চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জুমার নামাজের ফজিলত

অনলাইন ডেস্ক

২ অক্টোবর, ২০২০ | ৪:২৫ অপরাহ্ণ

জুমার দিন সকল দিনের সর্দার। এ দিনে সমগ্র বিশ্বের সৃষ্টিকুল সমবেত হয়, এ দিনে হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়, এ দিনে তাঁকে বেহেশতে প্রবেশ করানো হয় এবং এ দিনে বেহেশত হতে পৃথিবীতে অবতরণ করানো হয়। জুমা দিনে হযরত আদম (আঃ) পৃথিবীতে অবতরণের বহু বিজ্ঞানময়তা ও হিকমত রয়েছে। তা স্বল্প পরিসরে বর্ণনা করা সম্ভব নয়।
আবু লুবাবাহ ইবন আল-মুনধির (রা.) হতে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘শুক্রবার সবদিনের সেরা এবং আল্লাহর কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ। ঈদুল আজহা এবং ঈদুল ফিতরের চেয়েও এই দিন আল্লাহর কাছে মহান। এই দিন আল্লাহ আদমকে (আ.) সৃষ্টি করেন, এই দিনেই পৃথিবীতে প্রেরণ করেন, এই দিনেই তিনি মারা যান, এই দিনে এমন একটি সময় আছে যখন কেউ আল্লাহর কাছে যা চায়, আল্লাহ তাকে তাই দেন, যতক্ষণ না হারাম কিছু চাওয়া হয়। এই দিনেই হবে কেয়ামত। এমন কোনো ফেরেশতা নেই, নেই কোনো আসমান, নেই কোনো যমিন, নেই কোনো পর্বত আর নেই কোনো সাগর যে কি-না শুক্রবারের দিনটিকে ভয় করে না।’ (ইবন মাজাহ : ১০৮৪)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার দিনের ফযিলত সম্পর্কে বলেন, ‘শুক্রবারে এমন একটি ক্ষণ আছে যখন একজন মুসলিম, সে নামাজ আদায় করেছে এবং দোয়া করেছে, সেই দোয়া কবুল করা হয়ে থাকে।’ তিনি (সা.) তাঁর হাতের ইশারায় করে বোঝান যে, তা খুব অল্প একটি সময়। (বুখারি ও মুসলিম)
সহিহ মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যদি কেউ যথাযথভাবে ওজু করল, এরপর জুমার নামাযে আসল, মনোযোগের সঙ্গে খুতবা শুনলো এবং নীরবতা পালন করে, তার ঐ শুক্রবার এবং পরবর্তী শুক্রবারের মধ্যবর্তী সকল ছোটোখাট গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, সাথে অতিরিক্ত আরো তিনটি দিনেরও…।’
এই দিনের বিশেষ কিছু আদব রয়েছে। যেমন বুখারী শরীফ থেকে পাওয়া যায়- যাদের উপর জুমা ফরজ তাদের জন্য এ দিনে গোসল করাকে রাসুলুল্লাহ (সা.) ওয়াজিব করেছেন। জুমার সালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা, মিস্ওয়াক করা, গায়ে তেল ব্যবহার করা, মনোযোগসহ খুতবা শোনা ও চুপ থাকা ওয়াজিব। আগে ভাগে মসজিদে যাওয়া, নিজের জন্য সবকিছু চেয়ে বেশি বেশি দোয়া করা, খুতবা চলাকালে মসজিদে প্রবেশ করলেও দুই রাকাত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় করা ছাড়া না বসা, মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেয়াজ, রসুন না খাওয়া ও ধূমপান না করা। খুতবার সময় খতিবের কোন কথার মার্জিতভাবে সাড়া দেয়া বা তার প্রশ্নের জবাব দানে শরিক হওয়া জায়েজ। কেউ মসজিদে কথা বললে ‘চুপ করুন’ এটুকুও না বলা।
অন্য হাদিস শরীফ থেকে জানা যায়- ভালো পোশাক পরে জুমার নামাজ আদায় করা, মুসুল্লিদের ইমামের দিকে মুখ করে বসা, সম্ভব হলে পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন, জুমার দিন ও রাতে বেশী বেশী দুরুদ পাঠ ও ইমামের খুতবা দেওয়া অবস্থায় দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা, খুতবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা, সালাতের জন্য কোন একটা জায়গাকে নির্দিষ্ট করে না রাখা- যেখানে যখন জায়গা পাওয়া যায় সেখানেই সালাত আদায় করা ও এতটুকু জোরে আওয়াজ করে কোন কিছু না পড়া- যাতে অন্যের সালাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেন, জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার আগে আসে সে ঐ ব্যক্তির মতো, যে একটি মোটা-তাজা উট কুরবানী করে। এরপর যে আসে সে ঐ ব্যক্তির মতো, যে একটি গাভী কুরবানী করে। এরপর যে আসে সে ঐ ব্যক্তির মতো যে একটি দুম্বা কুরবানী করে তারপর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগী দানকারীর মতো। এরপর আগমনকারী ব্যক্তি ডিম দানকারীর মতো। তারপর ইমাম যখন (খুতবার প্রদানের জন্য) বের হন তখন ফেরেশতা তাদের দফতর বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনতে থাকেন। (বুখারি শরীফ: ৮৮২)
আমি আবু আবসকে (রা.) বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, যে ব্যক্তির পদদ্বয় আল্লাহর পথে ধূলিময় হলো, তার পদদ্বয় জাহান্নামের জন্য হারাম করা হলো।’ (তিরমিযি: ১৬৩৮ ও বুখারি: ৯০৭)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, জুমাতে তিন ধরনের লোক আসে। (ক) যে ব্যক্তি অনর্থক আসে, সে তাই পায়। (খ) যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনার জন্য আসে, আল্লাহ চাইলে তাকে দেন অথবা না দেন। (গ) যে ব্যক্তি নীরবে আসে এবং কারো ঘাড় মটকায় না ও কষ্ট দেয় না, তার জন্য এই জুমা ও তার পরবর্তী জুমা, এমনকি তার পরের তিনদিনের (সগিরা) গোনাহসমূহের কাফফারা হয়ে থাকে। (আবুদাউদ)

তবে রাসূল (সা.) ঘোষণা করেছেন- ‘যে ব্যক্তি পরপর তিনটি জুমা কোনো কারণ ছাড়াই ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তির অন্তরে মোহর মেরে দেন।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)
হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, ইচ্ছাকৃত জুমা পরিত্যাগ করলে আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তিকে পুরোপুরি গোমরাহ করে দেন। হেদায়েত থেকে বঞ্চিত করেন। (নাউজুবিল্লাহ)

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট