চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ফেনীর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি

নুসরাত হত্যার নির্দেশনা দেন অধ্যক্ষ সিরাজ, জড়িত ১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা অফিস

২৯ এপ্রিল, ২০১৯ | ২:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার নির্দেশনা দেওয়ার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে পাঁচ ঘণ্টা ফেনীর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন সিরাজ। মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল সিরাজ-উদ-দৌলার জবানবন্দির কথা সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, অধ্যক্ষ সিরাজ স্বীকার করেছেন, কারাগারে নূরউদ্দিন ও শামীম দেখা করতে গেলে তিনি তাদের নির্দেশ দেন- তারা যেন নুসরাতকে মামলা তুলে নিতে বলে, সে তাতে রাজি না হলে তাকে আগুনে পুড়িয়ে যেন আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়।
এদিকে, নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় মোট ১৬ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তাদের সবাইকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। আগামী মে মাসেই মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার। পিবিআই প্রধান বলেন, নুসরাত হত্যা ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১৬ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। একে একে সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে গতকাল সকাল পর্যন্ত ৯ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামিদের মধ্যে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা ও শাহাদাত হোসেন শামীমকে নতুন করে রিমান্ডে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছেন। তাই, আগামী মে মাসেই এই হত্যা মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়া হবে।
বনজ কুমার বলেন, এর আগে অনেক মামলার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কেউ বিদেশে রয়েছে, কেউ পলাতক রয়েছে, আবার কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে আদালতে বিচার বিলম্বিত হয়। নুসরাত হত্যা মামলার ক্ষেত্রে সব আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের সবাই এখন কারাগারে রয়েছেন। তাই এই মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা হবে বলে আশা করছি।
প্রসঙ্গত গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে মাদরাসার ছাদে ডেকে নিয়ে রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায় মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা। এর আগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা প্রত্যাহারের জন্য রাফিকে চাপ দেয় তারা। পরে আগুনে ঝলসে যাওয়া রাফিকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে নুসরাত জাহান রাফি মারা যায়। নুসরাত হত্যা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা এবং প্রভাষক আফসার উদ্দিন বর্তমানে কারাগারে আছেন।
এদিকে নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা ও প্রভাষক আফসার উদ্দীনের এমপিও স্থগিত করা হয়েছে। নুসরাতের মৃত্যুর পরপরই এই দুই শিক্ষকের এমপিও স্থগিতের পদক্ষেপ নিতে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে গত ১১ এপ্রিল চিঠি পাঠানো হয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে। তার ১৯ দিন পর গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা এবং ইংরেজির প্রভাষক আফসার উদ্দীনেরও এমপিও স্থগিতের কথা জানানো হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট