চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে

রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ জুলাই, ২০২০ | ১১:০৫ অপরাহ্ণ

লকডাউনের শুরুতে মার্চ মাসে যখন কোনও হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি না নেয়ার পক্ষে তখন রিজেন্ট হাসপাতাল কোভিড ডেডিকেটেড হিসেবে চুক্তি করার আগ্রহ প্রকাশ করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সে সময় চুক্তি করে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ এই চুক্তির আগে পরিচয় থাকা তো দূরের কথা স্বাস্থ্য রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমকে চিনতেন না। আজ শনিবার (১১ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবির স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি গ্রুপের প্রতারণা বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়। এতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ করিমের প্রতারণার খবরের বিষয়ে আগে অবহিত ছিল না। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রোগী ভর্তি নেয়ার বিষয়ে সমঝোতা চুক্তির উদ্যোগ নেয়া হলেও এর আগে ক্লিনিক দুটি পরিদর্শন করে চিকিৎসার পরিবেশ উপযুক্ত দেখতে পেলেও তার লাইসেন্স নবায়ন ছিল না। গত ২১ মার্চ লাইসেন্স নবায়নের শর্ত দিয়ে রিজেন্টের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই চুক্তির দিনের আগে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে সাহেদের ‘পরিচয় তো দূরে থাক, তাকে আগে কখনও দেখেননি তিনি’। তবে সমঝোতার পর বেশ কয়েকবার সাহেদ অধিদপ্তরে এসেছিলেন। এ সময় সাহেদ তার সঙ্গে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তির যোগাযোগ আছে, তার হাসপাতালে কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির কোভিড আক্রান্ত আত্মীয় ভর্তি আছেন সেসব বলার চেষ্টা করতেন। এতে আরও বলা হয়, রিজেন্ট হাসপাতাল নিয়ে গোয়েন্দা ও অন্যান্য সূত্রে তাদের কাছে অভিযোগ আসছিল। এর ভিত্তিতে গত ৬ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে র‌্যাব অভিযান চালায়।

রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে অধিদপ্তরের সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে অধিপ্তরের অবস্থান ‘পরিষ্কার’ এবং একটি ‘ভালো কাজ করতে গিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতারিত হয়েছে’ বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। এ কারণে ৭ জুলাই থেকে হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।

একই বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার (জেকেজি) নামের আরেক প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার বিষয়েও তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানানো হয়। এতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সমন্বয়ক আরিফুল চৌধুরী ওভাল গ্রুপ লিমিটেড নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের স্বত্বাধিকারী। ওভাল গ্রুপ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ ২০১৮-এর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করে।

কোভিড সংকট শুরু হওয়ার পর আরিফুল চৌধুরী অধিদপ্তরে এসে জানান, দক্ষিণ কোরিয়ার মডেলে বাংলাদেশে কিছু বুথ স্থাপন করতে চায় জেকেজি। ওভাল গ্রুপের সঙ্গে আগে থেকেই কাজের অভিজ্ঞতা থাকার কারণে তাদের অনুমতি দেয়া যায় বলে মনে করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্রতারণার অভিযাগ পাওয়া গেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জেকেজি গ্রুপের সঙ্গে তাদের চুক্তি বাতিল করে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ইদানীং কোনও স্বার্থান্বেষী মহল কল্পিত ও মিথ্যা তথ্য নিয়ে গণমাধ্যমকে বিভ্রান্ত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুনাম নষ্ট করার প্রয়াস চালাচ্ছে। কোনও কর্মকর্তা বা কর্মচারী যদি অসততা বা অন্যায়ের আশ্রয় নেন, সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের অবস্থান স্পষ্ট। অপরাধ প্রমাণিত হলে আইনানুযায়ী যথাযথ শাস্তি হোক তা সবাই প্রত্যাশা করে। কিন্তু, অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠান ও পদ্ধতিগত সাধারণ সীমাবদ্ধতাগুলোকে আমলে নেওয়া হচ্ছে না। সহানুভূতির বদলে তীর্যক মন্তব্য এবং খণ্ডিত ও বিকৃতভাবে তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। অশালীনভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ব্যক্তিগত চরিত্র হননের প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, আমরা মনে করি এসবের পেছনে হীন ব্যক্তিস্বার্থ কাজ করে বলে। নিষ্ঠাবান কর্মকর্তারা এখন মিডিয়ায় বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার বিষয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে। ফলে আরও বেশি করে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ছে। কেউ অপরাধ করলে তদন্তেই তা ধরা পড়বে ও তাদের শাস্তিও হবে।

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট