চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মহামারি করোনার থাবায় বিপর্যস্ত কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবী মানুষ এবং উত্তরণ ভাবনা

মোহাম্মদ শাহারিয়ার

২২ এপ্রিল, ২০২০ | ৮:৩২ অপরাহ্ণ

আজ বিশ্বে বিরাজ করছে করোনা তথা COVID 19 মহামারির নিষ্ঠুরতম আগ্রাসন যা বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রের জনসাধারনের জীবন ঝুকিপূর্ণ করেছে সেইসাথে মুখ থুঁবড়ে পড়েছে বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থনীতি। আজ আমার আলোচানার বিষয় আমার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ এবং আমি যে সামাজিক সংস্থার সাথে কাজ করি তার লক্ষ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা শ্রেণি ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী যারা সম্মিলিতভাবে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির সিংহভাগ। আজ এই শ্রেণির আর্থিক অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অর্থাৎ সোজাভাবে বলতে গেলে দেশের অর্থনীতি বিপদাপন্ন। এই অবস্থায় সরকার ও এনজিও সমন্বয়ে গ্রহণযোগ্য কার্যাবলি নিয়ে আলোকপাত করতে চায়। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, আমাদের দেশের অল্প কিছু সংখ্যক লোক Micro Finance অথবা ক্ষুদ্রঋণ বিষইয়ে ঋণাত্মক ধারনা পোষণ করেন কিন্ত তারা জানেন না গ্রামীণ, ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, বুরো, টিএমএসএস এর মতো বড় এমনকি আমাদের মতো মাঝারি সংগঠন মমতাসহ MRA লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্ষুদ্র ঋণদান সংস্থাসমূহের দেশের GDP-তে অবদান প্রায় ১২ দশমিক ৫ শতাংশ আর SDG অর্থাৎ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অধিকাংশ লক্ষ্য অর্জনেও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখছে। তাই করোনার আগ্রাসী প্রার্দুভাবে সৃষ্ট এমন পরিস্থিতিতে সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে সকল উন্নয়ন সহযোগী /stakeholders দের সাথে নিয়ে সরকারকে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

সর্বপ্রথম করোনা তথা COVID 19 মহামারি মোকাবেলায় সর্বাগ্রাধিকারযোগ্য লক্ষ্য এবং সারাদেশে এর পরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিশ্চিত করতে হবে। ডাক্তারসহ চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত পরিমাণ সুরক্ষিত PPE প্রদান করতে হবে। যেহেতু রোগটি আমাদের দেশে নতুন সে কারণে সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে করোনার Mild থেকে Critical বিভিন্ন stage-এ সম্ভাব্য চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। COVID 19 প্রতিরোধে করণীয় এবং Mild Stage-এ বাসায় প্রদানযোগ্য চিকিৎসা সম্পর্কে সরকারের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রচারণা চালাতে হবে যাতে Social Media-তে প্রচারিত বিভিন্ন পোস্ট দ্বারা সাধারণ জনগণ বিভ্রান্ত না হয়। গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবিত করোনা  টেস্ট কিট সফল হলে তা অথবা আমদানিকৃত টেস্ট কিট দিয়ে দ্রুত সারা বাংলাদেশে উপজেলাভিত্তিক টেস্ট ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা জানি প্রতিকার হতেও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে তা হবে মঙ্গলজনক। খোদা না করুন, মহামারি পরিস্থিতি ভয়াবহ হলে অর্থাৎ আক্রান্ত ও মৃত্যু হার বৃদ্ধি পেলে তা মোকাবেলা করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে তৈরি রাখতে হবে। ডাক্তারসহ চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্দীপ্ত রাখতে এবং জনগণের মনোবল চাঙ্গা রাখতে প্রচার প্রচারণা বাড়াতে হবে।

COVID 19 এর চিকিৎসার পাশাপাশি দেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতি যে মারাত্মক সংকটের দিকে পড়তে যাচ্ছে তা মোকাবেলায়ও সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সরকার অর্থনীতিকে গতিশীল, দুর্নীতিমুক্ত ও জনকল্যাণমুখী করার জন্য দুর্নীতি বিরোধী কর্মকাণ্ড জোরদার, কালো টাকা উদ্ধার, দুর্নীতিবাজদের গ্রেপ্তারসহ বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। আজ করোনার প্রাদুর্ভাবে তারা গা ঢাকা দেয়ার সুযোগ পেয়েছে। ব্যাংক খাতের বিপুল মন্দ ঋণ আজ আমাদের জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘা। এই অচলাবস্থার সুযোগে অনেক ঋণখেলাপী অসাধু ব্যাংক পরিচালক, কর্মকর্তার যোগসাজশে COVOD 19-এর কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত ছাড়ের সুযোগ নিয়ে অর্থনীতির বিরাট ক্ষতি করবে, সেইসাথে কারসাজিতে হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবে সরকার ঘোষিত প্রণোদনার বিপুল অংশ।

আজ আমরা দেখছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের একটি অংশ যখন জীবন বাজি রেখে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সক্রিয়, তখনই কিছু অসাধু ব্যক্তি ত্রাণচুরি ও আত্মসাৎ, করোনা চিকিৎসার মানহীন PPE, Mask, মানহীন টেস্ট কিট সরবরাহ (যা চিকিৎসকের জীবন বিপন্ন করছে এবং এই মুহূর্তে জরুরি চিকিৎসাকে বাধাগ্রস্ত করছে, করোনার ব্যাপ্তি ঘটাতে ভূমিকা রাখছে), জরুরি খাদ্যসামগ্রীর অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি, ওজনে কম দেয়াসহ তাদের বিভিন্ন অপকর্ম সরকারের প্রয়াসকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিপদগ্রস্ত করছে। সরকারের উচিৎ অনতিবিলম্বে এই সকল লোভী, দুর্নীতিবাজ, চোর, ঘৃণ্য নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা এবং দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা যাতে সামনে সরকারের দুর্যোগকালীন ত্রাণ বিতরণ ও জরুরি কল্যাণমুখী কাজ বাধাগ্রস্ত না হয় এবং জনগণের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার কেউ সুযোগ না পায়।

COVID 19 আজ বিশ্ব মহামারি। আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সহযোগী বন্ধুপ্রতিম দেশ আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জাপান, চীন, জার্মান, কানাডাসহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত সকল দেশ আজ করোনার ভয়াল থাবায় শুধু চিকিৎসায় নয় অর্থনৈতিকভাবেও বিপর্যস্ত। উন্নত বিশ্বের জনগণ নিজেরাই আজ আতঙ্কিত। সুতরাং, বহিঃবিশ্বের সহায়তার আশা ছাড়াই আমাদেরকে নিজ সাহস, শক্তি, মেধা দিয়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কাজ এগিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের অনুপ্রেরণা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ছিনিয়ে আনা বিজয়। আমাদের অনুপ্রেরণা বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাসে ভেঙে না পরে সংগ্রাম করে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো। আমাদের অনুপ্রেরণা বিশ্ব দারিদ্রতা বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের মতো আর্থিক সেবার উদ্ভাবন। আমাদের অনুপ্রেরণা বিশ্বের বৃহত্তম NGO বাংলাদেশের BRAC, আমাদের অনুপ্রেরণা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী গার্মেন্টস শিল্পের বিশ্ব জয়, আমাদের অনুপ্রেরণা ভ্রাতৃত্ববোধ সম্পন্ন পরিশ্রমী, ত্যাগী জনবল। তাইতো আমরা সাহসী হয়ে উঠি যখন দেখি মানুষ তার সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে সরকারের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিবেশীকে সহযোগিতাই এগিয়ে আসছে।

আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পখাত গার্মেন্টস শিল্প আজ বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন বিধায় তাকে আবর্তিত এক্সসেসরিস শিল্প, শিপিং, সিএন্ডএফ, পরিবহন, সরবরাহ ব্যবসাসহ বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানও বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। গার্মেন্টস শিল্প ও প্রবাসীদের রেমিটেন্স আয় কমে যাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য বাংলাদেশের প্রতিকুলে ও নিম্নমুখী। তাই আমদানি-রপ্তানি নির্ভর পণ্য ও সেবার ব্যবসা সম্প্রসারণ, নিয়ন্ত্রণ এবং লেনদেন সম্পাদনে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে এখনি যথাযথ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আক্রান্ত অন্যান্য সকল পণ্য ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানেরও আজ প্রয়োজন সরকারি সহযোগিতা। তাই এই বহুমুখী চাহিদা মোকাবেলায় সরকারকে খাতভিত্তিক অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে পারিকল্পনা সাজাতে হবে।

আমি, আর্থিকসেবা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের একজন উন্নয়নকর্মী হিসেবে আমার এ লেখায় মূলত করোনার কারণে সৃষ্ট দেশের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় হতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী / উদ্যোক্তাশ্রেণিকে পুনরুদ্ধারের বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি।

COVID 19-এর প্রভাবে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে আক্রান্ত শহর ও গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। যারা মূলত ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী, যারা স্বল্প পুঁজি এবং ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার ঋণ নির্ভর হয়ে বিভিন্ন খাতে ব্যবসা পরিচালনা করছে। তাদের মধ্যে শুধুমাত্র নিত্য খাদ্যসামগ্রী ও ওষুধের খুচরা ও পাইকারি দোকান সীমিত পরিসরে চালু রাখা ছাড়া সকল ব্যবসায়ী Lockdown-এর কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সর্বোপরি গ্রামীণ কৃষি, মৎস্য, প্রানীসম্পদ তথা ডেইরি, পোলট্রি প্রভৃতি শিল্পে নিয়োজিত কৃষক, চাষি, খামারি সকল উদ্যোক্তারা আজ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। লকডাউনের কারণে বীজ, সার, খাদ্যসহ নানবিদ উপকরণ সরবরাহে বিঘ্নতা, সীমিত পরিবহন সুবিধা, শ্রমিক স্বল্পতা সর্বোপরি কাজে যেতে না পারা, এই সকল কারণে ফসলভেদে শস্য উৎপাদন, আহরন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপনন প্রতিটি ধাপে বিগত দিনে সমস্যার সম্মুখীন হওয়ায় এবং নিকট ভবিষ্যতে সমস্যামুক্ত হওয়ার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি না হওয়ায় এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শ্রেণি বিপুল পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বিভিন্ন খাত ও উপ-খাতের দিনমজুর, শ্রমিক, চালক, গৃহকর্মী, পরিবহন শ্রমিক সমূহও আজ বিপর্যস্ত। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগান ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর পরিণাম হবে ভয়াবহ। যদিও সরকারিভাবে পর্যাপ্ত মজুদের কথা বলা হচ্ছে বর্তমান অভিজ্ঞতায় দেখছি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের দাম শহরে বাড়ছে। সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় একই পণ্যের দাম স্থানভেদে তারতম্য হচ্ছে। একদিকে চাহিদা হতে যোগানের আধিক্যে উৎপাদনকারী ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেনা, অন্যদিকে একই পণ্যের যোগান হতে চাহিদার আধিক্যে  অন্য স্থানে দাম বেড়ে গেছে। অর্থাৎ গ্রামীণ অর্থনীতি ভঙ্গুর, ফসল উৎপাদনের একটি চক্রও ক্ষতিগ্রস্থ হলে দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। গ্রামীণ ও শহরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়, কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ প্রকল্পে শতকরা ৯০ ভাগ তাহবিলের যোগানদাতা ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার (Micro Finance Institutes) কার্যক্রম বন্ধ ও কৃষি ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড ব্যাহত হওয়ায় তহবিল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে যা পুরো সেক্টরকে ঝুঁকিতে ফেলেছে।

অন্যদিকে শহরে  নিত্য খাদ্যদ্রব্য ও ওষুধের দোকান ব্যতীত হোটেল রেস্টুরেন্ট, আসবাব, কারখানা, মেরামতকারী, নির্মাণ সামগ্রী, ইলেক্ট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য, গার্মেন্টস, জুতা, শোপিচ ও ফ্যাশন আইটেম ইত্যাদি বহুবিধ ব্যবসায় জড়িত যারা বিপণী বিতান অথবা শহরের রাস্তার দুধারে, অলিতে গলিতে দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র খুচরা ব্যবসায়ী বা ছোট দোকানিগণ, পরিবহন ব্যবসায়ী, সরবরাহকারী যারা আত্ম-কর্মসংস্থানের পাশাপাশি নিজ প্রতিষ্ঠানে একাধিক লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন আজ তারা আয়হীন, পুঁজি ভেঙ্গে চলছেন, অন্যদিকে তাদের সাথে জড়িত কর্মীরা হয়েছেন বেকার। তদুপরি রিক্সা, টেক্সি, টেম্পু, রাইডার, কার, মাইক্রো, ট্রাক, বাস ইত্যাদির চালক বা ড্রাইভারসহ কোটি শ্রমিক আজ কর্ম ও আয়হীন দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। সরকারি, প্রতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ সহায়তার জন্য প্রাথমিক দিকে পরিস্থিতি সামলানো গেলেও কালক্রমে বেসরকারি ত্রাণ হৃাস পাওয়ায় পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হতে পারে।

শ্রমিক দিনমজুর হতে শুরু করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী ও তাতে নিয়োজিত কর্মী, কৃষক, চাষি, খামারি যারা দেশের মোট কর্মজীবীর বৃহৎ অংশ আয়হীন, বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এর প্রভাবে কর্মসংস্থান, আয়, ব্যয়, ভোগ ইত্যাদি হৃাসসহ অর্থনীতির সকল গুরুত্বপূর্ণ সূচক নিম্নগামী হবে সেইসাথে সামাজিক অস্থিরতা, আইন-শৃঙ্খলার অবনতিসহ দুর্বিষহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে যার পরিণতি হতে ধনী-দরিদ্র কেউ রেহাই পাবে না।

তাই এখনি কাল বিলম্ব না করে সরকারের উচিৎ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি শ্রমিক দিনমজুর হতে শুরু করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী ও তাতে নিয়োজিত কর্মী, গ্রামীণ কৃষক, চাষী, খামারিদের রক্ষার্থে, জরুরি পণ্যসমূহের উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন অব্যাহত রাখতে তাদেরকে আর্থিক প্রণোদনাসহ অন্যান্য আর্থিক ও কারিগরি সহায়তার আওতায় নিয়ে আসা। এর জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সরকার ইতিমধ্যে সময়োপযোগী আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী, গ্রামীণ কৃষক, চাষী, খামারি, শ্রমিক শ্রেণির অংশ সুনিশ্চিত করতে হবে।

আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দ্রুততরভাবে লক্ষিত জনগণের কাছে পৌঁছাতে MRA নিবন্ধিত এনজিওগুলোর মাধ্যমে সামগ্রিক কাজ বাস্তবায়নের নিমিত্তে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে NGO সমন্বয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতঃ যাবতীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এই কর্মপরিকল্পনায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে গৃহীতব্য কার্যাবলি, আর্থিক ও কারিগরি সেবার প্রকৃতি, তা বাস্তবায়নে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান ও বিভাগের দায়িত্ব ও কর্তব্য, নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ইত্যাদি চিহ্নিত ও বিধৃত হবে। করোনার কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি হৃাস করতে আন্তঃপ্রতিষ্ঠানিক, বিভাগীয়, মাঠপর্যায়ে সদস্যদের সাথে যোগাযোগ, প্রশিক্ষণ, লেনদেন যতটুকু সম্ভব ডিজিটাল প্লাটফর্মে তথা অনলাইনে করার বিষয় গৃহীত পরিকল্পনায় সংযুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে PKSF এবং CDF একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে।

মনে রাখতে হবে যতই দ্বিমত থাকুক না কেন, বাংলাদেশে এনজিওসমূহই এসব কর্মকাণ্ড সফলভাবে করার জন্য পরীক্ষিত কাণ্ডারি। আলোচিত ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী, কৃষক, চাষী, খামারি কোনো না কোনো এনজিওর সদস্য। যেহেতু করোনা প্রভাবে সৃষ্ট বিপর্যয়ের করণে এনজিওনসমূহ মাঠপর্যায়ে সদস্যের কিস্তি আদায় ব্যাহত তাই তহবিল সংকট উত্তরণে সরকারকে দ্রুততম সময়ে তহবিল সংস্থান করতে হবে। এনজিওসমূহ মাঠপর্যায়ে বিস্তৃত সদস্যদের অগ্রাধিকারভিত্তিক চাহিদা নিরুপণ করে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা বিষয়ে কর্মকাণ্ড শুরু করবে। এক্ষেত্রে, COVID19 এর প্রভাব গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় রাখতে হবে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। করোনা সংক্রান্ত নিরাপত্তা সতর্কতাসহ Social Distance বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয় যেমন নিজেরা কর্মক্ষেত্রে মেনে চলবে তেমনি সদস্যদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করবে।

এভাবে যদি করোনার স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ও ঝুঁকি পাশ কাটিয়ে আমরা একটি সময়োপযোগী সহায়তা কর্মসূচি আলোচিত বিপুল সংখ্যক ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী, কৃষক, চাষী, খামারি শ্রেণিসহ নিম্ন আয়ের জনগণের জন্য সরকার ও এনজিও সমন্বয়ে নিতে পারি তাহলে বাংলাদেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে যেমন বিপুল আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা যেতে পারে তেমনি দেশের আভ্যন্তরীণ অর্থনীতি ও বাণিজ্যের আশু পতন ঠেকানোর কার্যকর পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচিত হবে বলে আশা করি।।

লেখক : একজন উন্নয়ন কর্মী

 

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট