চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘কানাডার পাত্রী’ বিয়ের আশায় বৃদ্ধ খোয়ালেন ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা

‘কানাডার পাত্রী’ বিয়ের আশায় বৃদ্ধ খোয়ালেন ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৬:৩১ অপরাহ্ণ

দেখতে সুন্দরী ও চেহারায় আভিজাত্যের চাপ দেখে মনে হতেই পারে তিনি বিদেশে থাকেন। নিজের এই সুদর্শনা চেহারাকে পুঁজি করেই বারবার পাত্র খুঁজে ‘প্রবাসী পাত্রীর জন্য পাত্র চাই’ শিরোনামে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন। বিজ্ঞাপনে উল্লেখ থাকে, ‘প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী কানাডার সিটিজেন ডিভোর্সি সন্তানহীন, ৩৭ বছর বয়সী, পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা, নামাজী পাত্রীর জন্য ব্যবসার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী বয়স্ক পাত্র চাই।’

বারিধারা, গুলশানের মতো অভিজাত এলাকার ঠিকানা যোগাযোগের জন্য উল্লেখ করা থাকতো। কখনো বা তিনি কানাডার সিটিজন। কখনও আমেরিকার। নানা পরিচয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে আকৃষ্ট করেন পাত্রদের।

বিয়ে করে উন্নত দেশের বাসিন্দা হতে চাওয়া পাত্ররা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সকল পাত্রকেই বিদেশের মাটিতে তার বিপুল অর্থ সম্পদের প্রলোভন দেখিয়ে ঝুলিয়ে। পাত্রীবেশী এই নারী প্রতারকের নাম সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস। তার নেতৃত্বে রয়েছে এই ধরনের একটি চক্র। জান্নাতের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বারে।

চক্রের প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী নাজির হোসেনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি গত বুধবারে (১৬ সেপ্টেম্বর) জান্নাত বনানী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। সিআইডি সূত্র জানায়, পত্রিকায় লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে অনেকেই আকৃষ্ট হন। চক্রটি মিথ্যা তথ্য দিয়ে কৌশলে প্রতারণা করে পাত্রের কাছ থেকে বিপুল টাকা হাতিয়ে একপর্যায়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এই চক্র মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে সিআইডি।

নাজির হোসেন জানান, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে মোবাইল নম্বরে জান্নাতের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিয়ের আলাপ-আলোচনা করেন। শীঘ্রই বিয়ে করে নাজিরকে কানাডা নিয়ে যাবেন বলে জানান সাদিয়া জান্নাত। গত ১২ই জুলাই গুলশান-২ এর একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করে প্রাথমিকভাবে ১৫ লাখ টাকা ও নিজের পাসপোর্ট দেন জান্নাতের কাছে। পরবর্তীতে সাদিয়া জান্নাত জানায়, কানাডায় তার ২শ’ কোটি টাকার ব্যবসা আছে। কিন্তু কানাডায় অনেক শীত নাজির সেখানে থাকতে পারবেন না বলে টাকাগুলো বাংলাদেশে এনে নাজিরকে দিতে চান। দেশে ব্যবসা করে দু’জনে সুখে থাকবেন। বিভিন্ন সময়ে ট্যাক্স, ভ্যাট, ডিএইচএল বিল ইত্যাদির খরচের কথা বলে ভিকটিমের কাছ থেকে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন জান্নাত। পরে ফোনসহ সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে ঠিকানাও পরিবর্তন করে দেন।

সিআইডি’র সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. জিসান জানান, সিআইডি জান্নাতের নিজ হাতে লেখা ২০১৫ ও ২০১৬ সালের হিসাবের খাতা জব্দ করেছে। এতে কোন পাত্রের কাছ থেকে কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তার তথ্য রয়েছে।

তিরি আরও জানান, গ্রেপ্তারের সময় জান্নাতের কাছ থেকে তিন পাত্রের পাসপোর্ট, ১০টি মোবাইল ফোন, তিনটি মেমোরি কার্ড, সাতটি সীল, অসংখ্য ব্যবহৃত সীম ও হিসাবের খাতাসহ গত ২রা সেপ্টেম্বর ব্যাংক এশিয়ায় ৪৮ লাখ টাকা জমা দেয়ার স্লিপ উদ্ধার করা হয়।

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট