চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

আজ পবিত্র আশুরা

অনলাইন ডেস্ক

৩০ আগস্ট, ২০২০ | ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ

আজ রবিবার (১০ আগস্ট) পবিত্র আশুরা। ইসলামি পরিভাষায় মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কারণে বিশ্বইতিহাসে দিনটি বিশেষ তাৎপর্যমণ্ডিত। যুগে যুগে সংগঠিত সেসব ঘটনার সাথে মুসলমানদের অস্তিত্বের সম্পর্ক রয়েছে। দিনটি বিশ্বনবীর (স.) প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.)-এর আত্মত্যাগের মহিমায়ও মহিমান্বিত ও হৃদয়বিদারক স্মৃতিবিজড়িত। হিজরি ৬১ সালের এ দিনে ফোরাত নদীর তীরে ঐতিহাসিক কারবালা প্রান্তরে যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে, তা সমগ্র মুসলিমজাহানকে শোকে-বেদনায় স্তব্ধ করে দিয়েছিল। এই দিনে হজরত ইমাম হোসেন (রা.) এবং হজরত আলীর (রা.) পরিবারের সতেরোজন শিশুকিশোর যুবকসহ মোট ৭৭ জন মর্দে মুজাহিদ অন্যায়-অসত্যের কাছে মাথানত না করে সত্য-সুন্দর-ন্যায়ের পথে লড়াই করে বীরের মতো কারবালার প্রান্তরে শাহাদাতের পেয়ালা পান করেছিলেন। মহররম মাস এলেই কারবালার সেই বেদনাবিধুর স্মৃতি জেগে ওঠে, রক্তক্ষরণ হয় প্রত্যেক মুসলমানের হৃদয়ে।

কারবালার এই মর্মান্তিক বেদনাদায়ক ঘটনা দিবসটিকে আত্মোৎসর্গ আর ন্যায়-নীতির, সত্য-সুন্দর প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের চেতনায় সমুজ্জ্বল করে রেখেছে। অন্যায়-অনাচার-অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে প্রেরণার উৎস হয়ে রয়েছে দিনটি। কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা ছাড়াও অসংখ্য ঘটনার স্মারক দিন এটি। মানবইতিহাসের সূচনালগ্ন থেকে বহু উত্থান-পতন, ভাঙা-গড়া ও ধ্বংস-সৃষ্টির স্মৃতি ধারণ করে আছে এই আশুরা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এই দিনে। এ দিনেই তিনি তা ধ্বংস করবেন। এ দিনেই হযরত আদমের (আ.) সৃষ্টি, জান্নাতে প্রবেশ, পৃথিবীতে প্রেরণ ও আল্লাহতাআলার দরবারে তার তওবা কবুল হয়। এছাড়া আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল এদিনে। তাই এটি মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। এই আশুরা জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্যের ও জিল্লতের পরিবর্তে নাজাতের মহিমায় ভাস্বর ঐতিহাসিক একটি দিন। বিশেষত কারবালার প্রান্তরে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর আত্মত্যাগ ও স্বার্থত্যাগের অনন্য দৃষ্টান্ত প্রেরণায় উদ্দীপ্ত হয়ে রয়েছে শতাব্দী পরম্পরায়।

ইমাম হোসাইন (রা.) ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.) এবং রাসুলের (সা.) প্রিয় কন্যা হজরত ফাতেমার (রা.) ছেলে। হজরত আলীর মৃত্যুর পর খলিফা হন হজরত মুয়াবিয়া (রা.)। তিনি জীবদ্দশায় নিজ পুত্র ইয়াজিদকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। তাকে খলিফা হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ইমাম হোসাইন (রা.) অনুসারীদের নিয়ে কুফার উদ্দেশে হিজরত করেন। পথিমথ্যে কারবালায় তার কাফেলাকে ইয়াজিদের নির্দেশে উমর ইবনে সাদ আবি ওক্কাসের নেতৃত্বে চার হাজার সৈন্য অবরোধ করে।

ইমাম হোসাইনকে (রা.) আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয় ইয়াজিদ বাহিনী। কাফেলার নারী-শিশুসহ সবাই তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়ে। কিন্তু ইমাম হোসাইন (রা.) আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানিয়ে ১০ মহররম যুদ্ধ শুরু করেন। অসম লড়াইয়ে ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার ৭২ সঙ্গী শাহাদাতবরণ করেন। সিমার ইবনে জিলজুশান গলায় ছুরি চালিয়ে মহানবীর প্রিয় দৌহিত্রকে হত্যা করে।

মুসলমানদের কাছে ১০ মহররম দিনটি শোকের। এ ছাড়াও ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন- ১০ মহররম পৃথিবীতে আদম (আ.) আগমন করেন; নবী মুসার (আ.) শত্রু ফেরাউনকে নীল নদে ডুবিয়ে দেওয়া হয়; নূহ (আ.)-এর নৌকা ঝড় থেকে রক্ষা পায়; দাউদ (আ.) এর তাওবা কবুল হয়; আইয়ুব (আ.) আরোগ্য লাভ করেন।

মহানবী (সা.) আশুরার দিনে রোজা রাখতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলকে ১০ মহররম রোজা পালন করতে দেখেছি। বলতে শুনেছি, ‘রমজানের রোজা ছাড়া অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে উত্তম মহররমের রোজা।’

আশুরার দিনে সুন্নি মুসলমানরা রোজা রাখেন। শিয়া সম্প্রদায় মার্সিয়া ও মাতমের মাধ্যমে এই দিনটি অতিবাহিত করেন। অন্যান্য বছর পুরান ঢাকা, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় তাজিয়া, শোকযাত্রার আয়োজন করা হলেও করোনায় এবার তা হবে না।

আশুরা উপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারবালার শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। করোনা মহামারির এই সংকটকালে কারবালার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সব নাগরিককে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। 

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট