চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

জুমার দিনে আল্লাহ জগৎ সৃষ্টির পূর্ণতা দান করেছিলেন

অনলাইন ডেস্ক

১৬ অক্টোবর, ২০২০ | ১:০৬ অপরাহ্ণ

জুমা নামে পবিত্র কোরআনে একটি সূরা আছে। ইসলাম ধর্ম মতে এইদিনে মহান আল্লাহতায়ালা জগৎ সৃষ্টির পূর্ণতা দান করেছিলেন। এই দিনে হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-কে জান্নাতে একত্র করেছিলেন এবং এই দিনে মুসলিম উম্মাহ সাপ্তাহিক ঈদ ও ইবাদত উপলক্ষে মসজিদে একত্র হয় বলে দিনটাকে ইয়াওমুল জুমাআ বা জুমার দিন বলা হয়।

প্রথম হিজরিতে মুসলমানদের জন্য জুমার নামাজ ফরজ করা হয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার নিকটবর্তী কুবায় প্রথম জুমার সালাত আদায় করেন। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের সময় তিনি কুবায় অবস্থান করেন।তিনি সোমবার কুবায় অবতরণ করেন এবং শুক্রবার সেখানে থেকে ইয়াসরিব বা মদিনার উদ্দেশে রওনা হন। এই সময়ের মধ্যে তিনি সেখানে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। এ মসজিদকেই সূরা তওবার ১০৮ আয়াতে তাকওয়ার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত মসজিদ বলে প্রশংসা করা হয়েছে। এটাই ছিল ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মসজিদ; যার প্রথম উদ্যোগী ছিলেন আম্মার বিন ইয়াসির (রা.)। পরে ইয়াসরিবের উপকণ্ঠে পৌঁছে বনু বালেম বিন আওফ গোত্রের রানুনা উপত্যকায় তিনি প্রথম জুমার সালাত আদায় করেন; যাতে ১০০ জন মুসল্লি শরিক হন।

তবে হিজরতের পরে জুমার নামাজ ফরজ হওয়ার আগে নবুওয়তের দ্বাদশ বর্ষে মদিনায় নাকীউল খাজিমাতে হজরত আসআদ বিন যুরারাহ (রা.) এর ইমামতিতে সম্মিলিতভাবে শুক্রবারে দুই রাকাত নামাজ আদায়ের দলিল আছে হাদিসে। তবে সেটা ছিল নফল নামাজ।

জুমার নামাজের গুরুত্বঃ রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে সকাল সকাল গোসল করল এবং গোসল করাল, তারপর ইমামের কাছে গিয়ে বসে চুপ করে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনল, প্রত্যেক কদমের বিনিময়ে সে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব পাবে। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ৪৯৮)

আল্লাহর রাসুল (সা.) আরো বলেছেন, ‘জুমার দিনে যে ব্যক্তি গোসল করে জুমার নামাজের জন্য যায় এবং সামর্থ্য অনুযায়ী নামাজ আদায় করে, এরপর ইমাম খুতবা শেষ করা পর্যন্ত নীরব থাকে। এরপর ইমামের সঙ্গে নামাজ আদায় করে। তবে তার এ জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। ’ (মুসলিম, হাদিস নং : ২০২৪)

বস্তুত জুমার নামাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময়। আমরা অনেকেই জুমার নামাজকে অবহেলা করে থাকি। এ ব্যাপারে শরিয়তে কঠিন সতর্কবাণী দেয়া হয়েছে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অবহেলা করে তিন জুমা পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তাআলা তার হৃদয় মোহরাঙ্কিত করে দেন। ’ (তিরমিজি হাদিস নং : ৫০২)

ফজিলতঃ জুমাবারের ফজিলতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হলো, এই দিনে এমন একটা সময় আছে, যখন মুমিন বান্দা কোনো দোয়া করলে মহান আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিনে একটা এমন সময় আছে, যে সময়ে কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কোনো কিছু প্রার্থনা করলে, অবশ্যই আল্লাহ তাকে তা দান করবেন। (সহীহ মুসলিম : ৮৫২, মুসনাদে আহমাদ : ৭১৫১, আস্-সুনানুল কুবরা : ১০২৩৪)

যে সবার আগে মসজিদে প্রবেশ করে, সে একটি উট আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব লাভ করে। যে দুই নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি গরু আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব পায়। যে তিন নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি দুম্বা দান করার সওয়াব পায়। যে চার নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি মুরগি দান করার সওয়াব লাভ করে। আর যে পাঁচ নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি ডিম আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব পায়। (মুসনাদে শাফী : ৬২, জামে লি ইবনে ওহাব : ২২৯, মুসনাদে হুমাইদি : ৯৬৩ )।

এছাড়া, জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সে মহামূল্যবান সময় কোনটা? এ সম্পর্কে ৪৫টি মতামত পাওয়া যায়। তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হলো, আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময় দোয়া কবুলের সময়। হজরত আনাস (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিনের কাঙ্ক্ষিত সময়টা হলো আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। (মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা : ৫৪৬০ , তিরমিজি : ৪৮৯)
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট