চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সিডর আক্রান্ত ৪১ উপজেলায় ১৭২টি স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ

সৌদি বাদশার ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারঅনুদানে নির্মিত ১৬৪টি শেল্টার হস্তান্তর

এম.জাহেদ চৌধুরী , কক্সবাজার

৩০ এপ্রিল, ২০১৯ | ২:৫৭ পূর্বাহ্ণ

সৌদি আরবের প্রয়াত বাদশা আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের দেয়া ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদানে বাংলাদেশের সিডর আক্রান্ত ১৩ জেলার ৪১টি উপজেলায় ১৭২টি স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়েছে। তন্মধ্যে ১৬৪টি শেল্টার সোমবার ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত হস্তান্তর করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৮টি শেল্টার আগামী জুন মাসে হস্তান্তর করা হবে। ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১৭২টি সাইক্লোন শেল্টারের মধ্যে নির্মিত কক্সবাজারের চকরিয়ায় ২টি ও পেকুয়ার ১টি ভবন সোমবার দুপুরে চকরিয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন মোহনায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে জেলার ৫টির মধ্যে মহেশখালীর ২টি হস্তান্তর করা হয়।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান। প্রধান অতিথি ছিলেন চকরিয়া-পেকুয়া আসনের এমপি জাফর আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী।
এতে বক্তব্য রাখেন, ফায়েল খায়ের কর্মসূচির কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর (আএসডিবি) সুফি মুস্তাক আহমেদ, স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ববধায়ক প্রকৌশলী ও ফায়েল খায়ের কর্মসূচির সমন্বযক মো. রেজাউল করিম, ফায়েল খায়ের কর্মসুচির প্রকল্প পরিচালক (আএমসি) পল নরম্যান বার্ড। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভাইস- চেয়ারম্যান মকছুদুল হক চুট্টু, থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত ) এসএম আতিক উল্লাহ, ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন বাবুলসহ নির্মাণ প্রকল্পের কর্মকর্তারা।
এসময় চকরিয়া নির্মিত বদরখালী এমএস ফাজিল মাদ্রাসা ও সাহারবিল আরকে নুরুল আমিন চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় ভবন কাম সাইক্লোন শেল্টারের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও চাবি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
জানা গেছে, ফায়েল খায়ের প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক কর্তৃক নির্মিত ১৭২টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে ১১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অনুদানের অবশিষ্ট ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ওয়াকফ্ প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের কৃষিসহ অন্যান্য উদ্যোগে সহায়তা করা হয়েছে।
নির্মিত প্রতিটি শেল্টারে দুর্যোগের সময় ২ হাজার মানুষ এবং ৫’শ গবাদি-পশু আশ্রয় নিতে পারবে। এই প্রোগ্রামের প্রতিটি আধুনিক স্থাপনায় ২৪০ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা প্রদানে সহায়ক হবে। এসব শেল্টার ডিজাইন করা হয়েছে প্রতি ঘন্টায় ২৬০ কিমি বেগ পর্যন্ত বায়ু প্রবাহ (ঘূর্ণিঝড়) প্রতিরোধে সক্ষম করে। ভবনগুলোতে পরিবেশ বান্ধব ডিজাইন, সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে বিদ্যূৎ ব্যবস্থা, বীকন লাইট, উন্নতমানের আসবাবপত্র সংযোজন ছাড়াও সুপেয় পানি সরবরাহ এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখায় উপকূলীয় অঞ্চলে দুর্যোগের সময় পানির অভাব অনেকটাই পুরোন হবে।
আরো জানা গেছে, এই ভবনগুলো নিয়মিত পরিচর্যা করলে ভবনের স্থায়িত্ব ১’শ বছরের অধিক ধরে রাখা যাবে। সিডর আক্রান্তদের পুনবাসন ও জীবন ধারণ প্রকল্পের আওতায় ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ৪টি এনজিও’র নিকট বরাদ্দ করা হয়েছে। এই বরাদ্দে বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসনের অধিনে একটি ভিন্ন প্রাতিষ্টানিক কাঠামো “ফায়েল খায়ের ওয়াকফ” নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর অধিনে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৮৬ হাজার ৭৩৩জন কৃষি, মৎস্য ও ক্ষুদ্র ব্যবসায় বিনিয়োগকারী উপকৃত হয়েছে।
নির্মিত ১৭২ টি স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে ৪১ হাজার ২’৮০ শিক্ষার্থী, দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয় নিতে পারবে ৩ লাখ ৪৪ হাজার মানুষ ও ৮৬ হাজার গবাদি-পশু। এতে প্রাকৃীত দুর্যোগকালে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি যেমনি হ্রাস পাবে ঠিক তেমনি শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা উপকুলের ছেলে-মেয়েরা উপকৃত হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট