চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

নিপাহ মহামারি নিয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক করলো মার্কিন গবেষক দল

নিপাহ মহামারি নিয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক করলো মার্কিন গবেষক দল

নিজস্ব প্রতিবেদক

৬ নভেম্বর, ২০২০ | ৫:২১ অপরাহ্ণ

‘আরেকটি মহামারির কারণ হতে পারে’ নিপাহ ভাইরাস। বাংলাদেশ, ভারত তথা এশিয়া অঞ্চলের এই ভাইরাস নিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্য প্রসেডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস’ বা পিএএনএস-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় মার্কিন গবেষকরা এই সতর্কবার্তা দেন।

বিজ্ঞানীরা ৬ বছর ধরে বাংলাদেশের ২ হাজার ৭০০ বাদুড়ের নমুনা সংগ্রহ করে ভাইরাসটির এমন স্ট্রেইন পেয়েছেন যা এই বিপদের কারণ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এলার্জি এন্ড ইনফেক্সশাস ডিজিজেস-এর পরিচালক ও বিখ্যাত সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এন্থনি ফাউচি গবেষণা প্রতিবেদনটি সম্পাদনা করেছেন। গত জানুয়ারিতে প্রতিবেদনটি গ্রহণ করার পর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি তা অনুমোদন দেয়া হয়। গত ২ নভেম্বর সেটি জার্নালে প্রকাশ করা হয়।

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, আগের ধারণার চাইতে বেশি সংক্রামক এই ভাইরাস। এটি যেকোনো সময়, যেকোনো অঞ্চলের জনবসতির ভেতর ছড়িয়ে পড়তে পারে। ভাইরাসটি দিনে দিনে মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে বলে সংক্রমণের ‘সহজ স্ট্রেইন’ তৈরি করে ফেলতে পারে!

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছর বাংলাদেশ-ভারতের ঘনবসতি অঞ্চলে নিপাহ ভাইরাস প্রায় দেখা দেয়। এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতী এই রোগটির কোনো প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি। ২০১৮ সালে কেরালায় আক্রান্ত হওয়া ১৮ জনের তার ১৭ জনই মারা গেছেন!’

বাংলাদেশে প্রথম ২০০১ সালে নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়। প্রায় প্রতিবছরই এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালের তথ্যনুযায়ী, ১৮ বছরে দেশে ৩০৩ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই মারা গেছেন। এ রোগে আক্রান্ত বেঁচে থাকা রোগীরা দীর্ঘমেয়াদী নানা ধরনের স্নায়ুগত জটিলতায় ভুগে থাকে। প্রাণঘাতী সংক্রামক ব্যাধির একটি হিসেবে নিপাহ ভাইরাস অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশই মারা যান।

বাংলাদেশে শীতকালে খেজুরের গাছ কেটে হাঁড়ি বেঁধে রস সংগ্রহ করা হয়। ওই হাঁড়ি থেকে রাতে বাদুড়ও রস পান করে। এ সময় বাদুড়ের লালা থেকে নিপাহ ভাইরাস হাঁড়ির রসে চলে যায়। বাদুড়ের প্রস্রাবের মাধ্যমেও ভাইরাসটি খেজুরের রসে মেশে। এছাড়া গাছে বাদুড়ে খাওয়া ফলেও নিপাহ ভাইরাস থাকতে পারে। ওই রস ও ফল খেলে মানুষের শরীরে এ ভাইরাসের সংক্রমণ হয়। তারপর আক্রান্ত রোগী থেকে সুস্থ মানুষে ছড়ায় নিপাহ ভাইরাস। ভাইরাসটির কারণে জ্বর, মাথা ধরা, পেশির যন্ত্রণা, বমি বমি ভাব থেকে শুরু করে ফুসফুসের সংক্রমণ পর্যন্ত হতে পারে।

চিন্তা যেখানে: এতদিন বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, যেসব অঞ্চলে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়, সাধারণত রোগটি সেসব জায়গায় হয়। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, যেসব জায়গায় খেজুর গাছ নেই সেখানেও রোগটি দেখা গেছে। এমনকি রস পান করেননি এমন মানুষও রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন!

গবেষণাটিতে নেতৃত্ব যুক্তরাষ্ট্রের ইকোহেলথ এলায়েন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাথন এপস্টেইন দিয়েছেন। তিনি বলছেন, ভাইরাসটি বারবার দরজায় কড়া নাড়ছে। এটি বারবার বাদুড় থেকে মানুষে চলে যাচ্ছে। করোনার মতো মানুষ থেকে মানুষ সহজে হয়তো ছড়াচ্ছে না; কিন্তু আমরা সেই শঙ্কা করছি। এতে এমন জেনেটিক স্ট্রেইন বা ভ্যারিয়েন্ট থাকতে পারে যা খুব সহজে মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে বড় ধরনের মহামারি সৃষ্টি হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে রোগটি যেকোনো অঞ্চলে ছড়াতে পারে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যেকোনো একটি অঞ্চল থেকে নিপাহ ভাইরাস ছড়াতে পারে; কিন্তু আমরা বিষয়টিতে গভীর মনযোগ দিচ্ছি না। তাই ভাইরাসটি বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ালেও তার জন্য পুরো বিশ্ববাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।

এর আগের একটি গবেষণায় বলা হয়, ‘নিপাহ বেল্ট’ নামে নির্দিষ্ট মৌসুমে (এপ্রিল থেকে নভেম্বর) নিপাহ ভাইরাস প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে ছড়ায়।

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট