চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের আংশিক তালিকা প্রকাশ

চট্টগ্রামের ২৭ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক হ ঢাকা অফিস

১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

একাত্তর সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানী সেনাবহিনীকে পথঘাট চেনাতে ও মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছিল, তাদের নামের আংশিক তালিকা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার। স্বাধীনতা লাভের দীর্ঘ ৪৮ বছর পর গতকাল রবিবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাংবাদিক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে প্রথম কিস্তিতে ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকার, আলবদর ও আল-শামস বাহিনীর সদস্যদের নাম প্রকাশ করে। বলা বাহূল্য, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার এমন কোনো তালিকা সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হলো। রাজাকারদের নাম-পরিচয় নতুন প্রজন্মকে জানানোর জন্যই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে বলে সরকারের তরফে জানানো হয়। তালিকা প্রকাশ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা প্রথম কিস্তিতে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের নামের তালিকা প্রকাশ করেছি। ভবিষ্যতে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে।’

জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দলিল-দস্তাবেজ গেটে রাজাকারদের নামের এই দীর্ঘ তালিকা খুঁজে বের করা হয়। পরে কয়েকটি স্তরে যাচাই-বাছাই করে তালিকার একাংশ প্রকাশ করা হয়েছে। এ সব তথ্য জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় থাকার সময় অনেক রাজাকার-আলবদরের রেকর্ড সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তাই আমাদের অনুসন্ধানের কাজ এখনও চলছে। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধিনতাবিরোধীরা রাজাকার-আল বদর নামে সশস্ত্র বাহিনী গঠন করে লুটপাট ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বরের আগে তাদের নামের তালিকা প্রণয়ন করা ছিল আমরা প্রতিশ্রুতি। সংসদেও এ বিষয়ে কথা বলেছিলাম। এরই আলোকে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।’

মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী বলেন, আমরা নতুন করে কোনও তালিকা করিনি। পাকিস্তান সরকার কর্তৃক যারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং যেসব পুরনো নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে সংরক্ষিত ছিল সেটুকু প্রকাশ করেছি। তৎকালীন বিভিন্ন জেলার রেকর্ড রুম থেকে এবং বিজি প্রেসে ছাপানো তালিকাও সংগ্রহের প্রচেষ্টা চলছে। যাচাই-বাচাই করে ধাপে-ধাপে আরও তালিকা প্রকাশ করা হবে।

সূত্র জানায়, পাকিস্তানী বাহিনীকে সহায়তার জন্য ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে যুদ্ধচলাবস্থায় অনানুষ্ঠানিকভাবে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছিল। ওই সময় গ্রামে-গঞ্জে বেসিক ডেমোক্রেসি মেম্বার ছিল, তাদের রাজাকার বাহিনীতে লোক সংগ্রহ করতে বলা হয়েছিল। গ্রামের এসব মেম্বার এবং বিভিন্ন দল (যেমন জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ওলামা, কনভেনশন মুসলিম লীগ) যারা পাকিস্তানের সমর্থক- ওই রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়। মুলত, এসব দলের নেতারাই রাজাকার বাহিনীর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তবে রাজাকার বাহিনী তৈরির পেছনে ছিল পাকিস্তানের গোয়েন্দা বাহিনী এবং তাদের জেনারেলরা। ওই সব বেতনভুক্ত রাজাকার এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে যাদের বিরুদ্ধে দালাল আইনে মামলা হয়েছিল, তাদের নিয়েই রাজাকারের তালিকা চূড়ান্ত করেছে সরকার।
তালিকা প্রকাশ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপে আমরা জেলা প্রশাসকদের এবং বিজি প্রেস থেকে সমস্ত তালিকা সংগ্রহ করতে পারব। সেগুলোর শতভাগ সত্যতা নিশ্চিত হয়ে আগামী স্বাধীনতা দিবস অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রাক্কালে প্রকাশ করব। শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে কোনো তালিকা আমরা প্রকাশ করব না।’ মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা আগামি ২৬ মার্চ প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এই তালিকায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি বা মন্ত্রী পর্যায়ের ব্যক্তিদের নাম আছে কি-না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যাদের ইন্ডিকেট (ইঙ্গিত) করে এ প্রশ্ন করছেন তারা রাজাকার নন, পিস (শান্তি) কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। আপনারা যদি আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে ইঙ্গিত করেন, যিনি পরবর্তীকালে মন্ত্রী, স্পিকার, রাষ্ট্রপতি- সবই হয়েছিলেন। তাহলে বলতে হয়, তিনি বরিশালে পিস কমিটির সভাপতি ছিলেন।’ মন্ত্রী জানিয়ে দেন, ‘পিস কমিটি সদস্যরা কিন্তু রাজাকার ছিল না। তারা ছিল আরও উচ্চস্তরের দালাল। আরও অনেক বড় দালাল ছিল তারা।’ এ ধরনের উচ্চপর্যায়ে স্বাধীনতাবিরোধী তথা পিস কমিটিতে যারা ছিল তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে কি-না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘জাতি যেভাবে চাচ্ছে তাতে করে জাতির চাহিদা তো পূরণ করতেই হবে।’
মন্ত্রী জানান, দেশের বিভিন্ন জেলা প্রশাসকের দপ্তরের সংরক্ষণাগারে মুক্তিযুদ্ধের সময় নানা দালিলিক প্রমাণাদি রয়েছে। ওই সময়ের সংরক্ষিত তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য জেলা প্রশাসকদের অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা আশানুরূপ সাড়া পাইনি। তবে আমরা আবারও তাদের অনুরোধ করব, জানুয়ারি মাসের মধ্যে সেই সময়ের তথ্যাদি পাঠিয়ে সহযোগিতা করতে। মন্ত্রী বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপে আমরা জেলা প্রশাসকদের এবং বিজি প্রেস থেকে সমস্ত তালিকা সংগ্রহ করতে পারব। সেগুলোর শতভাগ সত্যতা নিশ্চিত হয়ে আগামী স্বাধীনতা দিবস অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রাক্কালে প্রকাশ করব। শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে কোনও তালিকা আমরা প্রকাশ করব না।’

চট্টগ্রামের রাজাকারদের তালিকা
স্বাধীনতা লাভের দীর্ঘ ৪৮ বছর পর গতকাল রবিবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সাংবাদিক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে প্রথম কিস্তিতে যে ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকার, আলবদর ও আল-শামস বাহিনীর সদস্যদের নাম প্রকাশ করেছে, তার শেষের দিকে চট্টগ্রামের রাজাকারদের নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা বাহূল্য, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার এমন কোনো তালিকা সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হলো। তালিকায় ৫৮৬ নং থেকে শুরু করে ৬১২ নং পর্যন্ত রয়েছে চট্টগ্রামের রাজাকারদের নাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট