চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

করোনা কমিয়েছে বিয়ের খরচ

ইমরান বিন ছবুর 

২ জুলাই, ২০২০ | ৫:১৬ অপরাহ্ণ

সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও গত তিন মাস ধরে রয়েছে করোনার প্রভাব। বন্ধ রয়েছে বিয়ে, জন্মদিন, মেজবানসহ সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান। বেকার সময় পার করছেন কমিউনিটি সেন্টারে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে এরমধ্যে অনেকেই ঘরোয়া ভাবেই বিয়ে সম্পন্ন করছেন। কোন প্রকারের অনুষ্ঠান ছাড়াই সীমিত পরিসরে ছেলে-মেয়েরা এসব বিয়ের আয়োজন করছেন। ফলে বিয়ের খরচও কমে এসেছে ৮০-৯০ শতাংশে। যেখানে আগে উভয়পক্ষের আট থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ হতো এখন সেখানে মাত্র ৫০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকায় বিয়ে সম্পন্ন হচ্ছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিয়ের পর অনেককেই পোস্ট দিতে দেখা যাচ্ছে। খুব স্বল্প পরিসরে এসব বিয়ে সম্পন্ন হচ্ছে। সেখানে অনেকেই মন্তব্য করেন, কম খরচে বিয়ের সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন ‘স্বল্প আয়ের’ যুবক। 

সম্প্রতি বিয়ে সম্পন্ন করেছেন শারাফাত আলী শওকত ও লিমা দম্পতি। শারাফাত স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে কাজ করেন, আর লিমা ব্র্যাকের আর্ট এন্ড ক্রাফটের প্রজেক্ট অফিসার। প্রায় পাঁচ বছরের প্রেমের সম্পর্ক তাদের। কথা হলে শারাফাত আলী শওকত জানান, কমবেশি আমরা সবাই জানি, করোনা দ্রুত যাচ্ছে না। তাই করোনার মধ্যেও গত ১০ জুন আমরা বিয়ে সম্পন্ন করি। যেখানে অন্য সময়ে (স্বাভাবিক) বিয়েতে আমাদের চার-পাঁচ লাখ টাকা খরচ করতে হতো। এখন সেখানে মাত্র ৫০ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে।   

জানতে চাইলে ছোবহানিয়া আলীয়া মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ আল্লামা জুলফিকার আলী বলেন, “ইসলামে বিয়েকে খুব সহজ করে দেয়া হয়েছে। যাতে যুবক-যুবতীরা নিজেদের চরিত্রকে হেফাজত করতে পারে। হাদিস শরীফে বলা হয়েছে, ‘হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে তারা যেন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। যাতে তারা দৃষ্টিকে সংযত রাখতে পারে এবং নিজের চরিত্র হেফাজত করতে পারে।’ কিন্তু আমরা তথাকথিত সংস্কৃতির নামে বিয়েকে দিন দিন কঠিন করে ফেলছি। বিয়ের আগেই ছেলে পক্ষ ঠিক করে দিচ্ছে মেয়ে পক্ষকে ৫০০-১০০০ হাজার লোক খাওয়াতে হবে। আবার মেয়ে পক্ষেরও কাবিনের একটা চাপ থাকে। যা উভয়পক্ষের উপর এক ধরনের বোঝা। 

তিনি আরও বলেন, তথাকথিত আনুষ্ঠানিকতার কারণে বিয়েকে দিন দিন কঠিন করে ফেলা হচ্ছে। ফলে ইচ্ছে সত্ত্বেও যুবক-যুবতীরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারছে না। এর কারণে অনেকেই অসামাজিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের এখন কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে। এরমধ্যে এখন দেখা যাচ্ছে, ছোট্ট পরিসরে বিয়ের আয়োজন হচ্ছে। আকদ্ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন হচ্ছে। বড় কোন অনুষ্ঠান হচ্ছে না। কিছুদিনের মধ্যে আমি নিজেও মসজিদে আকদ্ পড়িয়েছি। এসময় একজন বরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম মেয়ে কখন উঠিয়ে আনবে। বর উত্তর দিল আকদ শেষ করে তার বাবা-মা ও বড় ভাই গিয়ে মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে আসবে। বিয়ে এমনই হওয়া উচিত। করোনা শেষ হলেও এই রীতি যেন প্রচলন থাকে।

এ সম্পর্কে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও সমাজ বিজ্ঞানী ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, করোনা বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের মানুষকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন করেছে। এরমধ্যে আমাদের শিক্ষা দিয়েছে কিভাবে অপচয় ছাড়া চলা যায়। করোনার আগে আমরা দেখেছি, একটি বিয়ে উপলক্ষে সাত-আটটি পর্যন্ত অনুষ্ঠান হতো। এখন এসব ছাড়াই বিয়ে হচ্ছে। তাদের যে অনুষ্ঠান করার সামর্থ্য নেই তা কিন্তু না। পরিস্থিতি তা বাধ্য করেছে। প্রতি বছর রমজানে ইফতার পার্টির নামেও আমরা প্রচুর অপচয় করি। এ বছর সেটিও বন্ধ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, করোনা দেখিয়ে দিয়েছে, কিভাবে হাজার হাজার লোকের খাবারের আয়োজন না করেও বিয়ে সম্পন্ন হয়। শিখিয়েছে লাখ লাখ টাকা ব্যয় ছাড়া বিয়ে সম্ভব। করোনা পরবর্তী সময়ে আমাদের এই সংস্কৃতি অনুসরণ করা উচিত। 

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট