চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ডিসেম্বরেও ই-পাসপোর্ট চালু নিয়ে সংশয়

অনলাইন ডেস্ক

১৬ নভেম্বর, ২০১৯ | ১১:২৭ অপরাহ্ণ

আসছে ডিসেম্বরের মধ্যে ইলেকট্রনিক বা ই-পাসপোর্ট চালুর কথা থাকলেও তাতে কিছুটা সংশয় দেখা দিয়েছে। মেশিন রিডেবল বা এমআরপি থেকে ই-পাসপোর্টে কনভার্ট করতে হলে সব তথ্য নির্ভুলভাবে নতুন ডেটাবেইসে স্থানান্তর করতে হবে। এসব টেকনিক্যাল কাজ শেষ করে ডিসেম্বরে ই- পাসপোর্ট চালু করা দূরহ বলে মনে করেন পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ। সূত্র : সারাবাংলা

পাসপোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এ বিষয়ে তারা কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে কবে নাগাদ ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমে যেতে পারবেন তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। তবুও ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ সম্ভাব্য ডেটলাইন ধরেই এগুচ্ছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা ইমিগ্রেশন বা পাসপোর্ট বিভাগ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক পরিসরে ভ্রমণ নিরাপদ ও সুরক্ষিত করার পাশাপাশি জালিয়াতি ঠেকাতে ২০১৬ সালে মেশিন রিডেবল বা এমআরপি পাসপোর্টের পাশাপাশি ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্ট ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয় সরকার। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশেও আধুনিক প্রযুক্তির ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্ট তুলে দিতে ওই বছরই ৪ হাজার ৬৩৫ কোটি ৯১ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক।

প্রযুক্তি সহায়তায় জার্মান কোম্পানি ভেরিডোস

ই-পাসপোর্ট ব্যবস্থা শুরু করতে জার্মান সরকারের সঙ্গে জি টু জি পদ্ধতিতে চুক্তি করে সরকার। চুক্তি অনুযায়ী, জার্মান কোম্পানি ‘ভেরিডোস জিএমবিএইচ’ ৩ কোটি পাসপোর্ট বই সরবরাহ করবে। পাসপোর্টের বুকলেট তৈরি করতে ঢাকার উত্তরায় একটি এসেম্বলি কারখানা স্থাপন করবে ভেরিডো। এতে পূর্নাঙ্গ ই-পাসপোর্ট বুকলেট আমদানীর চেয়ে এসেম্বল করা ই-পাসপোর্টে বুকলেটের দাম অর্ধেকেরও কম হবে। ৫০টি ই-গেট নির্মাণ হবে। এর মাধ্যমে সকল সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও নেটওয়ার্ক দশ বছরের জন্য রক্ষণাবেক্ষন ও সেবা দেবে। একটি নতুন স্বয়ং সম্পূর্ন ডাটা সেন্টার ও একটি ডিজাস্টার রিকোভারি সেন্টার এবং অত্যাধুনিক পার্সোনালাইজেশন নির্মাণ করা হবে, সেখানে মোট ৮টি প্রিন্টিং মেশিন থাকবে যার মাধ্যমে প্রতিদিন ৩০ হাজার পাসপোর্ট বই প্রিন্ট করা যাবে।

এছাড়াও ভেরিডোস চলে যাবার পর পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে যাবে কোম্পানিটি। এসব কাজের জন্য ভেরিডোস পাবে ৩ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা।

কিন্তু গেলো তিন বছরে এসব কাজের সিংহভাগই শেষ করতে পারেনি জার্মান ওই কোম্পানি। ফলে চলতি বছরের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ই-পাসপোর্ট চালুর ঘোষণা দেয়া হলেও তা চালু করতে পারেনি সরকার। পরে আগস্টের শেষ নাগাদ চালুর তারিখ নির্ধারণ করেছিলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগ। সে দিনক্ষণও পিছিয়ে যায়। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, ডিসেম্বরের শেষ দিকে ই-পাসপোর্ট চালু করা যাবে।

এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ জানান, ই-পাসপোর্ট চালুর প্রস্তুতি এখনো শেষ হয়নি। বর্তমানে ফাইনাল স্টেজের কাজ চলছে। এনআইডি, জন্মসনদসহ প্রয়োজনীয় তথ্য সার্ভারে স্থাপন করার কাজ হচ্ছে এখন। কোনো পাসপোর্টধারী যেন হয়রানির শিকার না হোন সেদিক বিবেচনায় রেখে কাজ এগোচ্ছে। একটি নির্ভুল কাজ করতে গিয়ে কিছুটা দেরি হচ্ছে।

ই-পাসপোর্টের সুবিধা

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের আইটি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পৃথিবীর কোথাও ই-পাসপোর্ট জাল করার সুযোগ নেই। ই-পাসপোর্টে সংযুক্ত থাকবে স্বাক্ষর, চোখের কর্নিয়া, আঙ্গুলের ছাপসহ সকল ব্যক্তিগত তথ্য যা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। বর্তমানের মেশিন রিডেবল বা এমআরপি পাসপোর্টের মতোই বই থাকবে। তবে এমআরপি পাসপোর্ট বইয়ে শুরুতে তথ্য সম্বলিত যে দুই পাতা থাকে, নতুন প্রযুক্তির এই ই-পাসপোর্টে তা থাকছেনা। সেখানে পলিমারের তৈরি একটি Chip কার্ড থাকবে। সে কার্ডের ভেতরে পাসপোর্ট বাহকের সকল তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। ডাটাবেজে থাকবে তিন ধরনের ছবি, ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ। যে কারণে যেকোনো দেশের বহির্গমন কর্তৃপক্ষ সহজেই ভ্রমণকারি সম্পর্কে সব তথ্য জানতে পারবেন।

এ প্রসঙ্গেও ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ জানান, একশোর বেশি উন্নত দেশ ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করে থাকে। আর সে তালিকায় এবার যুক্ত হবে বাংলাদেশ। এতে সহজ ভ্রমণের পাশাপাশি কারো বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকলে তা সঙ্গে সঙ্গে জানা যাবে। ই-পাসপোর্টে মোট ৩৮টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকবে। তবে ভিসা নিতে আবেদনের ক্ষেত্রে বহাল থাকবে আগের পদ্ধতি।

ই-পাসপোর্টের মেয়াদ ও ফি

প্রাথমিকভাবে ই-পাসপোর্টের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে পর্যায়ক্রমে পাঁচ ও দশ বছর। বয়স ভেদে পাসপোর্টের এ মেয়াদ নির্ধারণ করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। গেল ৪ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ই-পাসপোর্টের ফি দুইভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি ৩৫০০ টাকা (ভ্যাট ছাড়া), জরুরী ফি ৫৫০০ টাকা, অতি জরুরী ফি ৭৫০০ টাকা। আর দশ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য সাধারন ফি ৭০০০ টাকা, জরুরী ফি ৯০০০ টাকা এবং অতি জরুরী ফি ধরা হয়েছে ১২০০০ টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট হবে ৪৮ পৃষ্ঠার এবং ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট বইয়ে ৬৪ পৃষ্ঠা থাকবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ই-পাসপোর্ট চালু হলে এর পাশাপাশি প্রচলিত এমআরপি পাসপোর্ট বহাল থাকবে। তবে নতুন করে আর কাউকে এমআরপি পাসপোর্ট দেয়া হবে না। বর্তমানে এমআরপি পাসপোর্ট বহনকারীরা নবায়ন করতে গেলে তাদেরকে ই-পাসপোর্ট ব্যবস্থায় যুক্ত হতে হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে সকল পাসপোর্ট ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে রূপান্তর হবে।

 

পূর্বকোণ-রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট