা শঙ্কা ভর করেছে। ভর করবেই বা না কেন, যেখানে প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন বহু মানুষ, মৃত্যু হচ্ছে অসংখ্য বনি আদমের। লকডাউন-কোয়ারেন্টেইনে বিশ্বের মানুষ ঘরবন্দি। ভাইরাসটি নির্মূলের কার্যকর কোন প্রতিষেধক/ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আশাপ্রদ কোন অগ্রগতি নেই। দীর্ঘমেয়াদে বিশ্ববাসীকে কঠিন সময় মোকাবেলা করতে হবে বলে সতর্ক করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। দীর্ঘ এই কষ্টের সময়গুলোতে অভাবী মানুষের দিকে তাকানো যায়না! এই ঈদে সেই সব মানুষের কীভাবে আনন্দ উদযাপন করবে? বলতে গেলে এবার সব মানুষের ঈদ আয়োজন করোনায় থমকে গেছে। নেই ঈদ উদযাপনের কোন মানসিকতা। করোনায় কাটবে এবারের কষ্টের ঈদ। শিশুরা বঞ্চিত হবে ঈদের আনন্দ থেকে।
এরপরও প্রত্যেকের ঘরে ঈদ খুশির বার্তা নিয়ে আসে প্রতিবছর। বিশ্বব্যাপী নানা সংকট, ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও ঈদ বয়ে নিয়ে আসে খুশি আর আনন্দ। এদিন মানুষ বিগত দিনের সকল দুঃখ, কষ্টকে ভুলে থাকতে চায়। চায় পারস্পরিক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হতে। সমস্যাগ্রস্ত থাকার পরও মানুষ ঈদ উৎসবকে উদযাপন করতে সচেষ্ট থাকে। ব্যতিক্রম কেবল গরিব ও অসহায় মানুষদের ক্ষেত্রে। তাদের মাঝে ঈদের খুশি তেমন প্রভাব ফেলে না। ঈদের এদিনও তাদের অনেককে হয়তো কাজে ব্যস্ত থাকতে হবে পরিবারের সকলের মুখে একটু আহার তুলে দিতে। পথশিশু কিংবা অভাবী পরিবারের সদস্যদের ঈদের নতুন জামা কেনার সাধ্যটুকুও থাকে না। তাছাড়া আর্থিক সংগতিটুকুই বা কই! তার উপর করোনার কারণে কাজ হারিয়েছে বহু শ্রমিক, দিনমজুর।
আমাদের মাঝে যারা বিত্তবান ও আর্থিকভাবে সচ্ছল তাদের উচিত গরিব, অসহায় মানুষের দুঃখ কষ্টগুলো ভাগাভাগি করা, সাহায্য সহযোগিতা করা। অনেকেই তো আছেন যারা নানাভাবে অর্থ ও খাদ্যের অপচয় করেন।
অথচ অপচয় না করে সেসব অর্থ বা খাদ্য গরিব মানুষগুলোর মাঝে যদি এই ঈদের সময় বিলিয়ে দেই তাহলে তারাও সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারবে। সঠিক নিয়মে যদি গরিব ও অসহায় মানুষের প্রাপ্য হক ‘যাকাত’ আদায় করা যেতো তাহলেও সংকটের অনেকটা সমাধান হয়ে যেতো। সমন্বয়হীনতার কারণে পর্যাপ্ত ও সঠিকভাবে প্রাপ্য হকদারদের মাঝে বণ্টন না হওয়ায় যাকাত প্রদানের উদ্দেশ্যটাই ফলপ্রসূ হয় না। সরকার চাইলে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যাকাত আদায় করে তা অসচ্ছল ও অসহায়দের মাঝে পৌঁছে দিতে পারেন। যাকাতের এই অর্থ পেয়ে তারাও ঈদের আনন্দ পেতে পারে। আমরা চাই ঈদের দিনে সব মানুষ আনন্দ ভাগাভাগি করুক। এ ব্যাপারে আমাদের সকলের সচেতন হওয়া উচিত। এমনিতে পবিত্র রামাদানের দিনগুলোতে যত সাহায্য-সহযোগিতা, আর্থিক সহায়তা প্রদান করা যাবে ততই কল্যাণ।
কয়েকগুণ সওয়াব আমল-নামায় যোগ হবে। সওয়াবও হবে অপরদিকে অভুক্ত ও কষ্টে পতিত মানুষগুলো একটু সুখের পরশ পাবে।তাদের আনন্দ দেখলে মনটাই ভরে যাবে। ঈদ আমাদেরকে এ শিক্ষাটাই দিয়ে থাকে। ‘একজন মানুষ ও ঈদের এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবে না’- এমন পরিবেশ আমাদের গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি এসব মানুষের দরিদ্র্যতা নিরসন এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করি। দরিদ্র্যতার হার যতই কমবে ঈদের আনন্দে শামিল হওয়া মানুষের সংখ্যাও তত বাড়বে। অন্য ঈদের চেয়ে যেহেতু এবারের ঈদুল ফিতর কঠিন ও কষ্টের সেহেতু আমাদের উদারতা ও সেবার মানসিকতা বাড়ানো উচিত বলে মনে করি। আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করতে হবে যেন তিনি আমাদেরকে প্রাণঘাতী এই করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি দেন। ঈদ সকলের জন্য  হয়ে উঠুক সুখ ও আনন্দময়। করোনাসহ সব ধরনের দুর্যোগ থেকে বিশ্ববাসী মুক্তি পাক।

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট