চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গভর্নিং বডির সভাপতি হতে পারবেন না সাংসদরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ জুলাই, ২০২০ | ১০:০০ অপরাহ্ণ

সব ধরনের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিতে সাংসদকে সভাপতি করা সংবিধানের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। হাইকোর্ট এক রায়ে এই অভিমত দিয়েছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর আতরজান মহিলা মহাবিদ্যালয়ের (কলেজ) গভর্নিং বডির সভাপতি পদে সাতক্ষীরা-৪ আসনের সাংসদের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করে পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমন অভিমত ব্যক্ত করে হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের এই অভিমতের ফলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি হতে পারবেন না সাংসদেরা। এমনটাই জানিয়েছেন রিটকারীর আইনজীবী।

গত বছরের ২৫ নভেম্বর এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন। রিট আবেদনকারীর আইনজীবী জানান, আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) ছয় পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি হাতে পেয়েছেন।

বিভিন্ন রায় ও আদেশ পর্যালোচনা করে পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত বলেছেন, এটি কাচের মতো স্পষ্ট যে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিতে জাতীয় সংসদের সম্মানিত সদস্যগণ সভাপতি হিসেবে নিয়োগ/মনোনয়ন সংবিধানের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সর্বজনশ্রদ্ধেয় সংসদ সদস্যদের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়নে সার্বক্ষণিক নিবেদিত থাকতে হয়। এছাড়া গভর্নিং বডির সভাপতির পদ সংসদ সদস্যদের মহান পদের সঙ্গে একেবারেই বিপরীত। সংসদ সদস্যগণ তার নির্বাচিত এলাকাসহ সমস্ত দেশের উন্নয়নে নিবেদিত, অপর দিকে গভর্নিং বডির সভাপতি শুধু ওই প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে নিবেদিত।

রিট আবেদনকারীর আইনজীবীর তথ্যমতে, ২০১৬ সালের ১৬ জুন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এক আদেশে স্থানীয় সাংসদ এস এম জগলুল হায়দারকে শ্যামনগর উপজেলার আতরজান মহিলা কলেজের সভাপতি হিসেবে মনোনীত করা হয়। কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এস এম আফজালুল হক এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৭ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। একই বছরের ১০ জানুয়ারি এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দিয়ে সভাপতির দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা দেন। রুলে সাংসদকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সভাপতি হিসেবে মনোনয়নে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই চিঠি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। আর গত বছরের ২৫ নভেম্বর রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায় দেয় হাইকোর্ট।

আইনজীবী মো. হুমায়ুন কবির আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন। ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী, সহকারী এটর্নি জেনারেল ইলিন ইমন সাহা ও মাহফুজুর রহমান লিখন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, প্রত্যেক সাংসদ তাঁর এলাকার কার্যত নির্বাচিত অভিভাবক, তিনি তাঁর এলাকার অভিভাবক হিসেবে সব গভর্নিং বডিরও অভিভাবক। গভর্নিং বডির পদ পাওয়ার চেষ্টা তিনি কখনোই করবেন না। একজন সাংসদকে দেশের সব মানুষের কল্যাণের জন্য যেমনিভাবে ভালো ভালো আইন প্রণয়ন করতে হয়, তেমনিভাবে তাঁর এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্যও সার্বক্ষণিকভাবে নিজেকে নিয়োজিত রেখে দায়িত্ব পালন করতে হয়। একজন সাংসদকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে হয়। অন্যদিকে গভর্নিং বডির সভাপতি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পদমর্যাদা সাংসদের নিচের পদমর্যাদার।

রায়ে আদালত বলছে, সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাচিত সাংসদ গভর্নিং বডির সভাপতি হয়ে থাকলে কার্যত ওই গভর্নিং বডি একটি একক ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে বাধ্য। কারণ নির্বাচিত সাংসদের ওপর কথা বলার সাহস গভর্নিং বডির কোনো সদস্যের থাকে না, এটাই বাস্তব সত্য।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট