চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি : আমাদের করণীয় অধ্যাপক রতন কুমার তুরী

১৫ মার্চ, ২০২০ | ২:৫৫ পূর্বাহ্ণ

চীনের উহান প্রদেশ থেকে পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিস্কারে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এই ভাইরাসে ইতোমধ্যে তিন হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। এসব মানুষের বেশিরভাগ ভাগই চীনা নাগরিক। ইতিমধ্যে চীন সরকার দেশটিতে রেড এলার্ট জারি করে জনগণকে সতর্ক করে দিয়েছে। চীনা নাগরিকদের অনেকই দেশ ছেড়ে বিদেশে যেতে পারছেনা। বলতে গেলে চীনের অধিকাংশ জনগণ এখন ঘরবন্দী হয়ে আছে। উহান প্রদেশটির মেয়র এর দায় কাঁধে নিয়ে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই ভাইরাস কীভাবে সৃষ্টি হলো তার সঠিক কোনো তথ্য এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। প্রথম দিকে উহান প্রদেশের একটি সামুদ্রিক মাছের বাজার থেকে উগেলা তিমি মাছ থেকে এই ভাইরাস মানুষের দেহে ছড়িয়েছে বলে মনে করা হলেও এখনও তা স্পষ্ট নয়। চীনের জীবাণু গবেষণাগার থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকেই। আবার কিছু গবেষক চীনের মানুষের খাদ্য থেকেও যেমন- বিভিন্ন প্রকার সাপ, ব্যঙ, পোকা-মাকর, গন্ধগকুল ইত্যাদি প্রাণি থেকে মানুষের দেহে ছড়িয়েছে বলে মনে করছে। প্রকৃতপক্ষে করোনাভাইরাসটি মানুষের দেহে সংক্রমণ হলে মানুষের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্রুত বিকল করে তাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাওয়ায় এই ভাইরাসটি নিয়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভাইরাসটি মানুষের দেহে সংক্রমণ হলে কোনো জীবনদায়ী ওষুধই কাজ করেনা। ফলে মানুষটি মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। প্রথমে এরোগ সাধারণ নিউমোনিয়ার মত দেখা দিলেও পরবর্তিতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যায়। এই ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সরাসরি আক্রমণ করে বিধায় মানুষ দ্রুতই মৃত্যু বরণ করে। বর্তমানে এই ভাইরাস যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, থাইওয়ান, জাপান, নেপাল, উত্তর কোরিয়াসহ বিশে^র প্রায় ১১০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশও ঝুঁকিতে আছে। ভাইরাসকে যদি নিয়ন্ত্রণে আনা না যায় তাহলে ব্যাপক প্রাণহানির সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইঁদুর থেকে সৃষ্টি প্লাগ ভাইরাসে পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ লোক মারা গিয়েছিল। করোনাভাইরাসটির বর্তমানে কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়ায় আপাতত এটি প্রতিরোধের দিকেই বেশি জোর দিয়েছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা।
এই মুহূর্তে উহান প্রদেশের প্রতিটি জনসাধারণকে মুখে মাস্ক পড়তে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে তাদের আলাদা করে রাখার জন্য জরুরি বার্তা পৌঁছানো হয়েছে। বাংলাদেশে এখন তিনজনকে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব থাকার ব্যাপারে সন্দেহ করে নজরদারীতে রাখা হয়েছে। করোনা ভাইরাসটি নেপাল এবং ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। কারণ ইতিমধ্যে ভাইরাসটি ভারত ও নেপালে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারের উচিত সকল সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারি জোরদার করা। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষের সর্দি, কাশি এবং শ্বাস কষ্টকে অবহেলা করা উচিৎ হবেনা। এমন উপস্বর্গ দেখা দেয়ার সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তির মাধ্যমে সঠিক চিকিৎসাসেবা নেয়া জরুরি।
মূলত এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে আমাদের সবাইকে সর্তক হতে হবে। বাইরে গেলে মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। হাত মুখ ভালো করে পরিষ্কার রাখতে হবে। পশুপাখিদের থেকে দূরে অবস্থান করতে হবে। ভাইরাসটির ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সর্তক-সাবধান করতে হবে। এই মুহূর্তে সরকারের উচিত হবে স্বল্প সময়ের জন্য চীনা নাগরিকদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না দেয়া। যদিও বিশেষ কারণে প্রবেশ অনুমতি দেয়া হয় তা যেনো যথাযথ শারিরীক পরীক্ষার মাধ্যমে দেয়া হয়। আসুন, করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে আমরা সবাই সতর্ক হই এবং সবাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করি।

অধ্যাপক রতন কুমার তুরী কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, মানবাধিকারকর্মী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট