চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি

সংসদেও পেঁয়াজের ঝাঁজ

নিজস্ব প্রতিবেদক হ ঢাকা অফিস

১৫ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:২৩ পূর্বাহ্ণ

পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে সংসদে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। এর পেছনে ষড়যন্ত্র থাকার আশঙ্কা করে বিষয়টি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রশ্নোত্তর পর্বের শেষে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিম পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির প্রসঙ্গটি তোলেন।

মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘পেঁয়াজের ঝাঁজ বেশি হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে এটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। মানুষের মধ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া হলে সেটি খারাপ হবে। আজ পেঁয়াজের মূল্য প্রায় ২০০ টাকা হয়ে গেছে। কী কারণে প্রতিদিন পেঁয়াজের মূল্য বাড়ছে। বাণিজ্যমন্ত্রী যখন বলেন ১০০ টাকার নিচে মূল্য নামবে না, তখন ব্যবসায়ীরা তো সুযোগ পেয়ে যান। বলা হচ্ছে, বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। তাহলে কেন মূল্য বাড়ছে তা বোধগম্য নয়। এতে সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।’

মোহাম্মদ নাসিম আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে বলেছিলেন পেঁয়াজের ঝাঁজ বেড়ে গেছে। তিনি ভারতকে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ না করতে অনুরোধ করেছিলেন। সংসদে অর্থমন্ত্রী আছেন। বাণিজ্যমন্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে না। অর্থমন্ত্রীকে বলবো, পেঁয়াজের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আরও তাৎপর হওয়া উচিত। অর্থমন্ত্রী যদি জবাব দেন, তাহলে আমরা আশ্বস্ত হবো।’
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কিমিটির তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর অনেক কর্তব্য রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে পেঁয়াজের মূল্য একটু হয়তো বেড়েছে। দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে হচ্ছে, আজকে পেঁয়াজের কেজি দুই শত টাকা। আমরা কোনোদিনই এটা ভাবিনি।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বলেন, ‘দেশে পেঁয়াজের কী চাহিদা, তা আগেই মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। আমাদের দরকার কত। আছে কত। যেটা ঘাটতি তা তুরস্ক ও মিসরসহ অন্য দেশ থেকে আগেই সংগ্রহ করি।’
অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘কোন একটি পণ্যের মূল্য বাড়লে আমরা তার ওপর আমদানি ডিউটি কমিয়ে দেই। তাই বলবো, যারা পেঁয়াজ আমদানি করেন তাদের সুবিধা দিন। অন্তত কিছু দিনের জন্য আমদানি শুল্ক শূন্য করে দিন। কারণ, এ ধরনের ঘোষণা দিলে দেখা যাবে এর প্রভাব বাজারে পড়ছে।’

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘বাজারে কিন্তু পেঁয়াজ আছে। এর মূল্য বাড়ার কোনও কারণ নেই। কিন্তু গতকাল মূল্য ছিল দেড়শ টাকা। আর আজ দুই শত টাকা। এভাবে মূল্য বেড়ে যাওয়াকে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মনে করি। সরকার দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছে। এই সময় দুর্নীতিগ্রস্ত যে ব্যবসায়ীরা এই কাজগুলো করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংসদ ওয়াদাবদ্ধ। দেশের মানুষকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার কোনও কারণ থাকতে পারে না। মুষ্টিমেয় কয়েকজন মানুষ রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাবে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এর একটা ব্যবস্থা হওয়া উচিত। নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন। দেশবাসীকে আশ্বস্ত করবেন। যেন পেঁয়াজের মূল্য শিগগিরই কমে আসে।’

বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন পেঁয়াজ নিয়ে রসিকতা সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই পেঁয়াজের ব্যাপারে সরকারের তৎপর হওয়া উচিত।’

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘গত পরশু বাজারে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৮০ টাকা। ওইদিন এই সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রীর পক্ষে শিল্পমন্ত্রী দেওয়া বক্তব্যে পিঁয়াজের মূল্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে বললেন। এট বলার পরদিন মূল্য হয়ে গেল ১৫০ টাকা। আর আজকে হলো ২০০ টাকা। পত্রিকায় দেখলাম ভারতে পেঁয়াজের মূল্য কমার কারণে কৃষক কাঁদছেন। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের এত ভালো সম্পর্কের পরে নিশ্চয়ই সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে পদক্ষেপ নিলে ক্রাইসিসটা থাকতো না।’ পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধিকে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কিনা, তা খতিয়ে দেখার দাবি করে চুন্নু বলেন, ‘বাজারে পেঁয়াজ নেই বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ আছে, তবু মূল্য বাড়ছে। আমি মনে করি এটা একটি ষড়যন্ত্র। সরকারের অনেক অর্জন। এজন্য সরকারের বদনাম করার এটা একটা ওয়ে। আমার মনে হয় একটি অভিযান দরকার আছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীকে বলবো, আপনারা বের করুন এটি ষড়যন্ত্র কিনা। মানুষ পেঁয়াজ কিনতে পারেন না, কেবল এটা নয়; এতে সরকারের বদনাম হচ্ছে। কিছু খারাপ কাজের জন্য অনেক ভালো কাজ ম্লান হয়ে যায়। অনেক ফেন্সিডিল ব্যবসায়ী রাস্তাঘাটে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে মরে যায়। পেঁয়াজের মূল্য যারা বাড়ায় তারা বন্দুকযুদ্ধে মরে যাক। তাহলে এটা একটা উদাহরণ হবে।’ পেঁয়াজের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে অভিযান হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট