চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

স্থানান্তর নয় ডিএনসিসি বন্ধ্যা করবে কুকুরকে

স্থানান্তর নয় ডিএনসিসি বন্ধ্যা করবে কুকুরকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৫:৩৭ অপরাহ্ণ

রাজধানী থেকে কুকুর অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তবে সেই পথে না হেঁটে কুকুর বন্ধ্যাকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এই উদ্দেশ্যে সংস্থাটি এজন্য ‘অভয়ারণ্য’ নামে একটি এনজিও’র সঙ্গে পূর্বের করা চুক্তি নতুন করে নবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টি ডিএনসিসি’র মেয়র আতিকুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, ডিএসসিসি তার আওতাধীন বিভিন্ন এলাকা থেকে এরইমধ্যে কয়েকশ’ কুকুরকে করপোরেশনের মাতুয়াইল এলাকায় স্থানান্তর করেছে। তার আগে গত ৩০ জুলাই দক্ষিণ সিটির বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে সংস্থার মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছিলেন, ‘ঢাকাবাসীর অভিপ্রায় অনুযায়ী, বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে আমরা চিন্তাভাবনা করছি।’

আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদে বলা হয়, ডিএসসিসি’র ৩০ হাজার কুকুরকে শহরের বাইরে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরপরই এ নিয়ে আলোচনা ও পক্ষে-বিপক্ষে মানববন্ধনের আয়োজন শুরু হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

ডিএসসিসি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের বলেন, ‘ সিটি করপোরেশন ব্যতীত প্রাণী কল্যাণ আইন অনুযায়ী, প্রাণী অপসারণ অপরাধ। ব্যক্তি কিংবা সংস্থা পর্যায়ে এটা অপরাধ হিসেবে গণ্য। সিটি করপোরেশনের মৌলিক কার্যাবলি অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ এর তৃতীয় তফসিলের ১৫.৩, ১৫.৪, ১৫.৫ ও ১৫.১০ এবং পঞ্চম তাফসিলের ৫১ ধারা ও সপ্তম তফসিলের ১৮ ধারা অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন যদি মনে করে কোনও বেওয়ারিশ কুকুর অথবা কোনও বেওয়ারিশ প্রাণীকে অপসারণ করতে পারে, এমনকি নিধনও করতে পারে। আমরা নিধন করছি না, অপসারণ করছি।’

এদিকে, উত্তর সিটি করপোরেশন বলছে—তারা কুকুর স্থানান্তর, অপসারণ বা নিধন না বন্ধ্যাকরণের মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান খুঁজছে।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সংস্থার মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের মহাখালীতে অবস্থিত মার্কেটে কুকুরের জন্য আমরা একটা হাসপাতাল করেছি। আমি নিজেও করোনার সময় বিভিন্ন স্থানে কুকুরকে খাবার দিয়েছি। আমি এখনও তাদের জন্য খাবার পাঠাচ্ছি। আমরা মনে করি, কুকুরকে স্থানান্তর করা সমস্যার সমাধান নয়। আমাদের ২০১৯ সালের আইনে কুকুর বা বন্যপ্রাণীকে কীভাবে দেখতে হবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে।’

মেয়র আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীও বন্যপ্রাণি সংরক্ষণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আমাদের অনেকের বাসাবাড়ি-রাস্তার সামনে কুকুর থাকে। এটা কিন্তু পরিবেশের ব্যালেন্স রক্ষা করে। ইঁদুরসহ ক্ষতিকর অনেক প্রাণি মেরে ফেলে। অনেক অপরিষ্কার জায়গাকে পরিষ্কার করে, আবার অপরিষ্কারও করে। আমার মতে, কুকুরকে বন্ধ্যাকরণ করে তাদের জলাতঙ্কের ইনজেকশন দিতে হবে। আমাদের ‘অভয়ারণ্যে’ সঙ্গে যে চুক্তি ছিল সেটার মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে আমরা আবারও চুক্তিতে যাচ্ছি।’

তিনি নগরবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে কোনও কুকুর নিধন হবে না। এই তথ্য কিন্তু আমি সবাইকে দিচ্ছি। কুকুরকে আমাদের অনেকেই ভালোবেসে অনেকেই তাদেরকে বিভিন্ন স্থানে খাবার দিচ্ছেন। কুকুরের সঙ্গে অনেকের বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। আমার মেসেজ খুবই স্পষ্ট—আমাদের উত্তর সিটিতে কোনও ধরনের কুকুর উচ্ছেদ বা অপসারণ বা ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলা হবে না। যদি কোনও নাগরিক তা করে, তাহলে আমরা ২০১৯-এর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘দেখুন, কুকুরকে আপনি বিরক্ত না করলে আপনাকে কামড়াবে না। আপনি কুকুরকে ঢিল বা লাঠি দিয়ে আঘাত করলে তখন কুকুর আপনাকে কামড়াবে। আর একটা কুকুরকে যদি আপনি একটি জায়গা থেকে আরেকটি জায়গায় নিয়ে যান, কুকুর কিন্তু সেখানে চিৎকার করবে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, একটা কুকুর তার এলাকায় অন্য এলাকার কুকুর ঢুকতে দেবে না। যদি ওই এলাকায় কোনও কুকুর ঢুকে পড়ে, তাহলে সেখানকার স্থানীয় কুকুরগুলো চিৎকার করতে থাকবে।’

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আপনি সকাল বেলায় নামাজ পড়তে ঠিকমতো গেলে সে আপনাকে কিচ্ছু করবে না। কুকুর কুকুরের জায়গায় থাকবে আর আমরা আমাদের জায়গায়। তাদের নিয়েই কিন্তু আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। কুকুরকে কোনও ঢিল, লাঠি বা অন্যভাবে আঘাত করা যাবে না- এটি ২০১৯ সালের আইনেই পাস করে দেয়া হয়েছে।’

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট