চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ট্রেন দুর্ঘটনা : তদন্তে চালকের গাফিলতি পেয়েছে কমিটি, আটক ২ রেলকর্মী

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ নভেম্বর, ২০১৯ | ১১:২৭ অপরাহ্ণ

একদিনের ব্যবধানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিরাজগঞ্জ রেলপথে দুটি বড় দুর্ঘটনায় নাশকতার আলামত খুঁজে পেয়েছে দুর্ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটি। সিরাজগঞ্জের দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে রেলওয়ের সন্দেহভাজন দুই কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মন্দবাগে ট্রেন দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহতের ঘটনায় চালকের গাফিলতি পেয়েছে বলেও জানান তদন্ত কমিটি। গতকাল রেলওয়ের মহাপরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

গতকাল বিকালে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া স্টেশন পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এ সময় তিনি  সাংবাদিকদের জানান, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনাটি নাশকতা কি না তা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রেলের দুই কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে।

রেলমন্ত্রী জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ট্রেন দুর্ঘটনা ও উল্লাপাড়ার ট্রেন দুর্ঘটনা এক রকম নয়। হঠাৎ কেন ট্রেনে আগুন ধরল, এই বিষয়টি আমাদের ভাবাচ্ছে। এখানে মিটার গেজের লাইন একটিই, সেটিও ক্লিয়ার ছিল। তাই এটি নাশকতা কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

কারও গাফিলতিতে এই দুর্ঘটনা হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে উল্লেখ করে রেলমন্ত্রী জানান, এর আগেও এই এলাকায় ট্রেন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল। তাই নাশকতার সম্ভাবনা একেবারই উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। ইঞ্জিনে না হয় তেল থেকে আগুন ধরল কিন্তু বগিতে কেন আগুন লাগল? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টির তদন্ত করছে। তদন্তে কারও গাফিলতি পেলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় রংপুর এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়ে আগুন লেগে ইঞ্জিনসহ তিনটি বগি পুড়ে যায়। এতে রেলকর্মীসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। ট্রেনের ইঞ্জিনটি রেলপথের পাশে উল্টে পড়ে আগুন ধরে যায়। পরে ওই আগুন লাইনচ্যুত আরও ২টি বগিতে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ট্রেনের যাত্রীরা দ্রুত জানালার কাচ ভেঙে এবং দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান। আহত হন বেশ কয়েকজন যাত্রী। গতকাল দুপুর পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চালিয়ে লাইনচ্যুত ইঞ্জিন ও সাতটি বগি উদ্ধার করা হয়।

চালকের ‘গাফিলতি’ মন্দবাগে : গতকাল মন্দবাগ স্টেশনে ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত বিভাগীয় পর্যায়ের তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। দুপুরে রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. শামছুজ্জামানের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তদন্ত দলের সদস্যরা।

বিভাগীয় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মো. নাসির উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন জমা দেয়ার শেষ সময় থাকলেও কয়েকটি বিষয় অসম্পূর্ণ থাকায় তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একদিন সময় চেয়েছিলেন। আজ সে কাজ শেষ করে সম্পূর্ণ প্রতিবেদন ডিজির কাছে জমা দেয়া হয়েছে। তদন্তের বিষয়ে রেলমন্ত্রী ব্রিফ করবেন বলে জানান তিনি।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মো. নাসির উদ্দিন জানান, পুরো বিষয়টি ব্রিফিংয়ে বলা হবে। তবে আমরা এ বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে যা দেখেছি, তাতে কোথাও তূর্ণা নিশীথার চালকদের ব্রেক করতে সমস্যা হওয়ার মতো কারণ দেখিনি। তারা যথেষ্ট সময় ও জায়গা পেয়েছিলেন। আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি, তূর্ণা নিশীথার চালকরা চাইলেই ফুল ব্রেকিং সিস্টেম ব্যবহার করতে পারতেন।

নাসির উদ্দিন জানান, তদন্ত কমিটির সদস্যরা এ ঘটনার সংশ্লিষ্ট ১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও যাত্রীর সাক্ষ্যও নেয়া হয়েছে। এ সময় আমরা জানার চেষ্টা করেছি দুর্ঘটনার সময় ট্রেনের স্পিড কত ছিল, সিগন্যালিং অবস্থা কেমন ছিল, চালকরা কী অবস্থায় ছিলেন এসব বিষয়। স্টেশন মাস্টারদের ব্যবহৃত কোডগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে বলেও জানান কমিটির আহ্বায়ক। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে একটি বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, সেটি হলো-মন্দবাগ ট্রেন দুর্ঘটনায় চালকের ‘অবহেলা’ ছিল।

তদন্ত কমিটির কাছে দেয়া সাক্ষাৎকারে তূর্ণা নিশীথার ট্রেনচালক তাছের উদ্দিন ও সহকারী চালক অপু দে প্রথমে একে অপরের প্রতি দোষারোপ করলেও পরে ইটের স্তূপের জন্য সিগন্যাল দেখতে না পাওয়ার কথা জানান। তবে তদন্ত কমিটির কাছে এর কোনোটাকেই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে যথেষ্ট মনে হয়নি। তারা জানিয়েছেন, আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে সব জায়গায় নির্মাণ কাজের মালামাল আছে। সর্বোচ্চ সিকিউরিটি বজায় রেখে এ কাজের মালামালগুলো রাখা হয়েছে। তাই ‘ইটের স্তূপের কারণে’ সিগন্যাল না দেখার মতো ঘটনা ঘটার কথা নয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, সিগন্যাল না দেখার মতো কোনো ঘটনা থাকলে ইমার্জেন্সি ভেঁপু বাজানোর সিস্টেম আছে, যা বাজাবেন তূর্ণা নিশীথার চালকরাই। কিন্তু তারা এমন কিছুও করেননি। তদন্ত কমিটির কাছে দুর্ঘটনা এড়াতে চালকের ‘অবহেলা’ ছিল বলে প্রতীয়মান হয়েছে। কারণ হিসেবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, কোনো লোকোমাস্টার (চালক) যখন ব্রেক এপ্লাই করেন, তখন ৪৪০ গজ গিয়ে ট্রেনটা থেমে যায়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, দুর্ঘটনাকবলিত তূর্ণা নিশীথার চালকরা এ ক্ষেত্রে বেশি জায়গা নিয়েছিলেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট