চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

অষ্টম কলাম

গুজবের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে

জুবায়ের আহমেদ

২০ এপ্রিল, ২০২০ | ৩:১১ পূর্বাহ্ণ

বাংলা দেশে সময়ে সময়ে গুজবের শেষ নেই। ধর্মীয় বিধান মতে কোন তথ্য পাওয়ার পর তার সত্যতা না পাওয়া পর্যন্ত প্রচার করতে নিষেধ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবেও গুজব ছড়ানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। গুজব বিষয়ে সরকারী-বেসরকারী ভাবে বহু সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হলেও গুজবপ্রিয় জাতির বদনাম আমরা ঘুচাতে পারিনি। বরং বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রভাবে গুজব যেনো রকেট গতিতে ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। ব্রিজ নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে, ছেলে ধরা, চাঁদে মানুষ দেখা যায়, এই জন স্বপ্নে ঔষধ পেয়েছে, স্বপ্নে মানুষকে ধর্মকর্ম করার তাগিদ দিয়েছে, না হয় পৃথিবী ধ্বংশ হয়ে যাবে, এই লিফলেট ছিড়ে ফেললে বড় ক্ষতি হয়ে যাবেসহ হেন কোন ভিত্তিহীন গুজব নেই, যা বাংলাদেশে রটে না। গেল বছর পদ্মা সেতুতে মাথা লাগবে এমন গুজব এবং ছেলেধরা গুজবে বেশ কয়েকজন নিরীহ মানুষকে গণধোলাই দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, যারা পরবর্তীতে নিরীহ নির্দোষ ছিলেন মর্মে প্রমাণ হয়েছে।
এখন করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এ আক্রান্ত পুরো বিশ্ব। চীনের উহান প্রদেশে প্রথম রোগী সনাক্ত হওয়ার পর তা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।
পৃথিবীর দুইশত দেশে ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে উন্নত দেশগুলো যেখানে করনো ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিস্কারের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করছে, সেখানে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আগেই লোকজন রাস্তাঘাটে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার হোমিওপ্যাথিক-বনাজি ঔষধ বিক্রি করছে। কেউ কেউ ছড়িয়েছে যে, এই ধর্মের লোকের হবে না, ঐ ধর্মের লোকের হবে এবং বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আসবে না। জনৈক প্রবাসীকে করোনাভাইরাস স্বপ্নযোগে সাক্ষাতকার দিয়েছে কিভাবে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা যায়সহ নানা প্রকার বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপী।চীনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া করনোভাইরাস অবশেষে গত ৯ মার্চ বাংলাদেশেও প্রবেশ করেছে।
সরকার দেরিতে হলেও প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিগণসহ তারকা ব্যক্তিত্বরাও মানবতার সেবায় এগিয়ে আসছে একে একে। করনোভাইরাস প্রতিরোধ করার সবচেয়ে বড় উপায় “হোম কোয়ারেন্টাইন” বা নিজেদেরকে গৃহের মধ্যে আবদ্ধ রাখা হলেও এ নিয়ম মানছে না অনেকেই। সেই সাথে গুজব ছড়াচ্ছে একটি শ্রেণি। থানকুনি পাতা খেলে করোনা সেরে যাবে, নারিকেল গাছের গোড়ায় পানি ঢাললে করোনা সেরে যাবে, কোন শিশু জন্মের পর চিনি ছাড়া রং চা খেলে করোনা সেরে যাবে বলেই মৃত্যুবরণ করেছেসহ নানা প্রকার গুজব ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে একটা শ্রেণি, এতে সাড়া দিচ্ছে বহু মানুষ, যাদের মাধ্যমে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে গুজব, হয়রানীর শিকার হচ্ছে বহু মানুষ গুজব যা কাম্য নয়।
বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। আর ধর্মপ্রাণের সূত্রেই বহু মানুষ ধর্মান্ধ। ধর্মীয় বিধান মতে কোন তথ্য প্রচারের আগে সত্যতা বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া জরুরি হলেও তা মানা হয় না বাংলাদেশে, ফলে সহজেই যেকোন প্রকার বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া যায়। দেশব্যাপী শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বাড়লেও শুধুমাত্র অশিক্ষিত ব্যক্তিরাই যে গুজব ছড়ায় তা নয়, ক্ষেত্র বিশেষ ও গুজবের ধরণ বুঝে সব শ্রেণির মানুষেই গুজবে কান দেয়। ধর্মীয় ভাবে গুজব ছড়ানো নিষেধ, গুজব গুনাহের কাজ। সেই সাথে রাষ্ট্রীয়ভাবেও গুজব ছড়ানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ধর্মীয় বিধান জানার ও বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসারের যুগে এসেও বাংলাদেশের মানুষ সৃষ্টিশীল ও গবেষণাধর্মী কাজে নিজেদের নিয়োজিত না রেখে কুসংস্কার ও ভিত্তিহীন কর্মকা-ে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে, যা ১৯৭১ এর ভূবনজয়ী গৌরবান্বিত ইতিহাসের বিপরীত হয়।
কাজেই সঠিক তথ্য না জেনে এবং কেউ কোন কিছু প্রচার করলেই তাতে কান না দিয়ে বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে সত্যতা যাচাই করে এবং ধর্মীয়-রাষ্ট্রীয় বিধান অনুসারে চলা এবং দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রত্যেককেই গুজব প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে কুসংস্কার ও গুজবকে মাটিচাপা দিয়ে সৃষ্টিশীল কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখার বিকল্প নেই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট