চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মন্টু বাদ, নয়া সা. সম্পাদক রেজা

গণফোরামেও অস্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক , ঢাকা অফিস

৬ মে, ২০১৯ | ২:১৮ পূর্বাহ্ণ

গণফোরামের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পরেই দলের পদ পাওয়াকে ঘিরে দলটিতে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। ফলে, ড. কামাল হোসেনের একক নেতৃত্বে চলা দীর্ঘদিনের এ দলটি শিগগিরই ভাঙনের মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত ৩০ ডিসেম্বরের ভোটকে ঘিরে এমনিতেই দলে তীব্র অসন্তোষ ছিল, তারপরে, সদ্য দলে যোগ দেওয়া নেতাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়ে গতকাল নাম ঘোষণার পরেই দলের পুরানো নেতাদের মধ্যে

বিদ্রোহ দেখা দেয়। জানা গেছে, কেন্দ্রিয় কমিটির নাম ঘোষণার পরেই ‘তৃণমূল গণফোরাম’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু করেছেন পদ বঞ্চিত একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা।
জানা গেছে, দলের উচ্চস্তরের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ও তাদের মতামত গ্রহণ ছাড়া মোস্তফা মহসীন মন্টুকে সরিয়ে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক করা হয় অর্থমন্ত্রী শাহ এমএস কিররিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়াকে। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ১১১ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন দলটির বর্তমান নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। এ কমিটিতে যথারীতি গণফোরামের সভাপতির দায়িত্বে পুর্ণবহাল হয়েছেন প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। ড. রেজা গত ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গণফোরামে যোগ দেন। এরপর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিলেও পরাজিত হন। একইভাবে, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক আবু সাইয়িদকে করা হয়েছে এক নম্বর নির্বাহী সভাপতি। তিনিও কিছুদিন আগে গণফোরামে যোগ দিয়েছেন। দ্বিতীয় নির্বাহী সভাপতি করা হয়েছে অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীকে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে কোষাধ্যক্ষ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, সাংস্কৃতি সম্পাদক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদককের পদ ফাঁকা রাখা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকা মোস্তফা মহসীন মন্টুর জায়গা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির ১ নম্বর সদস্য পদে। তবে দলটির সাবেক প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিককে কোনো পদে রাখা হয়নি।
গত ২৭ এপ্রিল গণফোরামের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই কাউন্সিলররা এই নেতৃত্ব নির্ধারণ করেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘এই কমিটি একবছর দায়িত্ব পালন করবে। এই সময়ের মধ্যে একটি কাউন্সিল করে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে।’ সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন ড. কামাল হোসেন। পরে নতুন সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়াও বক্তব্য দেন।
এদিকে পদ বঞ্চিত ও কাঙ্খিত পদ না পাওয়া নিয়ে গণফোরামে তৈরি হয়েছে অস্বস্তি। তাই সাবেক সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকা মোস্তফা মহসীন মন্টু ও সাবেক প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক গণফোরামে থাকছেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ‘তৃণমূল গণফোরাম’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল কিংবা অন্য কোন রাজনৈতিক দলে যোগ দেবেন তারা।
এদিকে পুনর্গঠিত কমিটিতে সদস্য করার বিষয়ে জানতে চাইলে গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, বলার কিছু নেই। কারণ আমি দলের জাতীয় কাউন্সিলেও যাইনি এবং সংবাদ সম্মেলনেও যাইনি। পুনর্গঠিত কমিটিতে আপনাকে সদস্য করার হয়েছে, আপনি কি এই পদে থাকবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মনে হয় না। গণফোরামে থাকছেন না, তাহলে কি অন্য রাজনৈতিক দলে যোগ দিচ্ছেন- এই প্রশ্নের প্রেক্ষিতে মন্টু বলেন, সময়ই বলে দেবে।
এদিকে রফিকুল ইসলাম পথিক বলেন, আমি নতুন দল গঠনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। এর নাম হবে ‘তৃণমূল গণফোরাম’। আশা করি, আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দিতে পারব। তৃণমূল গণফোরামের সভাপতি কে হবেন এবং গণফোরামের আরো কেউ কি আপনার সঙ্গে আসবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে পথিক বলেন, সভাপতি কে হবেন, সেটা বলা যাবে না। কারণ অনেক সিনিয়র নেতা আছেন।
অপরদিকে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়া গণফোরামের মোকাব্বির খান গত ২৬ এপ্রিল দলের বিশেষ কাউন্সিলে অংশ নিয়েছিলেন। আর মোকাব্বির খানের মঞ্চে বসা নিয়ে দলের কাউন্সিলরদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এজন্য তখন দল ছাড়ার ঘোষণা দেন রফিকুল ইসলাম পথিক। এছাড়া মোকাব্বির খানের জন্য ওই দিন মোস্তফা মহসীন মন্টুও কাউন্সিলে আসেননি বলে দলটির একটি সূত্রে জানা গেছে।
সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ার পর গণফোরাম ও ঐক্যফ্রন্টে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন মোকাব্বির। এই দলেরই আরেক নেতা সুলতান মনসুর শপথ নিয়ে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন। শপথ নেয়ার কারণে মোকাব্বির খানকেও বহিষ্কার করা হবে বলে মাঝে এমন গুঞ্জন উঠলেও শেষ পর্যন্ত তার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়নি। এরপর মোকাব্বির খানকে শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছিল গণফোরাম। তবে পুনর্গঠিত কটিমিতে মোকাব্বির খানকে সভাপতি পরিষদে রাখায় দলের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণফোরামের এক নেতা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ড. কামাল হোসেন নিজের এবং দলের নীতি বিসর্জন দিয়ে মোকাব্বির খানকে পদ দিয়েছেন। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে সুলতান মনসুর কি দোষ করেছেন। তাকে কেনো দলে পদ দেওয়া হলো না?

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট