রাজধানীর গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে পাঁচ জনের মৃত্যুর ঘটনায় নিহতদের চার পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এই ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করতে বলেছেন আদালত।
বুধবার (১৫ জুলাই) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক, ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম, ব্যারিস্টার মুনতাসির আহমেদ ও রিটকারী নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব।
পরে নিয়াজ মোহাম্মদ মাহবুব বলেন, এর আগে আদালত আলোচনার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর গত ৩০ জুন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্স্তদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে আলোচনা করতে চিঠি দেয়। গত ২ জুলাই তাদের আলোচনা হয়। আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে অগ্নিকাণ্ডে নিহত মনিরুজ্জামানের পরিবার ২০ লাখ টাকায় ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আপসরফা করে। এদিকে আরেক ভিকটিম খোদেজা বেগমের ছেলে আলমগীর হাইকোর্টের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া রিটে অন্তর্ভুক্ত হয়। পরে আদালত এসব রিটের শুনানি নিয়ে নিহত মনিরুজ্জামানের পরিবার বাদে অবশিষ্ট চার পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন।
গত ৩০ মে রিট আবেদনটি দায়ের করেন ব্যারিস্টার নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব। ১ জুন আরও একটি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রেদোয়ান আহমেদ রানজীব ও ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ।
পরে গত ২ জুন বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে ১৪ জুনের মধ্যে আলাদা প্রতিবেদন চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। সে অনুসারে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনে ইউনাইটেড হাসপাতালের গাফিলতির কথা রয়েছে। রাজউক বলছে, করোনার জন্য আলাদা করে আইসেলেশন ইউনিট করতে তাদের অনুমতি নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস বলছে, অগ্নিকাণ্ডের সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নিলে রোগীদের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হতো।
এরপর আদালত ২৯ জুন সমঝোতা করতে আদেশ দিয়েছিলেন। তবে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগের মামলার তদন্তও দ্রুত সম্পন্ন করতে বলেছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মে রাতে রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে এসি বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃতদের মধ্যে ছিলেন চারজন পুরুষ এবং একজন নারী।
এ ঘটনায় ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অপমৃত্যুর মামলা করলেও আগুনে নিহত ভেরুন অ্যান্থনি পলের পরিবার ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে’ মামলা করেন।
মামলায় ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), পরিচালক, করোনা ইউনিটে সে সময় কর্মরত ডাক্তার-নার্স, সেফটি ও সিকিউরিটি কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে।
পূর্বকোণ/পিআর