চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ

কালান্তরে দৃষ্টিপাত

আহমদুল ইসলাম চৌধুরী

৩০ মার্চ, ২০২০ | ১:০৩ পূর্বাহ্ণ

রাজশাহীকে শিক্ষার শহর বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ বিভাগীয় শহর এবং শহরের পরিধি অনুপাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আধিক্য রয়েছে। বিশেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কলেজ, রুয়েট, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, টেকনিক্যাল কলেজ, মোহসেনিয়া মাদ্রাসা। সম্প্রতি বেসরকারী একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবীতে এখানে চলছিল মিটিং মিছিল। ফলশ্রুতিতে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে এ বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবরূপ লাভ করে। শিক্ষাবর্ষ শুরু ১৯৫৩-৫৪ থেকে। প্রায় ৩০৩ হেক্টর তথা প্রায় ৭৫৩ একর বিশাল এরিয়ার উপর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। যা ঢাকার পর প্রতিষ্ঠা লাভ করে। রাজশাহী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন ও ইংরেজি বিভাগের প্রধান ড. ইতরাৎ হোসেন জুবেরী প্রথম উপাচার্য। অবকাঠামো নির্মাণের পূর্বে রাজশাহী কলেজ থেকে যাত্রা শুরু হয়। কলেজের ক্ষতি না হয় মত সকাল ৭ টা থেকে ৯ টা পর্যন্ত ক্লাস হত।
মাঝে মধ্যে রাজশাহী যাওয়া আসা হয়। রাজশাহী গমন করলে তথা হতে বাংলার রাজধানী গৌড়ে গমন করা ভুল হত না যেয়ারত ও দর্শনের উদ্দেশ্যে। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ার সময় গৌড়ও ভাগ হয়ে যায়। বাংলাদেশের ভাগে পড়ে আংশিক মাত্র। বিগত প্রায় ১০/১৫ বছরের ব্যবধানে গত ১ মার্চ ২০২০ খ্রিস্টাব্দে রবিবার পুনঃ ঢাকা থেকে রাজশাহী যাওয়া হয়। আগে বারে বারে সার্কিট হাউজ বা পর্যটন কর্পোরেশনের হোটলে থাকা হত। বৃহত্তর চট্টগ্রাম তথা কক্সবাজারের সন্তান প্রফেসর ড. মুহিবউল্যাহ ছিদ্দিকী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রফেসর। ৩ রাতের এ রাজশাহী সফরে তিনি যাবতীয় আয়োজক। সাথে ছিলেন এডভোকেট মুহাম্মদ ইলিয়াস ও মুহাম্মদ আবুল কাশেম। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজে আমাদের জন্য ২টি কক্ষ বুক করে রাখেন ছিদ্দিকী সাহেব। ১ম দিন বিকালে হযরত শাহ মাকদুম (রহ.)’র যেয়ারতসহ ঘুরাফেরায় কেটে যায়। ২য় দিন সোমবার ড. মুহিবউল্যাহ ছিদ্দিকীর বিভাগে সময় দেয়া হয়। অতঃপর ফার্সি বিভাগে। দুপুরের দিকে অতি ব্যস্ততার মাঝেও তিনি উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আবদুচ সোবহানের সাথে সৌজন্যে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করান। গেস্ট হাউজে ৩ রাত অবস্থান করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক পরিবেশ অনেকটা কাছ থেকে দেখার জানার সুযোগ হয়। সমতল ভূমিতে বিশাল এরিয়া নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়। ব্রিটিশ আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভাগের পর পর রাজশাহী বাসী জেগে উঠে বিশ্ববিদ্যালয় পেতে। কিন্তু আমরা চট্টগ্রাম কেন পিছিয়ে ছিলাম সেখানে বসে বসে ভাবতে থাকি। আমাদের ত রাজশাহীর আগে থাকা উচিত ছিল। আবার এ দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় আমরা আগে না কুমিল্লা আগে তা নিয়ে রয়েছে মত পার্থক্য। তবে সত্য হল রাজশাহী আমাদের থেকে এগিয়ে। বড় বড় আম গাছের সমারোহে বিশ্ববিদ্যালয়। ফুলের ব্যাপকতা। এ বিশাল এরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে বাগান ব্যষ্টিত বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। এ জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নরত। ৯টি অনুষদের আওতায় ৫৮ টি বিভাগ। প্রায় ১২ শত জন শিক্ষক। মাত্র ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের আমাদের এ ছোট দেশ। জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। বিশ্বে ঘনবসতি দেশসমূহের মধ্যে আমরা অন্যতম। এখানে শব্দদূষণ অন্যতম একটি সমস্যা। এটি আমাদের সচেতনতার অভাব। এখানেও ৩ রাত অবস্থানকালে উচ্চশব্দে কনসার্ট আমরা কিছুটা বিরক্তি অনুভব করি। ৪ মার্চ বুধবার রাজশাহী থেকে আকাশপথে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম আসছিলাম। বিকালের দিকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের পথে আকাশে ক্যাবিন ক্রু যাত্রীদের সংবাদপত্র দিচ্ছিল। সংবাদপত্র পড়তে গিয়ে হঠাৎ আমার দৃষ্টি পড়ে এ বিষয়ের উপর একটি নিউজে। আক্তার বানু আলপনা বলছেন, উচ্চ শব্দে কনসার্ট এবং প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা। তার পরিচয় জানি না। তবে তিনি সংবাদপত্রে বলতে চেয়েছেন শিক্ষকগণ প্রতি মাসে বড় অংকের টাকা ভাড়া দিয়ে ক্যাম্পাসে বসবাস করেন নিরিবিলি শান্ত পরিবেশে বাস করার জন্য। ইদানিং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের সেই নিরিবিলি বসবাসকে রীতিমত অসহ্য করে তুলেছে। শিক্ষকদের কোয়াটারগুলো থেকে মাত্র হাত বিশেক দূরে খোলা মাঠে প্যান্ডেল বসিয়ে কান পাঠানো শব্দে গভীর রাত পর্যন্ত কনসার্ট, পটকা পুঠানো, চিৎকার চেচামিচি চলে।
কি যে অসহ্য। এখানে বয়স্ক, অসুস্থ মানুষেরা থাকেন। বাচ্চাদের লেখাপড়া আছে। শিক্ষকদের কাজ বা পড়া সব বন্ধ। তাদের তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়াম, স্টেডিয়াম ইত্যাদি থাকতে সেখানে খোলা মাঠে অনুষ্টান করার জন্য প্রশাসনের অনুমতিতে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জানি না আক্তার বানু আলপনা কে। তবে বিষয়টি আকাশে বিমান চলাকালীন আমার নজরে পড়ে। আমরাও ৩ রাত অবস্থানকালে এ বিরক্তকর আওয়াজ অনুভব করি।
দেশে ৩৭ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। প্রায় প্রতিটির এরিয়া ১০০ একর বা কম বেশি এরিয়া নিয়ে হবে। যা বিশাল এরিয়া। পরিবেশ সৌন্দর্য বিভিন্ন কারণে বিশাল বিশাল খালি জায়গা থাকবে স্বাভাবিক। এতে হয়ত গাছ বাগান থাকবে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয় দেশে রয়েছে হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তো নয়ই যে কোন জায়গায় অসময়ে বিকট শব্দে যে কোন অনুষ্ঠান গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটি শব্দদূষণ, ক্ষতিকারক। অপরাধের সামিল বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। প্রকাশ্যে ধূমপান যেমন দেশ থেকে এক প্রকার উঠে গেছে তেমনিভাবে এ অতি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে জনগণ যাতে শব্দদূষণ থেকে মুক্তি পায় সে লক্ষে সরকার প্রশাসনের কঠোরতা অত্যাবশ্যক।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দেশে সুনামের অধিকারী। বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. আবদুচ সোবহান ২য় বার এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তাঁর দক্ষতার কথা মুখে মুখে। উপাচার্যের সাথে সাক্ষাতের পর প্রফেসর ড. মুহিবউল্যাহ ছিদ্দিকী আমাদের নিয়ে যান উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরীর মুহাম্মদ জাকারিয়ার নিকটে। তিনি খোলা মনে আলাপ করেন, উপহার দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট