চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিমানে উঠে গেছে পেঁয়াজ, চিন্তা নাই : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক হ ঢাকা অফিস

১৭ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:৫০ পূর্বাহ্ণ

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে চক্রান্তের সঙ্গে কেউ জড়িত কি না তা খুঁজে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে দ্রুত চাহিদা মেটাতে কার্গো বিমানে পেঁয়াজ আনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘এখন পেঁয়াজ বিমানেও উঠে গেছে। কাজেই আর চিন্তা নাই।’ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এই দেশ থেকে মাদক-সন্ত্রাস-দুর্নীতি দূর করতে চাই। এর বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে সেই অভিযান আমরা অব্যাহত রাখব। বাংলাদেশের মানুষের জীবনে শান্তি-নিরাপত্তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আর একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলেই উন্নতি সম্ভব। গতকাল শনিবার রাজধানী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সমস্যা (পেঁয়াজ) যাতে না থাকে তাই কার্গো ভাড়া করে আমরা এখন পেঁয়াজ আনা শুরু করেছি। কাল-পরশুর মধ্যে এই বিমানে পেঁয়াজ এসে পৌঁছাবে। এখন পেঁয়াজ বিমানে উঠে গেছে। কাজেই আর চিন্তা নাই।’

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে চক্রান্তের সঙ্গে কেউ জড়িত আছে কি না সে প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমরা জানি এখন পেঁয়াজ নিয়ে একটা সমস্যা আছে। সব দেশেই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু আমাদের দেশে কেন কি কারণে এত একটা অস্বাভাবিকভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে কেন জানি না।’
‘আমরা দেখতে চাই এ ধরনের চক্রান্তের সঙ্গে কেউ জড়িত আছে কি না। এর পেছনে মূল কারণটা কি সেটা খুঁজে বের করতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় অনেক পণ্যের উৎপাদন বাড়ে বা কমে। আর যেহেতু পেঁয়াজটা বেশিদিন রাখা যায় না। কিন্তু যদি এখন হোল্ডিং করে দাম বাড়িয়ে দুই পয়সা কামাতে চান তাদের এটাও চিন্তা করতে হবে, পেঁয়াজ তো পচে যাবে।’ ‘এখন পচা পেঁয়াজও শুকানোর চেষ্টা হচ্ছে। তো মানুষকে এই কষ্ট দেওয়াটা কেন? এভাবে কারা এর পেছনে আছে সেটাও আমাদের দেখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যতই এগিয়ে যাই, মানুষ যখন ভালো থাকে একটা না একটা ইস্যু তৈরি করা হয় এবং মানুষের মাঝে একটা বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা করা হয়। ’
পেঁয়াজের দাম ভারতেও বেশি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্য ইন্ডিয়াতেও পেঁয়াজের দাম অনেক। সেখানে ১০০ রুপিতে তারা পার কিলো পেঁয়াজ কিনতে পারে। শুধু এক স্টেটে তারা তাদের পেঁয়াজ ওই স্টেটের বাইরে যেতে দেয় না। সেখানে একটু দাম কম। তাছাড়া সার্বিকভাবে সেখানেও দাম বেশি।’ ‘আমরা যেখান থেকে কিনছি আমাদের বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে,’যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য মানুষকে সুন্দর জীবন দেওয়া, মানুষ যখন ভালো থাকে তখন একটা শ্রেণি আছে, একটা গোষ্ঠী আছে – মানুষ যখন ভালো থাকে তারা তখন মনঃকষ্টে ভোগে। অসুস্থতায় ভোগে।’ ‘তাদের এ রোগ কিভাবে সারানো যায় এটা জনগণই বিচার করবে। জনগণই এটা দেখবে। ’

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, কেন দুর্নীতি করে, চুরি করে টাকা বাড়াতে হবে। সন্ত্রাসী কর্মকা-, চাঁদাবাজি দুর্নীতি, অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে সেটা দিয়ে বিলাস ব্যাসনে জীবনযাপন করা, আর ফুটানি-ফাটানি করা – এটা কখনো এদেশের মানুষ বরদাশত করবে না। অসৎ পথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে বিরিয়ানি খাওয়ার থেকে সৎ পথে নুন-ভাত খাওয়া অনেক মর্যাদার, অনেক সম্মানের, অনেক ভালো। এটাই হলো বাস্তবতা। তিনি বলেন, একজন রাজনীতিবিদের জীবনে কী পেলাম না পেলাম- এ চিন্তা না করে মানুষের জন্য কী দিতে পারলাম সেই চিন্তা করা উচিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে এখন একটা সমস্যা চলছে। সব দেশেই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, এটা ঠিক। কিন্তু আমাদের দেশে কেন কী কারণে এত অস্বাভাবিকভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে জানি না। যে কারণে আমি ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন আমরা বিমানের কার্গোতে করে পেঁয়াজ আমদানি করে নিয়ে আসছি। আমরা দেখতে চাই এ ধরনের চক্রান্তের সঙ্গে কেউ জড়িত আছে কি না। তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় অনেক পণ্যের উৎপাদন বাড়ে, বা উৎপাদক কমে। যেহেতু পেঁয়াজ বেশিদিন রাখা যায় না। কেউ যদি এখন মজুদ করে দাম বাড়াতে চায় তাদের এটাও চিন্তা করতে হবে যে পেঁয়াজ তো একদিন পচেও যাবে। এখন পচা পেয়াজ শুকানোর চেষ্টা হচ্ছে। তাহলে মানুষকে কষ্ট দেয়াটা কেন? এভাবে কারা এর পেছনে আছে সেটাও আমাদের দেখতে হবে। আগামী পরশুর মধ্যে পেঁয়াজ দেশে পৌঁছবে। সুতরাং চিন্তার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসে তাদের কামানো অবৈধ অর্থ দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অনেক তদন্ত শুরু করে। এরপর কেয়ারটেকার এসে শুরু করে। কিন্তু কিছু পায়নি। আমেরিকায় আমাদের পরিবারের কার কী আছে সেটি দেখতে বিএনপি বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে এফবিআইয়ের একজন সদস্যকে ‘হায়ার’ করে। সেই তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে এলো খালেদা জিয়া ও তার দুই ছেলের দুর্নীতির চিত্র। আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ তারা পায়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় কিডন্যাপ করে তাকে মেরে ফেলতে বিএনপি ষড়যন্ত্র করেছিল বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী ষড়যন্ত্র থেমে নেই। ষড়যন্ত্রের গভীরতা অনেক দূর পর্যন্ত।

বিএনপি সরকারের শাসনামলে দেশে দুর্নীতি আর সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন- বিএনপির সময়ে সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে। পাঁচবার বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এই দুর্নীতিবাজ বিএনপি যাতে কখনো ক্ষমতায় যেতে না পারে এজন্য বাংলাদেশের মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে। এরা ক্ষমতায় থাকা মানেই দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া। দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের দিকে নিয়ে যাবে। এসময় আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা- ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হয়ে মঞ্চে উঠলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা মুহূর্মুহূ শ্লোগান আর করতালিতে মুখরিত করে তোলেন পুরো এলাকা। মঞ্চে উঠে শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে অভিনন্দনের জবাব দেন।

প্রধানমন্ত্রীকে ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে বরণ করে নেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহ ও সদস্য সচিব গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মেলনের ব্যাজ পরিয়ে দেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্ববায়ক শাহনাজ ইয়াসমিন।
বেলা ১১টা ৪৭ মিনিটে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। এসময় অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ থেকেও পাঠ করা হয়। শান্তির প্রতীক সাদা পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে এবং জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। এসময় ৬৪ জেলার পক্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগের পতাকা একযোগে উত্তোলন করেন জেলা সভাপতিরা। সংগঠনের থিম সং এবং ‘জয় বাংলা’ সঙ্গীতের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এরপর গান পরিবেশন করেন সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম।

সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, একেএম এনামুল হক শামীম, দলের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপিসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক সংগঠনটির সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম। সঞ্চালনা করেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব ও সংগঠনটির প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেসবাহুর রহমান সাচ্চু।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট