চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিজ্ঞাপন ছাড়াও নাটকের প্রস্তাবে ‘না’ ফুটবলের পোস্টারগার্ল সানজিদার
বিজ্ঞাপন ছাড়াও নাটকের প্রস্তাবে ‘না’ ফুটবলের পোস্টারগার্ল সানজিদার

বিজ্ঞাপন ছাড়াও নাটকের প্রস্তাবে ‘না’ ফুটবলের পোস্টারগার্ল সানজিদার

অনলাইন ডেস্ক

১৮ জুলাই, ২০২০ | ১২:৪৬ অপরাহ্ণ

বিজ্ঞাপনের চার-পাঁচটি প্রস্তাব ফিরিয়ে দেবার পর নাটকে অভিনয়ের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের জাতীয় দলের ফুটবলের পোস্টারগার্ল সানজিদা। কেননা তিনি ফুটবল ছাড়া অন্য দিকে যে মন দিতেই রাজি নন!

ময়মনসিংহের ধোবাউরার কলসিন্দুর গ্রামের লিয়াকত আলী ও জোসনা খানম দম্পতির ৬ সন্তানের মধ্যে তৃতীয় সানজিদা। তার বড় দুই বোনের বিয়ে হয়েছে দশম শ্রেণিতে, ছোট বোন ও ছোট ভাই পড়ে হাফিজিয়া মাদ্রাসায়।

লিয়াকত আলী ও জোসনা খানম দম্পতির ৬ সন্তানের মধ্যে সানজিদা একটু ব্যতিক্রম। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা আর গানে আসক্তি ছিল তার। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে তিন-চারটি পুরস্কার নিয়েই বাসায় ফিরতেন। খেলায় প্রথম হতেন, প্রথম হতেন গানেও।

কথা হচ্ছিল সানজিদার সাথে গান নিয়ে। তিনি বলছিলেন, ‘আমার কন্ঠ ভালো। গানে পুরস্কার পেতাম। এখনও আমি গান গাই একা একা। তবে গান শিখব, গান শেখার জন্য কোথাও ভর্তি হব- সেটা মাথায় আসেনি কখনও। আমার মনে হয় গানে থাকলেও আমি ভালো করতাম।’

পর্তুগালের সাপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ধারাভাষ্যকার থেকে শুরু করে অনেক দর্শকও সানজিদাকে বলেন ‘ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো’। এ সুপারস্টারের মতো সানজিদাও পড়েন ৭ নম্বর জার্সি। ‘সিআর সেভেন’ বললে যেমন মানুষ বোঝেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে, তেমন বাংলাদেশের নারী ফুটবলে ‘এসএ সেভেন’ হলে সানজিদা আক্তার। তার প্রিয় খেলোয়াড়রও রোনালদো।

দুটি বিজ্ঞাপন করেছেন। সেখান থেকে সম্মানীও পেয়েছেন। নাটকে অভিনয়ের প্রস্তাবও পেয়েছেন। তাহলে ফিরিয়ে দিলেন কেন? নাটক করলে তো আরও পরিচিতি বাড়তো, অন্য জগতেও আপনার সুনাম হতো।

নাটকের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়া প্রসঙ্গে সানজিদার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে আমি ফুটবলের বাইরে এখন অন্য কিছু ভাবতে রাজি নই। যে দুটি বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি, সেটা এক কথায় আমার মনের বিরুদ্ধেই। এখনো মাঝে-মধ্যে অফার আসে। বিভিন্ন মাধ্যমে নাটক করার প্রস্তাবও এসেছিল। আমি বিস্তারিত জানতেই চাইনি, না করে দিয়েছি। কারণ, অন্য কিছুতে জড়ালে খেলার ক্ষতি হবে। ফুটবল আর পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াই আমার প্রধান লক্ষ্য।’

কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই ফুটবলের সঙ্গে জড়িয়ে যান সানজিদা। বঙ্গমাতা ফুটবলে অংশ নিয়ে সবার নজরে পড়েন। ২০১৩ সালে রাজশাহীতে বাফুফের ট্যালেন্ট হান্টিং ক্যাম্প হয়েছিল। সেখান থেকে নারী ফুটবলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন তাকে পছন্দ করেন এবং ২০১৪ সালে ডাকেন বাফুফের আবাসিক ক্যাম্পে।

ওই বছরই ঢাকায় অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে খেলেন সানজিদা। একই বছর এএফসির অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের সেরা ১০ ফুটবলারের তালিকায় সপ্তম হয়েছিলেন এই নাম্বার সেভেন। পরের বছর নেপালে অংশ নেন এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ চ্যাম্পিয়নশিপের আঞ্চলিক পর্বে। ক্যারিয়ারের প্রথম দুটি আসরেই পান শিরোপার স্বাদ। সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়ন দলেও খেলেছেন তিনি।

ভারতের শিলিগুড়িতে নারী সাফে খেলে জাতীয় দলে অভিষেক সানজিদার। তারপর থেকে নিয়মিত দলে আছেন। তার এখন লক্ষ্য, জাতীয় দলের হয়ে ভালো খেলা। এর পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া।

তাছাড়া, ফুটবল খেলেছেন বলেই পৃথিবীটা অনেক বড় সানজিদার কাছে। বিভিন্ন দেশে খেলতে যাওয়া, বিভিন্ন সময় সংবর্ধনা পাওয়া এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাওয়া এসব কিছুই সানজিদার কাছে অনেক বড় কিছু পাওয়া আর সম্মানেরও।

একসময় সানজিদাদের গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। কিন্তু সিানজিদা ফুটবল খেলেছে বলেই গ্রামে বিদ্যুৎ গিয়েছে বলে জানায় সে। আর এসব ভাবতেই ভালো লাগে দেশের নারী ফুটবলের পোস্টারগার্ল সানজিদা আক্তারের।

মাঠের পারফরম্যান্সের জন্য সুদর্শনা এই যুবতীকে মাঝেমাঝে খ্যাতির বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তবে বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবেই নিচ্ছে এই যুবতী। অনেকেই তাকে তার খেলার জন্য পছন্দ করে। অনেক ফ্যানও আছে তার। তাই বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয় না বলে জানায় সানজিদা।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট