চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সংস্কারপন্থী জামায়াতের নতুন মঞ্চ : জনআকাক্সক্ষার বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক , ঢাকা অফিস

২৮ এপ্রিল, ২০১৯ | ৩:১২ পূর্বাহ্ণ

জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে ‘জনআকাক্সক্ষার বাংলাদেশ’ নামে নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। এর উদ্যোক্তারা মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে প্রতিশ্রুত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে পাঁচটি কমিটিও গঠন করেছেন। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্যোগের আত্মপ্রকাশের কথা জানান মজিবুর রহমান মঞ্জু। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে জামায়াতে ইসলামীতে বিভক্তির অভিযোগ এনে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় মঞ্জুকে। সংবাদ সম্মেলনে মঞ্জু বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের আকাংক্ষাকে ধারণ করে প্রতিশ্রুত বাংলাদেশ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হলে জাতীয় জীবনের সব অর্জন ও ঐক্যের জায়গাগুলো সমন্বিত করে নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি প্রস্তুত করা প্রয়োজন। প্রচলিত কোনও রাজনৈতিক ধারা বা দলের অনুসারী কিংবা অনুরক্ত নয়, এটা সম্পূর্ণ স্বাধীন উদ্যোগের একটি স্বতন্ত্র ধারা। জামায়াতে ইসলামীসহ বিদ্যমান কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই। রাজনৈতিক দল হবে সত্যিকার অর্থে ইনক্লুসিভ এবং একটি ইতিবাচক বাংলাদেশ গড়ার নতুন রাজনৈতিক কার্যক্রম এটি।’ এ রাজনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে সরকারের কোনও সম্পর্ক আছে কিনা জানতে চাইলে মঞ্জু বলেন, ‘অনেকে এই উদ্যোগের সঙ্গে সরকারের যোগসাজশ থাকার সন্দেহ করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের সঙ্গে সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই। কারও মদদ বা উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে আমরা আসিনি। অনেক বাধা-বিপত্তি এসেছিল আমাদের ওপর। সামনেও আসবে, তারপরও আমরা এগিয়ে যাবো।’
এ রাজনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল থেকে পদত্যাগকারী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের কোনও সম্পর্ক আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে তিনি যুক্ত নন। তবে আমরা দেশে-বিদেশে অনেকের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছি।’
কোনও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠন করা হবে না উল্লেখ করে মঞ্জু বলেন, ‘আমাদের অনুপ্রেরণার উৎসস্থল ইসলামের উদার ঐতিহ্য ও সাম্যের দর্শন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের উল্লিখিত মূলনীতি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ইনসাফ আমাদের জাতীয় ঐক্যের পাটাতন।’
স্বাধীনতাযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকার সমালোচনা করে দলটির সাবেক এ নেতা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র বিরোধিতাকারী দল না হলেও পরবর্তী সময়ে তাদের দলীয় ভূমিকা নিয়েই বেশি প্রশ্ন ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের ভূমিকা দায় স্বীকারের দাবিকে বরাবরই অগ্রাহ্য করেছে।’
নতুন দলের গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে মঞ্জু বলেন, ‘আগামীতে আমরা সংগঠনের নাম, কাঠামো, কর্মপদ্ধতি ও লক্ষ্য চূড়ান্ত করবো। সেই লক্ষ্যের পাঁচটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তা হলো ‘রাজনৈতিক প্রস্তাবনার খসড়া কমিটি, জনসংযোগ ও অন্তর্ভুক্তি তত্ত্বাবধান, গণমাধ্যম, সামাজিক মাধ্যম ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক, অর্থ সংগ্রহ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা এবং পরিকল্পনা, সাংগঠনিক কাঠামো প্রস্তাবনা, কর্মকৌশল এবং পরিকল্পনা কমিটি গঠন।’
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘ঔপনিবেশিক শাসনামলেও দুবার গভীর সঙ্কটকালে জাতিকে নতুন পথ দেখিয়েছিল মুসলিম লীগ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ। আর স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রান্তিকালে হাল ধরেছিলেন জিয়াউর রহমান। প্রায় চার যুগ পরে আজ আবার প্রিয় মাতৃভূমি তেমন আরেক বাঁক পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে। একাত্তরে যে আকাংক্ষার ভিত্তিতে স্বাধীন হয়েছিলো বাংলাদেশ, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেওয়ার দায়িত্ব বোধ করছি আমরা।’
জামায়াতের ভেতর সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করছেন কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অতীতে যেখানে ভূমিকা রাখতে চেয়েছিলাম সেখানে যখন নেই, সেই বিষয়ে কথা না বলি। আমরা নতুন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছি। অতীতের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা কোনও তত্ত্বের কথা বলবো না, অধিকারের কথা বলবো।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মেজর (অব.) আবদুল ওহাব মিনার, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জুবায়ের আহমেদ ভুঁইয়া, মাওলানা আবদুল কাদের, মাওলানা তাজুল ইসলাম, গোলাম ফারুক, গৌতম দাস, ড. কামাল উদ্দিন প্রমুখ। তবে মঞ্চে না থাকলেও আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অধ্যাপক দিলারা চৌধুরীর নাম ছিল।
এদিকে গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হকের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, যে নামেই হোক, জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করার অধিকার নেই।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, খোলস পাল্টে অন্য নামে তারা রাজনীতি করতে চাচ্ছে। আমি মনে করি, তাদের কোনো নৈতিক অধিকার থাকতে পারে না। দু’টি বিষয় খুব পরিষ্কার, ’৭১ সালে তাদের অপকর্মের জন্য জামায়াতে ইসলামী আজ পর্যন্ত দলীয়ভাবে দায় স্বীকার করেনি এবং ক্ষমা প্রার্থনাও করেনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট