চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

আজ পথশিশু দিবস

দেশে পথশিশুর সংখ্যা ৩২ লাখ

মরিয়ম জাহান মুন্নী

২ অক্টোবর, ২০২০ | ১:৪৭ অপরাহ্ণ

ময়লা জামা আর খালি পায়ে হাঁটছে ফাহিম, মুক্তা ও রবিন। কিছুক্ষণ পরপর একে অন্যের সাথে ঝগড়া আর ছোটাছুটি করছে। এভাবে সারাদিন ঠিকানা ছাড়া এদিক-সেদিক ঘুরাঘুরি করছে আর মানুষের কাছে টাকা খুঁজছে। কখনো আবার খাবার খুঁজে খাচ্ছে। খাবার জোগাড় করতে গিয়ে নানারকম তুচ্ছতাচ্ছিল্যের শিকারও হচ্ছে। দৃশ্যটি নগরীর সিআরবি’র হলেও এমন দৃশ্য বাংলাদেশের সবগুলো বড়-ছোট শহরে দেখা যায়। ফাহিম, মুক্তা ও রবিন নগরীর সিআরবি এলাকার তিন পথশিশু। বাবা-মা বিহীন এ শিশুরা অবহেলায়-অনাদরে বেড়ে উঠছে এভাবে। রাত কাটায় রাস্তার ধারে, সিআরবির খোলা জায়গায়। তাদের দেখার কেউ নেই।

আজ ২ অক্টোবর জাতীয় পথশিশু দিবস। দেশের পথশিশুদের সুরক্ষা ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে প্রতিবছর দেশে পালিত হয় দিবসটি। জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে তারা বিভিন্ন ধরনের অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার। রাস্তাঘাটে এক-দুই টাকার জন্য তারা পথচারীকে অনুরোধ করে নানাভাবে। কেউ কেউ আবার কাগজ কুড়ায়। পথেই যাদের বসবাস। জন্মের পর থেকে যারা জীবনযুদ্ধের সঙ্গে পরিচিত। রোদ-বৃষ্টি, গরম-শীত যাদের কাছে সমান। পরনে কাপড় আছে কি নেই তা তাদের কাছে মুখ্য নয়। যখন অন্য শিশুরা পাঠশালায় জ্ঞান অন্বেষণে ব্যস্ত তখন এরা নিজদের খাবারের সন্ধানে লিপ্ত। ছিন্নবস্ত্র পরিহিত বা বস্ত্রহীন এরা পথ শিশু নামে সর্বত্র পরিচিত।
বর্তমানে এ পথশিশুদের নিয়ে আমাদের তরুণ প্রজন্ম ও কটি এনজিও প্রশংসনীয় কাজ করছে। তারা পথশিশুদের পড়ালেখা, বাসস্থান, পোশাক ও খাবারের ব্যবস্থা করছে। এসব সংস্থা শিশু নিয়ে কাজ করে। সিআরবি’র শিরিষতলায় প্রতি শুক্রবারসহ প্রায় সময় বিকেলে এ পথশিশুদের স্কুল দেখা যায়। এদের পড়ালেখা করায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থী। সাথে খাবারের ব্যবস্থাও করে। এছাড়া পথশিশুদের নিয়ে কাজ করে ‘ফুলকি, নগর ফুল, উপলব্ধি ও এক টাকার আহার। এখানে অনেক হারিয়ে যাওয়া শিশু ও অভিভাবক বিহীন শিশু রয়েছে। যাদের অভিভাবক সংস্থার সদস্যরা।

কথা হয় নগরফুল ও এক টাকার আহারের দুই সদস্য পারভেজ ও তানভিরের সাথে। তারা বলেন, পথশিশুদের নিয়ে আমরা যারা কাজ করছি তারা সবাই শিক্ষার্থী। আমাদের বাবা-মা থাকায় আজ আমরা একটা ভালো পরিবেশের মাধ্যমে বড় হয়েছি, পড়ালেখা করেছি। আর এ শিশুদের মধ্যে অনেকের বাবা-মা নেই, কেউ নদী ভাঙন এলাকার, আবার অনেকে অভাবের কারণে রাস্তায় কাগড় কুড়ানো, মানুষের কাছে হাতপাতে। এ শিশুদের মধ্যে অনেকে পড়ালেখা করতে পারে না। আমরা তাদের প্রতি সপ্তাহে সিআরবিতে পড়ালেখা ও খাবারের ব্যবস্থা করি। আমরা চাই এ শিশুদের পাশে সমাজের বিত্তবানরাও দাঁড়াক।

পথশিশুদের নিয়ে একটি জরিপে দেখা যায়, দেশে ৩২ লাখ পথশিশু আছে। যাদের আশ্রয় ফুটপাত, বিভিন্ন বাড়ির আঙিনা, মাজার, মন্দির, টার্মিনাল, রেলস্টেশনে।
জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা নারগীস সুলতানা বলেন, পথশিশু অর্থাৎ ছিন্নমূল শিশুকিশোরদের পুনর্বাসন তথা তাদের জীবনমান উন্নত করার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষে দিবসটি পালিত হয়। বর্তমান সরকার এদের উন্নয়নে কাজ করছেন। শিক্ষা, খাদ্য, বাসস্থান ও চিকিৎসাসহ পুনর্বাসনের জন্য অনেকগুলো সরকারি বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছে। অনেক শিশু আছে যারা অর্থের অভাবে পড়ালেখা করতে পারছে না। সরকারিভাবে শেখ রাসেল ফাউন্ডেশনসহ শিশু বিকাশ কেন্দ্র রয়েছে। আমরা এখানে তাদের রেখে পড়ালেখাসহ সবকিছুর ব্যবস্থা করেছি। তবে শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে সমাজে যারা বিত্তবান আছে তারাও এগিয়ে এসে এ শিশুদের পাশে দাঁড়ানো দরকার। তাহলে অসহায় অবস্থা থেকে শিশুরা মুক্তি পাবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট