চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

করোনার বিস্তার রোধে সচেতনতাই প্রধান হাতিয়ার

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম

৫ এপ্রিল, ২০২০ | ১:০১ পূর্বাহ্ণ

করোনা ভাইরাসের (কোভিড ১৯) থাবায় গোটা বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ অবরুদ্ধ। চীনে শুরু হয়ে ভাইরাসটি তার আওতা বাড়াচ্ছে দ্রুত। বিশ্বের প্রায় সব দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে। চীনের পর রোগটি এখন ইতালী, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সে তার শক্ত প্রভাব রেখে চলেছে। সেসব দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ মানুষ এই মুহূর্তে কোয়ারেন্টেইনে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তাদের সব ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ কিংবা সীমিত করেছে। পৃথিবীর সব দেশেই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জনগণের চলাচল, সমাবেশ সীমিত করা হয়েছে। পবিত্র কাবার তাওয়াফ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ঔষধের দোকান ব্যতীত সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে।
করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বর্তমানে পাঁচ লক্ষাধিক এবং বাইশ হাজারের অধিক মৃত্যুবরণ করেছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা রোগটিকে মহামারী হিসেবে ঘোষণা করেছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংস্থাটি অনুরোধ জানিয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক দেশ লক ডাউনের ঘোষণা দিয়েছে।
তাছাড়া, করোনা ভাইরাস নির্মূলের জন্য কার্যকর কোন ধরনের প্রতিষেধক বা টিকা এখনো আবিষ্কার করা যায়নি। যদিও যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ বিভিন্ন দেশ করোনাপ্রতিরোধী প্রতিষেধক আবিষ্কার করার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী কিছুদিনের মধ্যে করোনাপ্রতিরোধী টিকা আবিষ্কার সম্ভব হবে। এটা হলে মানুষ হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে।
আমাদের দেশে রোগটির প্রভাব কম থাকলেও তা বিস্তার হচ্ছে দ্রুতই। মারা গেছে ৫ জন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮ জনে দাঁড়িয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে গণপরিবহণ, অফিস-আদালত, লঞ্চ, ট্রেন, প্রায় সব ধরনের ফ্লাইট। দেশব্যাপী মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী। বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টোইন পালন, জনসমাগম বন্ধসহ ভিড় এড়াতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ঔষধ, মুদি দোকান ছাড়া শপিংমলসহ সব দোকান বন্ধ রয়েছে। কারণ, আগে থেকেই রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকলে সম্ভাব্য সব ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। যতদূর জানতে পারলাম, ইতালী প্রথমদিকে এই রোগটির ভয়াবহতা নিয়ে জরুরি পদক্ষেপ নিতে দেরি করায় দেশটিতে বর্তমান পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। চিকিৎসার উন্নত ব্যবস্থা ও জনগণ সচেতন হওয়া সত্ত্বেও ইতালীর এমন অবস্থা আর আমরাতো সে তুলনায় যোজন যোজন দূরে। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ সচেতন নয়। তারা দুর্যোগ, মহামারীকে গুরুত্ব দেন কম। সে কারণে আমাদেরকে ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে আগেভাগেই। এর কোন বিকল্প নেই। রোগের আক্রমণের জন্য বসে থাকার কোন সুযোগ নেই। জনগণকে এসব পদক্ষেপকে সহযোগিতা করতে হবে। মানুষের জন্য চিকিৎসা উপকরণ সহজলভ্য করতে হবে। খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির যেন কোন সংকট না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। সকল অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশকে করোনাসহ যেকোন মহামারী থেকে মুক্ত রাখতে এসব পদক্ষেপ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। করোনার প্রকোপ কমে এলে বা আশংকা না থাকলে ধীরে ধীরে পদক্ষেপগুলো শিথিল করা যাবে। তবে এই মুহূর্তে অবশ্যই যেকোন কঠিন পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করা যাবেনা। কালক্ষেপণের কোন অবকাশ নেই। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলকে এ ব্যাপারে সচেতনভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
সংক্রমণের অপেক্ষায় থাকার কোন সুযোগ নেই। আসুন, আমরা সকলে দেশ ও জাতির সুস্থতার জন্য এবং নিরাপদে থাকতে নিজ নিজ স্থান থেকে ভূমিকা রাখি, সচেতন হই। কারণ সচেতনতাই এই করোনা মহামারী থেকে রক্ষায় প্রধান হাতিয়ার।

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম
শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট