চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

অষ্টম কলাম

ন্যায়ভিত্তিক সমাজের প্রত্যাশা

আজহার মাহমুদ

১২ মে, ২০২০ | ২:৩৫ পূর্বাহ্ণ

ন্যায়, যার ব্যাখ্যা করতে গেলে পাওয়া যাবে সুবিচার, মানবতা, মনুষ্যত্ব, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ। এসব প্রতিষ্ঠা করা গেলে প্রতিষ্ঠা করা যাবে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ। আয়বৈষম্য, ধনী-গরিবের মধ্যে ব্যবধান, সামাজিক সাম্য ইত্যাদি বিষয়গুলো একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অন্যতম শর্ত। কিন্তু এসব শর্তের কোনোটাই এখন আমাদের চারপাশে দেখা যায় না।
আমরা বর্তমানে এমন একটি সময়ে বসবাস করছি যে সময়কে জ্ঞান-বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ যুগ বলা যায়। জীবন যাপনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের আশীর্বাদে আমরা নানাবিধ সুবিধা ভোগ করছি। কিন্তু সমাজের এতো উন্নতিতে আমাদের জীবন যাপনের মানেরও অনেক পরিবর্তন আসার কথা ছিল। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত উন্নত মানুষদের দ্বারা একটি ন্যায়ভিত্তিক উন্নত সমাজব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠা হওয়ার কথা ছিল। আমরা তা পারিনি। কিন্তু কেন পারছি না? এতো জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধারক বাহক আধুনিক মানুষেরা একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় কেন বার বার ব্যার্থ হচ্ছে- একথা কেউ কি কখনো ভেবে দেখেছেন? আসলে সমস্যাটা কোথায়? সমস্যা হচ্ছে আমাদের চিন্তায়, চেতনায়, মননে, বিবেকে, বুদ্ধিতে! আমরা ন্যায়ভিত্তিক সমাজে বাস করার আশা বুকে পোষণ করি, কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা কখন, কোথায়, কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং কোন গুনাবলীর কারণে সেই সভ্যতা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল তা জানার চেষ্টাও কখনো করি না।
আমরা যদি ইসলামের স্বর্ণযুগের সেই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে সেরকম একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা ভাবি তবে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা আমাদের জন্য সহজ হয়ে যেত। কিন্তু আমরা সেভাবে ভাবি না। ইসলামী সেই সমাজব্যবস্থার এমনি বৈশিষ্ট্য ছিল যে কোন বিধর্মীও সেখানে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়নি। হযরত ওমর (রা.)-এর সময়ে এসে তা এতোই সমৃদ্ধি লাভ করেছিল যে, রাজ্যের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যাকাতের খাদ্য বহন করেও যাকাত ভক্ষণের লোক খুজে পাওয়া দুষ্কর ছিল। আর বর্তমান সময়ের চিত্র আপনি আমি সবাই দেখছি! ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় নাগরিক সমাজের ভূমিকা সর্বজনবিদিত। বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক উত্তরণ এখনও অসম্পূর্ণ। আমাদের পদচারণা এখনও গণতন্ত্রের ক্রান্তিকালের আবর্তে ঘূর্ণায়মান এবং এটিকে সুসংহত করার সার্বিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ থেকেও আমরা আজকের বাস্তবতায় বহুদূরে অবস্থান করছি। তথাপি, একটি তুলনামূলক নবীন গণতন্ত্র হিসেবে এদেশের গণতান্ত্রিক অবকাঠামোগুলো বিকাশমান পর্যায়ে রয়েছে এবং স্বাভাবিক বিবর্তন প্রক্রিয়ায়ই হোঁচট খেয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। নাগরিকসমাজও তেমনিভাবে এখনও পূর্ণাঙ্গ রূপে বিকশিত হতে পারেনি। এজন্য প্রয়োজন সুশাসন। সুশাসন একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজের জন্য অন্যতম শর্ত সেটা আগেই বলেছি। যার মাধ্যামে বাংলাদেশে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
ন্যায়ভিত্তিক সমাজের বিকাশ, উদার গণতন্ত্র আমাদের সকলের প্রত্যাশা। কিন্তু এটি হঠাৎ করেই আসবে না। আমাদের সবাইকেই এই স্বাভাবিক বিকাশের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে এবং স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, যাতে প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত হয়। এজন্য তাড়াহুড়ো করলে হবে না। তবে শুধু সুশাসন হলে হবে তা কিন্তু নয়, এর সাথে নৈতিকতা, মানবতা এবং মনুষ্যত্বও থাকতে হবে। ন্যায়ভিত্তিক সমাজের জন্য এসব বৈশিষ্ট্য থাকা অতীব জরুরী। সমাজের সকল নাগরিকদের থাকতে হবে ঐক্যবদ্ধ। তবে ভিন্নমত থাকতে পারে। এজন্য কারও উপর আঘাত করা যাবে না।
কিন্তু বর্তমান সমায়ে আমরা ভিন্নমতের মানুষকে সহ্য করতে পারি না। এদের উপর অন্যায় অবিচার সবচেয়ে বেশি হয়। এই ধরনের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেই ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে। আমাদের একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে। ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যায় থাকাটা জরুরী।
আর ন্যায় থাকতে হলে অবশ্যই অন্যায়ের বিরোদ্ধে লড়তে হবে। অন্যায়মুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত, মাদকমুক্ত, সমাজ প্রতিষ্ঠা করা গেলে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সহজ হয়ে আসবে অনেকাংশেই। এসব যদিও সহজ বিষয় নয়, তবুও মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। তাই এদেশ, এ সমাজকে যারা ভালোবাসে তারাই পারবে এ সমাজকে ন্যায়ভিত্তিক সমাজে রূপান্তর করতে।

আজহার মাহমুদ প্রাবন্ধিক,
কলাম লেখক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট