চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নিলামে চায়ের কাঙ্ক্ষিত দাম মিলছে না

নিলামে চায়ের কাঙ্ক্ষিত দাম মিলছে না

চোরাই পথে ভারতীয় চা আমদানি করোনার কারণে ক্রেতা স্বল্পতা

ইফতেখারুল ইসলাম

২৯ জুলাই, ২০২০ | ১২:৫৮ অপরাহ্ণ

নিলামে চায়ের কাঙ্ক্ষিত দাম মিলছে না। উৎপাদকরা বলছেন, মহামারীর কারণে একদিকে ক্রেতা কম। অপরদিকে, চোরাইপথে ভারতীয় চা আনা হচ্ছে। যে কারণে বিপাকে পড়েছেন তারা। গত বছর অতিরিক্ত চা উৎপাদন করে গড়ে চা বিক্রি হয়েছে কেজি ১৭৬ টাকা। এবার মৌসুমের শুরুতেই গড়ে সেই দামে চা বিক্রি করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যমতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬২.৬৭২ মিলিয়ন কেজি চা বিক্রি হয়েছিল যার গড় মূল্য ছিল ১৮৭ টাকা। এর পরের অর্থ বছরে চা বিক্রি হয়েছিল ৭২.২৭৭ মিলিয়ন কেজি । যার গড় মূল্য ছিল ১৯১ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নিলামে চা বিক্রি হয়েছিল ৭৬.৫৭১ মিলিয়ন কেজি। যার গড় মূল্য ছিল ২১৪ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চা বিক্রি হয়েছিল ৭৯.৩৩৭ মিলিয়ন কেজি। যার গড় মূল্য ছিল ২৬২.৯৬ টাকা। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে চা বিক্রি হয়েছে ৯০.৪৫ মিলিয়ন কেজি। যার আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১১ মিলিয়ন কেজি বেশি। গড় মূল্য ছিল ১৭৬.০৮ টাকা। চলতি অর্থবছরে যে কটি নিলাম হয়েছে তার গড় মূল্য ১৭৬.১৬ টাকা। উৎপাদকদের বক্তব্য হলো, গত বছর অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে তারা দাম কম পেয়েছেন। কিন্তু এবার শুরু থেকেই কাঙ্ক্ষিত দাম মিলছে না। এর জন্য তারা মহামারী এবং চোরাই পথে ভারতীয় চা আমদানিকেই দায়ী করছেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা বোর্ডের সদস্য গোলাম হোসেন পূর্বকোণকে বলেন, ভারত থেকে চোরাইপথে চা পাতা আসার সুযোগ নেই। সীমান্তে বর্ডার গার্ড এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছে। তবে গত বছর আমাদের দেশে ১০ মিলিয়ন কেজি চা বেশি উৎপাদন হয়েছিল। যার কিছুটা প্রভাব এখনো আছে বলে মনে হয়। চায়ের দাম কমে যাওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে তা হল নিম্নমানের চা। নিম্নমানের চায়ের দাম উঠানামা করে। তবে ভালো মানের চায়ের দাম কমেনি। বরং চাহিদা অনুযায়ী ভালো মানের চা সরবরাহ করতে পারছি না। কারণ ভালো মানের চায়ের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

বাংলাদেশ টি এসোসিয়েশন চট্টগ্রাম সার্কেলের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পূর্বকোণকে বলেন, ভারত থেকে চোরাই পথে চা আসছে। যে কারণে দেশে উৎপাদিত চা ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, টি বোর্ড, বর্ডার গার্ডসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। চায়ের দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই মৌসুমে ১০টি নিলাম হয়েছে। ভালো মানের চা বিক্রি হয়েছে গড়ে ২৩৫ টাকা থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে। যা গত বছর ছিল প্রায় ২৯০ টাকা। নিম্নমানের চা বিক্রি হয়েছে ১৩৫ টাকা থেকে ১৪০ টাকা। যা গতবছর বিক্রি হয়েছিল ১৬০ টাকা থেকে ১৬৫ টাকা। তিনি বলেন, ভারত থেকে চোরাই পথে চা আসার পাশাপাশি মহামারীর এই সময়ে সবাই উন্নতমানের গ্রিন টি, হোয়াইট টি ইত্যাদি দামী চা পান করছে। তারও একটি প্রভাব আছে। অনেক বাগান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সরকার তাদের কৃষি ঋণ দিতে পারে। চট্টগ্রামে ৪০ হাজার শ্রমিক আছে। রেশনে ভর্তুকি দিয়ে সরকার তাদের পাশে দাঁড়াতে পারে। সারের দামও কমানোর দাবি জানান তিনি।

আঁধার মানিক টি কোম্পানি লি. এর এ জি এম লায়ন এ কে জাহেদ চৌধুরী বলেন, গত বছর বেশি উৎপাদনের কারণে চায়ের দামের উপর প্রভাব পড়েছিল। এবার চোরাইপথে ভারত থেকে আসা চা আমাদের উৎপাদিত চায়ের দামের উপর প্রভাব ফেলছে। সাথে আছে মহামারী করোনার প্রভাব। করোনার কারণে নিলামে ক্রেতা স্বল্পতা রয়েছে। যে কারণে কাঙ্ক্ষিত দাম মিলছে না। সরকারের প্রতি এই খাতে প্রণোদনা প্রদানের আহবান জানিয়ে বলেন, এই খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকার রেশনে ভর্তুকি দিয়ে প্রণোদনা দিতে পারে। তাহলে বাগান মালিকের উপর চাপ কিছুটা কমতো। যেসব বাগান মালিকের ফ্যাক্টরি নেই তারা সবুজ পাতা বিক্রি করেন। যারা সবুজ পাতা বিক্রি করেন, তারা বেশি সমস্যায় আছেন। কারণ তারা মহামারীর কারণে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট