চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিশ্ব এইডস দিবস আজ

এইচআইভি’র ঝুঁকি বাড়িয়েছে শিরায় মাদক গ্রহণকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

১ ডিসেম্বর, ২০১৮ | ২:১২ পূর্বাহ্ণ

একটা সময় ছিল যখন স্লোগানই ছিল ‘এইডস মানেই মৃত্যু’। সেই ধারণা এখন পাল্টেছে। বিশেষজ্ঞরা এখন বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেন, এইচআইভি পজেটিভ বা এইডস হওয়া মানেই মৃত্যু নয়। আক্রান্তরা চিকিৎসা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনই করতে পারেন। তবে এজন্যে প্রয়োজন, এইচআইভি পরীক্ষা করা এবং পজেটিভ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া। মরণঘাতী এইডস সম্পর্কে ভয়তাড়িত এমন সুসংবাদ অনেক এইডস আক্রান্ত রোগীর স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিবে, সন্দেহ নেই। এই বাস্তবতায় বিশে^র অন্যান্য স্থানের ন্যায় সারাদেশে আজ পালিত হচ্ছে বিশ^ এইডস দিবস। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য- ‘এইচআইভি পরীক্ষা করুন : নিজেকে জানুন’। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস-এসটিডি প্রোগ্রামের (এএসপি) উদ্যোগে আয়োজিত গত ২৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত কর্মশালায় এএসপির সিনিয়র ম্যানেজার আখতারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। এখনো দেশে এইডস সংক্রমণের হার (দশমিক শুন্য এক শতাংশ) নিয়ন্ত্রিত আছে। বিশেষ করে পতিতাবৃত্তি, শিরায় মাদক গ্রহণ ও সমকামিতার মতো যেসব আচরন এইচআইভি সংক্রমণ ঘটায় সেগুলো এতদিন নিয়ন্ত্রিত ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, এসব আচরণে অভ্যস্তদের মধ্যে তিন দশমিক নয় শতাংশ এইচআইভিতে আক্রান্ত। শিরায় মাদক গ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এইচআইভিতে আক্রান্তের হারও বেড়েছে। কর্মশালায় জানানো হয়, জাতিসংঘের এইডস কর্মসূচির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে এইডসে আক্রান্তের সংখ্যা হওয়ার কথা ১৩ হাজার ২০০ জন। সেখানে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৫৮৬ জন। সেই হিসাবে শনাক্তের বাইরে রয়েছে ৭ হাজার ৬১৬ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে এইডস রোগীর সংখ্যা ১৮৯১, চট্টগ্রামে ১৬৭১, সিলেটে ১০৬২, খুলনায় ৫০৩, বরিশালে ১৩৭, রাজশাহী ১৪৪, রংপুর ৫৩, ময়মনসিং বিভাগে ৬৪ জন রয়েছেন। তবে দেশে এইডসে আক্রান্তদের চিকিৎসা নেওয়ার হার বেড়েছে। সরকারিভাবে এ রোগের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ফলে গত এক বছরে মৃত্যুর সংখ্যাও কমেছে। এখন পর্যন্ত দেশে ৯২৪ জন এইডসে মারা গেছেন।
কর্মশালায় আখতারুজ্জামান বলেন, ২০১৭ সালে নতুন করে এইডসে আক্রান্ত ৮৬৫ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩১ শতাংশ প্রবাসী। এর আগের বছরগুলোতেও প্রবাসীদের আক্রান্তের হার ছিল ৩০ শতাংশের বেশি। তবে প্রবাসীদের অনেকে তাদের এ রোগের বিষয়টি জানেন না। আবার বিদেশে পরীক্ষা করে যাদের এইচআইভি শনাক্ত হয়েছে তাদের অনেকে দেশে ফিরে বিষয়টি গোপন করে জীবনযাপন করেন। ফলে তাদের দ্বারা তার স্ত্রীও আক্রান্ত হন। যদি কোনো নারী এইডসে আক্রান্ত হন তা হলে তার গর্ভের সন্তানও এ রোগ নিয়ে জন্ম নেবে। তবে এ রোগে আক্রান্ত কোনো মা যদি গর্ভাবস্থায় এইচআইভির চিকিৎসা নেন, তা হলে সন্তান সুস্থ হয়ে জন্ম নিতে পারে।
কর্মশালায় জানানো হয়, প্রবাসীদের মাধ্যমে যেন এইডস না ছাড়ায় সে জন্য বিমানবন্দরকে কীভাবে টেস্টের আওতায় আনা যায় তা নিয়ে কাজ চলছে। এ ছাড়া যেসব বিদেশি বাংলাদেশে কাজের জন্য আসেন তাদেরও রক্ত পরীক্ষার আওতায় আনা প্রয়োজন। এছাড়া গত বছরের অক্টোবর থেকে কক্সবাজারে কাজ শুরু করা হয়েছে। সেখানে ২৭৩ জন রোহিঙ্গা এবং ১২৪ জন স্থানীয়সহ মোট ৩৭৪ জনের এইডস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২৩১ জন রোহিঙ্গা এবং ৬৭ জন স্থানীয়সহ মোট ২৯৮ জনকে চিকিৎসার আওতায় আনা হয়েছে।
চট্টগ্রামের কর্মসূচি : বিশ^ এইডস দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব থেকে এক র‌্যালি বের করা হবে। জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন র‌্যালির উদ্বোধন করবেন। র‌্যালিটি আন্দরকিল্লা আড়াইশ শয্যার হাসপাতালে গিয়ে শেষ হবে। সকাল সাড়ে ৯টায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অডিটরিয়ামে এইডস বিষয়ক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. কাশেম এতে প্রধান অতিথি এবং আড়াইশ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন। সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী সভায় সভাপতিত্ব করবেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট