চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আমীর খসরু, টুকু না রিজভী?

কে বিএনপির অষ্টম মহাসচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা অফিস

১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ২:০১ অপরাহ্ণ

সাংগঠনিকভাবে বিএনপিকে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী হচ্ছেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। পর পর তিনটি জাতীয় নির্বাচনে দলের চরম বিপর্যয় এবং সরকারের হামলা-মামলা ও দমন-পীড়নে দলটির নেতাকর্মীরা বিপর্যস্ত এখন। এ অবস্থায় দলকে চাঙ্গা করে তুলতে একজন চৌকস মহাসচিবের কথা ভাবা হচ্ছে বলে দলের নানা সূত্র খবর দিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সরিয়ে শিগগির নতুন মহাসচিব দেখা যেতে পারে বিএনপিতে। আর তেমনটি যদি হয় নতুন মহাসচিব হবেন বিএনপির অষ্টম মহাসচিব। তবে দলের সিনিয়র নেতারা বলছেন এটা গুঞ্জনই, সত্য নয়। দলের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির জন্যই এ ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। করোনার কারণে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। তাই এ গুঞ্জন নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকদের কেউই বিস্তারিত বক্তব্য দিতেও রাজি হননি।

তবে এ গুঞ্জনের ডালপালা তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। নতুন মহাসচিব হিসেবে কে আসতে পারেন, এমন নামও উচ্চারিত হচ্ছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। তাতে যে নামটি সবচেয়ে বেশি উচ্চরিত হচ্ছে তিনি হচ্ছেন চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনের উজ্জল নক্ষত্র আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বর্তমানে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী। চট্টগ্রামের হলেও সারাদেশে বিএনপির রাজনীতিতে তিনি পরিচিত মুখ। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ট। বেগম খালেদা জিয়ারও পছন্দের ব্যক্তি।
১৬ মার্চ ২০১১ সালে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। তাঁর মৃত্যুর কয়েকদিন পরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সৌদি আরব সফরে যাওয়ার প্রাক্কালে মির্জা ফখরুলকে দলের মহাসচিবের কাজ চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দিয়ে যান। দলের গঠনতন্ত্রে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলতে কোনো পদ না থাকলেও মির্জা ফখরুল প্রায় ৫ বছর সেই ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হয়েই ঝুলে ছিলেন বিএনপিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিল হওয়ার ১১ দিন পর ৩০ মার্চ, ২০১৬ পূর্ণাঙ্গ মহাসচিবের পদে আসেন দলটির সবচেয়ে নীতি-আদর্শবাদী রাজনীতিক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যদিও বিএনপিতে মহাসচিব হওয়ার মতো এবং মির্জা ফখরুলের চেয়ে সিনিয়র কয়েক ডজন নেতা তখন ছিলেন। তারপরও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো একজন ভদ্র ও মার্জিত নেতাকে মহাসচিব করায় খালেদা জিয়া বিরোধী পক্ষের কাছ থেকেও ধন্যবাদ পেয়েছিলেন। সেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখনও হাল ধরে আছেন দলটির। এর মধ্যে কেটে গেছে আরও সাড়ে চার বছর। দলের কাউন্সিল করার সময়ও চলে গেছে দেড় বছর হলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাসচিব পদে এবার তালিকায় নাম উঠেছে অন্তত তিনজন নেতার। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যার নাম উচ্চারিত হচ্ছে, তিনি হলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। অন্যদিকে অনেক সিনিয়রকে ডিঙ্গিয়ে স্থায়ী কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নামও শোনা যাচ্ছে। তিনিও তারেক রহমানের খুব কাছের অনুসারী। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তারেক বলয়ে থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। সিরাজগঞ্জের রাজনীতিতে প্রভাশালী এই নেতা বর্তমানে দলের দুটি কমিটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতির পর দলের জাতীয় করোনা পর্যবেক্ষণ কমিটির আহবায়ক, পরবর্তী সময়ে বন্যা পরিস্থিতিতে দলের গঠিত ত্রাণ কমিটিরও আহবায়ক করা হয়েছে তাকে। অপরদিকে মহাসচিব পদটি পাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ‘ফুলটাইম’ রাজনীতিবিদ সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এক-এগারো সরকারের সময় থেকে লাইম লাইটে আসা সাবেক এই ছাত্রদল নেতা এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী কখনই থেমে থাকেননি। চলছেন তো চলছেনই। মামলা, গ্রেফতার কিংবা করোনা, কোনো কিছুই দমিয়ে রাখতে পারেনি রিজভীকে।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির ৭ জন নেতা মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। দলটির অষ্টম মহাসচিবের দায়িত্ব কে পাবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।

জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এ খবরের ভিত্তি নেই। বর্তমান মহাসচিব তো ভালোই চালাচ্ছেন। তাকে বদলাতে হবে কেন? তিনি এ দুঃসময়েও দলের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তাহলে এমন গুঞ্জনের কারণ কি জানতে চাইলে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে কে কোন উদ্দেশ্যে কখন কি প্রচার করে বলা যায় না। মহাসচিব নিয়ে আমাদের দলে কোনো সমস্যা তো নেই। বর্তমান মহাসচিব ভদ্র সজ্জন এবং রাজনৈতিক অভিজ্ঞ। আপনি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন, মহাসচিব পদে আপনাকে শীর্ষ নেতৃত্ব চাইলে কি সিদ্ধান্ত নেবেন জানতে চাইলে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আমাকে দলের স্থায়ী কমিটিতে দায়িত্ব দিয়েছেন। শীর্ষ নেতৃত্ব চাইলে আমি তা মাথা পেতে নেবো। আমি দল করি। দলের নেতৃত্বের প্রতি সব সময় অনুগত থাকব। আর মহাসচিব পদ ছাড়াও যে কেউ দলের যে কোন দায়িত্ব পালন করতে কোন অসুবিধা নেই। অপরদিকে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, এটা উদ্ভট চিন্তা। দলের মধ্যে বিভাজন তৈরি করার জন্য এসব খবর প্রচার করা হয়। এটা নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট