চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনা শনাক্তকরণে ‘পুল টেস্টিং’

আফতাব হোসেন

৮ এপ্রিল, ২০২০ | ১:০৩ পূর্বাহ্ণ

সারা বিশ্ব আজ করোনা ভাই রাসের আক্রমণে নাস্তানাবুদ, পশ্চিমা বিশ্ব তাদের বিশাল সক্ষমতা নিয়েও আজ হাবুডুবু খাচ্ছে। মূলত সঠিক সময়ে গুরুত্বসহকারে মহামারী বিরোধী কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্যই এটি হয়েছে বলে বিশ্লেষকদের মতামত। আমাদের দেশে এটি এখনো মহামারী আকার ধারণ করেনি। তাই এখন থেকেই যদি আমরা কিছু কার্যকর পদক্ষেপ না নেই তাহলে অচিরেই আমাদের সল্প সক্ষমতার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। তাছাড়া দীর্ঘদিন অর্থনৈতিক কর্মকা- বন্ধ থাকলে বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেই দুর্ভিক্ষের মত পরিস্থিতিও দেখা দিতে পারে।
যেহেতু মহামারী ঠেকানোর জন্য লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি আক্রান্ত রোগী শণাক্ত করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। তাই কমিউনিটি লেভেলে দ্রুত শণাক্তকরণ খুবই জরুরি। বর্তমানে বাংলাদেশে যে পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস শণাক্ত করা হচ্ছে তা খুবই শ্লথ গতির ও অপেক্ষাকৃত ব্যয়বহুল এবং এখানে কমিউনিটি লেভেলের শণাক্তকরণ সম্ভব হচ্ছে না।
কমিউনিটি লেভেলে রোগী শণাক্তকরণের একটি খুবই উপযোগী পদ্ধতি হতে পারে পুল/পুলড টেস্টিং­Ñ এই পদ্ধতিতে কোন বাড়ি বা স্থানীয় গুচ্ছের একাধিক ব্যক্তির সমন্বিত নমুনা একটি মাত্র টেস্টের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়Ñ যা অতি দ্রুত অনেক ব্যক্তিকে টেস্টের আওতায় আনতে পারে। এক্ষেত্রে প্রথমে সংক্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা শণাক্ত করে ওই এলাকার সকল ঘরের মানুষদের নমুনা আলাদাভাবে সংগ্রহ করা হয়। পরে সংগৃহীত নমুনা থেকে প্রতিটি পরিবারে জন্য একটি কমন নমুনা তৈরি করা হয়Ñ যা থেকে জঞ-চঈজ এর মাধ্যমে ঈঙঠওউ-১৯ শনাক্ত করা হয়। ফলাফল যদি পজিটিভ হয় তাহলে ওই বাড়ির সবাইকে আইসোলেশনে নিয়ে পূর্বে সংগৃহীত নমুনা থেকে পুনরায় সবার জন্য জঞ-চঈজ এর মাধ্যমে সঠিক ব্যক্তিটিকে শনাক্ত করা হয়। এই ক্ষেত্র নেগেটিভ কেইসগুলোর ক্ষেত্রে কেবলমাত্র একটি টেস্টের মাধ্যমে পুরো পরিবারের সবার টেস্ট হয়ে যায়। আর যেহেতু সেম্পল কালেকশনের সময় একই সময়ে পুরো এলাকার সকল বাড়ি থেকে সেম্পলগুলো নেওয়া হয় তাই পুরো এলাকাটিকে করোনামুক্ত (নেগেটিভ ফলাফলের ক্ষেত্রে) ঘোষণা করা যায়। এর পর চাইলে ওই এলাকায় বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকিয়ে ভেতরের মানুষ নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারে। একই সাথে পাশাপাশি এলাকাগুলো এই পদ্ধতিতে টেস্ট করে ক্রমান্বয়ে পুরো থানা, জেলা, এমনকি বিভাগকে নির্ভুলভাবে করোনামুক্ত বা কোন নির্দিষ্ট স্থানে করোনা আছে তা শনাক্ত করা সম্ভব। এই পদ্ধতি এরই মধ্য জার্মানি প্রয়োগ করেছেÑ যা সাশ্রয়ী ও অপেক্ষাকৃত দ্রুত সময়ে করা সম্ভব। তাছাড়া আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের রোগতত্ত্ব বিভাগও এ বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করছে।
আমাদের অর্থনীতি একটি উদীয়মান অর্থনীতি। এই অবস্থায় দীর্ঘদিন (কয়েক মাস) লকডাউন অবস্থায় সকল কর্মকা- বন্ধ থাকলে চরম সংকট অনিবার্য। তাই এই পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন উৎপাদনমুখী খাতেও করোনার উপস্থিতি নিশ্চিত হয়ে তা নিয়ন্ত্রিত রূপে চালু রাখা সম্ভব। যেমন: কোন গার্মেন্টসে যে শ্রমিকরা কাজ করে তাদের অধিকাংশই সারাদিন একটি নির্দিষ্ট কক্ষে কাজ করে। এখানে প্রতিটি কক্ষকে একটি পরিবার বিবেচনায় খুব সহজে পুরো ফেক্ট্রিতে (একটি পাড়া বা মহল্লা ধরে) পুল টেস্টিং করা হলে যে ফলাফলগুলো নেগেটিভ আসবে সেগুলোকে পরবর্তীতে কড়া নিয়মনীতির মাধ্যমে চালু রাখা অবশ্যই সম্ভব। যদি কোথাও পজিটিভ কেইস পাওয়া যায় তাহলে ওই ব্যাক্তিবর্গকে আইসোলেটেড করে বাকি ফ্যক্ট্রি চালু রাখা সম্ভব।
যেহেতু অর্থনীতি দীর্ঘদিন লকডাউনে থাকা বাস্তবসম্মত নয় এবং এখনো আমাদের দেশে সংক্রমণ সংখ্যা নিম্ন তাই এই পদ্ধতি এখনই চালু করলে অতি অল্প সময়ে এলাকাভিত্তিক করোনা সংক্রমণ শণাক্ত করে অচিরেই সীমিত আকারে এলাকাভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকা- চালু করাও সম্ভব। যা আমাদের সার্বিক অর্থনীতিকে আপদকালীন সচলতা প্রদান করতে পারে এবং মহামারী প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

আফতাব হোসেন সহকারী অধ্যাপক (প্যারাসাইটোলজী), প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট