চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নোয়াখালীর নির্যাতিতা গৃহবধূর পরিবারকে নিরাপত্তা দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

নিজস্ব প্রতিবেদক

৫ অক্টোবর, ২০২০ | ৮:৩৭ অপরাহ্ণ

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের নারী ধর্ষণ চেষ্টা ও নির্যাতনের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসাথে ভিডিওটি সিডি বা পেনড্রাইভে কপি করে বিটিআরসিকে সংরক্ষণে রাখতে বলে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যানকে এসব নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি নির্যাতিত নারী ও তার পরিবারের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নোয়াখালীর এসপিকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

আজ সোমবার বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। নারী নির্যাতনের এ ঘটনা নজরে আনার পর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. মহি উদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন। এছাড়া, ওই নারীর নিরাপত্তা, জবানবন্দি নেয়া, দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণসহ সার্বিক ঘটনায় স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো অবহেলা আছে কি না, তা অনুসন্ধানে নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দিয়েছে হাইকোর্ট। কমিটিতে জেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা ও চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজের অধ্যক্ষকে রাখা হয়েছে। ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে সোমবার হাইকোর্টের জারিকৃত এক রুলে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে ওই নারীকে রক্ষায় এবং দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ থানার অন্যান্য কর্মকর্তাদের অবহেলা থাকলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক, বেগমগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নির্যাতনের ভিডিওটি অপসারণ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন সোমবার হাইকোর্টে আবেদন করেন। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীম সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।

এ সময় আদালত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া গৃহবধূর ধর্ষণচেষ্টা ও শ্লীলতাহানির ভিডিও সরিয়ে নেয়া হয়েছে কি-না তা জানতে চান। তবে এ বিষয়ে মূল আদেশ দেয়ার জন্য বেলা ২টার পর সময় নির্ধারণ করেন আদালত। এবং আদালত তা লিখিত আবেদন নিয়ে আসতে বলে বেলা আড়াইটায় শুনানির জন্য রাখেন। দুপুরে শুনানি নিয়ে আদালত এই আদেশ দেন। কয়েকটি আদেশের পাশাপাশি একটি রুলও জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে ওই নারীকে রক্ষায় এবং দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অবহেলার কারণে বেগমগঞ্জের ওসি ও বেগমগঞ্জ থানার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়েছেন আদালত। আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও বেগমগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।একই সঙ্গে নির্যাতনের ঘটনায় করা মামলার সর্বশেষ অবস্থা ২৮ অক্টোবরের মধ্যে জানাতে বেগমগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালত আগামী ২৯ অক্টোবর এই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জেডআই খান পান্না, মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, এ এম জামিউল হক ফয়সাল। শুনানিতে অংশ নেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন ও সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। পরে এডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল সাংবাদিদের জানান, আদালত কয়েকটি নির্দেশনাসহ একটি রুল জারি করেছেন। এছাড়া কয়েকটি অবজারভেশন দিয়েছেন আদালত। আদালত নারী সংগঠনের বিষয়ে বলেছেন, দেশে এতো নারী সংগঠন থাকা সত্ত্বেও এই ঘটনাটি নিয়ে আদালতে কোনো নারী সংগঠন এগিয়ে আসেনি। এতে আদালত অবাক হয়েছেন।

গত ২ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার ৩২ দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর গত ৪ অক্টোবর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এ ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আব্দুর রহিম ও রহমত উল্লাহকে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাশপুরে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে বিভৎস নির্যাতন, ধর্ষণ চেষ্টা এবং ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ৯ জনকে আসামি করে দুটি মামলা করেছেন নির্যাতিতা নারী। এর মধ্যে একটি মামলা করা হয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে। আর অপর মামলাটি করা হয়েছে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে। দুটি মামলাতে ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলেন- বাদল, মো. রহিম, আবুল কালাম, ইসরাফিল হোসেন, সাজু, সামছুদ্দিন সুমন, আবদুর রব, আরিফ ও রহমত উল্যা। এদের সবার বাড়ি বেগমগঞ্জে। এছাড়া মামলার এজাহারে অজ্ঞাতনামা আরও ৭-৮ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। এদিকে আসামিদের মধ্যে রহিম ও রহমত উল্যাকে নোয়াখালী থেকে আর ঢাকা থেকে বাদলকে ও নারায়ণগঞ্জে থেকে দেলোয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট