চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিতে দাতাদের প্রতি বাংলাদেশের আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ অক্টোবর, ২০২০ | ১১:০০ অপরাহ্ণ

আন্তর্জাতিক দাতা সম্মেলনে বাংলাদেশ বলেছে, বিশ্ব সম্প্রদায় রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে ঢাকার প্রতি যে প্রস্তাবই নাজিল করুক না কেন, মিয়ানমারের সঙ্গে তা সমন্বয়ের উদ্যোগ না নিলে সব প্রচেষ্টা বা বিনিয়োগ মাঠে মারা যাবে। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে অনুরোধ জানিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশের ব্যাপক চেষ্টা সত্ত্বেও গত ৩ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। প্রত্যাবাসন না হওয়ার কারণে রোহিঙ্গারাও হতাশ। তারা তাদের জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। ওই অনিশ্চয়তা এবং হতাশা থেকে তারা মানবপাচার, উগ্রবাদ, মাদক চোরাচালানসহ অন্যান্য সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার ওই ভার্চ্যুয়াল সম্মেলন শেষে আলাদা ব্রিফিংয়েও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আজ কিছু বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্পষ্ট বার্তা দেয়া হয়েছে। আমরা বলেছি, রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান প্রত্যাবাসন। ভিন্ন কিছু নয়। আমরা বলেছি, বিশ্ব সম্প্রদায় যদি আমাদের বক্তব্য বা উদ্বেগ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা না নেয় তাহলে বাংলাদেশ তার সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার স্বার্থে কোন সিদ্ধান্ত নেবে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাউন্ডারি বা বেড়া দেয়া এবং এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাষানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত সরকার বাস্তবায়ন করতে চলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভাষানচর নিয়ে শক্ত বিরোধিতা নেই। তাছাড়া অনেক রোহিঙ্গা পরিবার সেখানে যেতে আগ্রহী। আবহাওয়া ঠিক হলেই স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু হবে। সরকার কাউকে ভাষানচরে জোর করে পাঠাবে না। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্মভিটায় স্থায়ীভাবে ফেরার পরিবেশ তৈরিতে সেফ জোন প্রতিষ্ঠাসহ জাতিসংঘে যে ৫ দফা প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে দিয়েছিলেন তা-সহ রাখাইনকে নিরাপদ করতে যেসব গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ রয়েছে তার আলোকে এ সংকটের স্থায়ী সমাধানে ঢাকা জোর দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এমন দাতা সম্মেলন আগেও হয়েছে। এটি ভাল উদ্যোগ, কারণ গত মার্চে সর্বশেষ দাতা সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তার জন্য ৯০০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল সংগ্রহের যে টার্গেট এবং অঙ্গীকার মিলেছিল তার অর্ধেক অর্থও মিলেনি। জাতিসংঘ ওই তহবিল সংগ্রহ করার কারণে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী মিস্টার আলম বলেন, দাতা সম্মেলনে বাংলাদেশ বেশ কড়া বার্তা দিয়েছে। কারণ ২০১৭ সালে বড় আকারে রোহিঙ্গা ঢল এবং তাদের মানবিক বিবেচনায় আশ্রয়ে যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে তা কেবল বাংলাদেশই টের পাচ্ছে। সেটাই এবার বিশ্বকে বলা হয়েছে। ঢাকা স্পষ্ট করে মিয়ানমারের সেই সব বন্ধু রাষ্ট্র এবং দেশটির ভবিষ্যতের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদেরকে ‘গুড অফিস’ ব্যবহার বুঝাতে করে কিংবা প্রয়োজনে চাপ বাড়িয়ে সংকটটির সমাধানে বাধ্য করতে বাংলাদেশ অনুরোধ করেছে।

মিয়ানমারে চীন ও পশ্চিমা বিনিয়োগ বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই এ অঞ্চলের প্রত্যেকটি দেশ দারিদ্রতা থেকে বেরিয়ে আসুক। বেকারত্ব নিরসন হোক। এ জন্য আমরা যে কোন বিনিয়োগকে উৎসাহিত করি। অনেকে অনেকভাবে এখানে কাজ করছে। এ নিয়ে তিনি নতুন করে মন্তব্য করতে চান না বলে জানান। মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্য এবং মিয়ানমারের বাইরে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে চরম ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নে জরুরী মানবিক সহায়তা নিশ্চিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভার্চ্যুয়ালি আন্তর্জাতিক দাতা সম্মেলন হয়। এতে বিভিন্ন দেশ এবং দাতা সংস্থা তাদের নিজ নিজ অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর যৌথভাবে ওই সম্মেলনের আয়োজন করে। বাংলাদেশও রোহিঙ্গা সঙ্কটের বড় ভিকটিম হিসাবে এতে অংশ নেয়।

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট