দেশের শীর্ষ আলেমরা ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে সৃষ্ট অস্থিরতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে চান। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আলেমদের বক্তব্য তুলে ধরে বিশেষ চিঠিও দেয়া হবে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসায় শনিবার (৫ ডিসেম্বর) শীর্ষ আলেমদের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

কওমি মাদ্রাসার সম্মিলিত শিক্ষা বোর্ড- আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে বৈঠকে  চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রতিনিধি মুফতি জসীমুদ্দীন, মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, আল্লামা আব্দুল হালীম বোখারীর প্রতিনিধি মাওলানা আবু তাহের নদভী, মুফতি রুহুল আমীন, মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম, আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদি, আল্লামা আব্দুল হামিদ, আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর প্রতিনিধি মাওলানা নাজমুল হাসান, আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মুফতি মনসুরুল হক, আল্লামা সাজিদুর রহমান, মাওলানা আব্দুল মতিন বিন হুসাইন, মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, মুফতি আরশাদ রহমানী, মুফতি মুহাম্মাদ আলী, মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে দেশের প্রতিনিধিত্বশীল শীর্ষ আলেমরা বিভিন্ন প্রস্তাব পেশ করা হয়। পরে সবার সম্মতিতে ৫ দফা প্রস্তাব পাস হয়। এছাড়া বৈঠকে ভাস্কর্য নির্মাণ, ওয়াজ মাহফিলে মাইকের সীমিত ব্যবহার, আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে কটূক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আপত্তি করা হয়।

বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবনাগুলো হল-

প্রস্তাবনা-১: ইসলামে যেকোনও উদ্দেশ্যে মানবমূর্তি ও ভাস্কর্য তৈরি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কোনো মহৎ ব্যক্তি ও নেতাকে মূর্তি বা ভাস্কর্য স্থাপন করে শ্রদ্ধা জানানো শরীয়তসম্মত নয়। এতে মুসলিম মৃত ব্যক্তির আত্মার কষ্ট হয়। কারো প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তার স্মৃতিকে জাগ্রত রাখতে মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ না করে, শতকরা ৯২ ভাগ মানুষের বিশ্বাস ও চেতনার আলোকে কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত কোনো উত্তম বিকল্প সন্ধান করাই যুক্তিযুক্ত।

প্রস্তাবনা-২: আমরা নবী করিম (সা.)-এর অবমাননা, বিষোদগার, ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন ইত্যাদির তীব্র নিন্দা জানাই৷ বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নাশের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে বিশ্বনবী (সা.)-এর প্রতি অবমাননাকর আচরণের ওপর কঠোর নজরদারি এবং দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এসব অপকর্ম বন্ধ করা হোক।

প্রস্তাবনা-৩: বিগত সময়ে দ্বীনি আন্দোলনে গ্রেপ্তারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তিদান ও মামলা প্রত্যাহার করা হোক। এ সংক্রান্ত বিষয়ে সারাদেশের আলেম-ওলামা, ইমাম-খতিব ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করা হোক। ধোলাইপাড় চত্বরের পাশে ক্ষতিগ্রস্ত পুনঃনির্মিত মসজিদ নামাজের জন্য অবিলম্বে উন্মুক্ত করে দেয়া হোক।

প্রস্তাবনা-৪: সম্প্রতি শব্দদূষণ ও জনদুর্ভোগের অজুহাতে দ্বীনি মাহফিলে লাউড স্পিকার ব্যবহারে প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টির তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। অথচ সাধারণ শব্দদূষণ, উচ্চস্বরে গান-বাজনা ইত্যাদি বিষয়ে কোন প্রশাসনিক উদ্যোগ নেই বললেই চলে। কেবল ওয়াজ-মাহফিল নিয়ে শব্দদূষণের অজুহাতে বিশেষ নির্দেশনা অনভিপ্রেত। অতএব, জনগণকে কল্যাণের পথে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে সকল দ্বীনি মাহফিল যথানিয়মে অনুষ্ঠানের অবাধ সুযোগ প্রদান করা হোক।

প্রস্তাবনা-৫: যে সকল বিষয় শরিয়তে নিষিদ্ধ ও হারাম, সেসব বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সঠিক বক্তব্য তুলে ধরা আলেমদের দায়িত্ব। অথচ এক শ্রেণির মানুষ আলেমদের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও দায়িত্বহীন আচরণ করছে। কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনাশের উস্কানি দিচ্ছে। উস্কানিমূলক বক্তব্য, অবমাননাকর মন্তব্য, উগ্র স্লোগান দিয়ে মিছিল- মিটিং সমাজে অস্থিরতা বৃদ্ধি করবে। তাই এসবের খোঁজ-খবর রাখা ও শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা সরকার এবং প্রশাসনের দায়িত্ব।

পূর্বকোণ/আরপি