চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

দেশে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চালানো হচ্ছে: রাণা দাশগুপ্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩ নভেম্বর, ২০২০ | ১০:৫২ অপরাহ্ণ

দেশে সংখ্যালঘু শুন্য করার ঘৃণ্য চক্রান্ত বাস্তবায়নে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চালানো হচ্ছে অভিযোগ করেছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্ত । আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরে  তিনি এ অভিযোগ করেন।

লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ মাইনোরিটি ওয়াচ ও গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর সাত মাসের ‘সাম্প্রদায়িক চালচিত্র’ তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, এই সময়ে দেশে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ১৭ জন হত্যা, ১০ জন হত্যাচেষ্টার, ১১ জনকে হত্যার হুমকির, ৩০ জন ধর্ষণ-গণধর্ষণ ও নির্যাতন, ছয় জন ধর্ষণচেষ্টা, তিনজন শ্লীলতাহানির কারণে আত্মহত্যা, ২৩ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন।

পাশাপাশি ২৭টি প্রতিমা ভাঙচুর, ২৩টি মন্দিরে হামলা-ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ, ২৬টি বসতবাড়ি, জমি ও শ্মশান উচ্ছেদের ঘটনা, পাঁচটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দখলের ঘটনা, ৭৩টি উচ্ছেদ চেষ্টা, ৩৪ জনকে দেশত্যাগের হুমকি, ৬০টি পরিবারকে গ্রামছাড়া করা, চারজনকে ধর্মান্তরিত হতে হুমকি, সাতজনকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিতকরণ, ৮৮টি বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট, ২৪৭ জনকে দৈহিক হামলা, ২০টি পরিবারকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ত্রাণ বিতরণকালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহ্বান জানানো এবং মহানবীকে কটূক্তির মিথ্যা অভিযোগে চারজনকে আটক করা হয়েছে।

রাণা দাশগুপ্ত বলেন, এসব সন্ত্রাসের কোনো-কোনোটির সাথে সন্ত্রাসীরা সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীর পরিচয় দিয়েছে। এই চালচিত্র সম্পূর্ণ চিত্র নয়, সমগ্র ঘটনার আংশিক মাত্র। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বাংলাদেশে নিত্যদিনের স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মূল লক্ষ্য ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ভীত করে দেশত্যাগে বাধ্য করা যাতে দেশটি সংখ্যালঘু শূন্য হয়ে পড়ে।

“পাকিস্তানি আমলের সাম্প্রদায়িক মহল বিশেষের এই ঘৃণ্য চক্রান্ত স্বাধীন বাংলাদেশেও অব্যাহত রয়েছে। এ চেষ্টা ফলপ্রসূ হলে দেশ ও জাতি গভীর সংকটে নিপতিত হবার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে।” ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে টার্গেট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মকে হেয় করে ও ধর্মীয় অনুভূতিতে প্রতিনিয়ত আঘাত করে বল্গাহীনভাবে বিভিন্ন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে রাণা দাশগুপ্ত বলেন, “আগে আমরা অনেক সাধারণ কর্মসূচি পালন করেছি। এত ঘটনা ঘটছে, সরকারের টনক নড়েনি। কোনো রাজনৈতিক দলেরই টনক নড়েনি। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা সামনে এগুতে চাই।

“১৯৯০-৯১, ২০০১ থেকে ২০০৬ রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িকতার কথা আমরা ভুলিনি। ২০০৮ পরবর্তী সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িকতাকে পেছনে ফেলে এগুনোর চেষ্টা করলেও ২০১১ থেকে অদ্যাবধি চলমান রাজনৈতিক ও সামাজিক সাম্প্রদায়িকতার মুখোমুখি আমরা।”

তিনি বলেন, মাওলানা যুবায়ের আহমেদ, মাওলানা খান মোহাম্মদ আবুবকর সিদ্দিক, ইসমাইল আবীর বিভিন্ন ধর্মীয় সভা, কথিত অনলাইন প্রশিক্ষণ, ইনস্টিটিউশন স্থাপন ও কথিত নওমুসলমানদের পুনর্বাসন উদ্যোগের মাধ্যমে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের নিশ্চিহ্ন করার অভিপ্রায়ে ইসলামভিন্ন অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত হেনে আতঙ্ক ও উদ্বেগ সৃষ্টি করে চলেছে।

“অন্যদিকে ফেষবুক আইডি হ্যাক করে ভুয়া পোস্ট দিয়ে ধর্ম অবমাননার জিগির তুলে দিনাজপুরের পার্বতীপুর ও কুমিল্লার মুরাদনগুরে সংখ্যালঘু এলাকায় আক্রমণ অগ্নিসংযোগ নারী নির্যাতন ও ভিকটিমদের গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে।”

আন্তর্জাতিক যুদ্ধারপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর বলেন, “২৬ থেকে ২৮ অক্টোবর তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে ধর্ম অবমাননার কথিত দায়ে ছয়জন ছাত্রের ছাত্রত্ব সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একজনের সন্ধান মিলছে না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কুলশ বরণ চক্রবর্তীকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে।

“২৯ অক্টোবর লালমনিরহাটের পাটগ্রামে আবু ইউনুস মো শহিদুন্নবী নামের ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিতে কল্পিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পিটিয়ে ‍ও পুড়িয়ে হত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এসব দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে সাম্প্রদায়িক মহলবিশেষের পরিকল্পিত অভিসন্ধি। অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে ভয়াবহ পরিস্থিতি হবার সম্ভাবনা আছে।”

সংবাদ সম্মেলন থেকে আট দফা দাবিতে শনিবার সকালে ১০টা থেকে ১২টা সারা দেশে জেলা, উপজেলা, মহানগর ও বিভাগীয় সদরে নির্ধারিত স্থানে গণঅবস্থান এবং বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

ধর্ম অবমাননার জিগির তুলে দিনাজপুর, পার্বতীপুর ও কুমিল্লার মুরাদনগরে সংখ্যালঘু এলাকায় আক্রমণ-অগ্নিসংযোগ নারী নির্যাতন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব বাতিলের অপপ্রয়াসের প্রতিবাদে ও গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে, অধ্যাপক কুশল চক্রবর্তীকে হত্যার হুমকি, ধর্মপ্রাণ শহিদুন্নবী জুয়েলকে পুড়িয়ে হত্যার প্রতিবাদে এবং সংখ্যালঘুর সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন এই আট দাবি পরিষদের।

সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের নেতা চন্দন বিশ্বাস, বরুণ কান্তি চৌধুরী, প্রদীপ চৌধুরী, দোলন মজুমদার, সুভাষ দাশ, অসীম দেব, হরিপদ চক্রবর্তী, অশোক চক্রবর্তী, স্বরুপ পাল ও রুবেল পাল উপস্থিত ছিলেন। তথ্যসূত্র:বিডিনিউজ

পূর্বকোণ / আরআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট