চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বন্ধ হয়নি মাংস আমদানি

আদালতের মাধ্যমে পাঁচ মাসে ­চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হয়েছে ­৯৭৬ টন হিমায়িত মাংস

বন্ধ হয়নি মাংস আমদানি

সারোয়ার আহমদ

২৭ নভেম্বর, ২০২০ | ৭:১৯ অপরাহ্ণ

দেশি খামারিদের গবাদিপশু পালনে উৎসাহিত করতে মাংস আমদানিকে নিরুৎসাহিত করছে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো। কিন্তু তারপরেও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত পাঁচ মাসে ২৭টি চালানে খালাস হয়েছে ৯৭৬ টনের বেশি হিমায়িত মহিষের মাংস। চাহিদা থাকায় আমদানিকারকেরাও আইনের ফাঁক- ফোকরে কৌশলে আমদানিকৃত হিমায়িত এই মাংস খালাস করে বিক্রি করছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে হিমায়িত মাংস আমদানি করা হলেও সিংহভাগই আসছে ভারত থেকে। চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মাংস আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দেশের পোলট্রি ও ডেইরিশিল্প ধ্বংসের সম্মুখীন হবে। হুমকির মুখে পড়বে এই খাতে বিনিয়োগকারীরা। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পসহ সরকারি নানা উদ্যোগের ফলে দেশে গবাদিপশু পালন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে বিদেশ থেকে আমদানি করা হিমায়িত মাংস আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশীয় খামারিরা টিকে থাকতে পারবে না। কারণ আমদানি করা হিমায়িত মাংসের দাম দেশীয় মাংসের তুলনায় অনেক কম।

খবর নিয়ে জানা যায়, আগে হিমায়িত মাংস আমদানির জন্য জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে আমদানির অনুমতি নেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। পরে আমদানি মাংস কোয়ারেন্টিনে পরীক্ষার পর ছাড়পত্র দেয়া হতো। কিন্তু গত মে মাসের পর থেকে হিমায়িত মাংস আমদানিকারকদের আমদানি অনুমতি দেওয়া বন্ধ রেখেছে জলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। মুলত দেশীয় খামারিদের উৎসাহী করতেই সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এদিকে, ‘হিমায়িত মাংস আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য নয়’ এমন আমদানি নীতি চালু থাকায় আমদানিকারকরা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হিমায়িত মাংস আমদানি অব্যাহত রাখে। আমদানি নিষিদ্ধ না হলেও প্রাণীসম্পদ দপ্তর থেকে অনুমতি না দেয়ায় আমদানিকারকরা প্রথমেই মাংস আমদানি করে ফেলে। এরপর আদালতের দ্বারস্থ হয়ে খালাসের অনুমতি নিয়ে আমদানিকারক মাংসের চালান বন্দর থেকে খালাস করে নিয়ে যায়।

কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, কেবল চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ২৭টি চালানেই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৯৭৬ টনের বেশি হিমায়িত আমদানি মাংস খালাস হয়। এর মধ্যে কাস্টমসের দুই এইচএস কোড অনুযায়ী হাড়ছাড়া মাংস আসে ৭২৫ টনের বেশি। আর কলিজাসহ অন্যান্য অংশের মাংস আসে ২৫০ টনের বেশি। এই ৯৭৬ টন হিমায়িত আমদানি মাংস থেকে দুই এইচএস কোডে সরকারি রাজস্ব আয় হয়েছে ৫ কোটি ৫০ লক্ষ ২৮ হাজার টাকার বেশি অর্থ। এখনও চট্টগ্রাম বন্দরে আরো ১০ থেকে ১৫টি চালান রয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এগুলোও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আদালতের অনুমতি নিয়ে খালাস হয়ে বাজারে বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হিমায়িত মাংস আমদানিকারক জানান, আমদানি নীতি অনুযায়ী হিমায়িত মাংস আমদানি নিষিদ্ধ নয়। যে সব মাংস দেশে আমদানি হয় আসে সেগুলো খুবই স্বাস্থ্যসম্মত। দেশে ওই মাংস আমদানির পরে গুণাগুণ পরীক্ষা করেই খালাস করা হয়। তিনি বলেন, ভারত শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর ৭০টি দেশে মাংস রপ্তানি করে। ওইসব রপ্তানিকারকও মুসলমান। ভারতের হিমায়িত মাংস মালয়েশিয়া, ওমান, দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশে রপ্তানি হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আমদানিকারক বলেন, বাংলাদেশ সরকার হয় হিমায়িত মাংস আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করুক অথবা হিমায়িত মাংস আমদানি পদ্ধতি সহজ করুক, আমরা এটাই চাই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নব্বইয়ের দশকে দেশের ৭০ ভাগ মাংসের চাহিদা পূরণ করতো বিদেশ থেকে আমদানি করা হিমায়িত মাংস। বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে দেশে পাঁচ লাখেরও বেশি খামার গড়ে ওঠায় পাল্টে গেছে সে চিত্র। এখন মাংস উৎপাদনে দেশ শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, চাহিদা মিটিয়ে সীমিত পরিমাণে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। খাতসংশ্লিষ্টদের শঙ্কা, ক্রমবিকাশের এ সময়ে বিদেশ থেকে অবাধে গরু-মহিষের হিমায়িত মাংস আমদানি শুরু হলে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠা খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট