চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঢামেকে ২০ কোটি টাকা খাবারের বিলের খবর মিথ্যা: হাসপাতাল পরিচালক

অনলাইন ডেস্ক

১ জুলাই, ২০২০ | ৩:৩৯ অপরাহ্ণ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে করোনাভাইরাস চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের খাবারের বিল নিয়ে ওঠা বিতর্কের ব্যাখ্যা দিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলছেন, খবরটি পুরোপুরি মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বলেন, এক মাসে কোনো অবস্থাতেই খাবার বিল ২০ কোটি টাকা করা হয়নি। হাসপাতাল পরিচালক গত দুই মাসের ব্যয়ের হিসাবও ব্যাখ্যা করেছেন।

তিনি বলেন, গত দুই মাসে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন চিকিৎসক, নার্স, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং আনসার সদস্যসহ মোট ৩ হাজার ৬৮৮ জন। ডিউটি রোস্টার অনুযায়ী, তারা এক সপ্তাহ করোনা ওয়ার্ডে ডিউটি করার পর পরবর্তী তিন সপ্তাহ আবাসিক হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। এ হিসাবে প্রত্যেককে ১ মাস করে আবাসিক হোটেলে অবস্থান করতে হয়।

খরচের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, গত দুই মাসে আবাসিক হোটেল ভাড়া, দৈনিক তিন বেলা খাবার এবং যাতায়াত ভাতাবাবদ সম্ভাব্য ব্যয় ২৬ কোটি টাকা হিসাব ধরে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে ২০ কোটি টাকার চাহিদাপত্র পাঠানো হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘এক মাসের খাবারের বিল’ ২০ কোটি টাকা আসার ওই খবরটি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে আসলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

বিষয়টি সংসদ অধিবেশনে উঠলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গত সোমবার এ নিয়ে কথা বলেন। ‘এক মাসের খাবারের বিল’ ২০ কোটি টাকা কী করে হয়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, আমরা মে-জুন মাসের বাজেট ২০ কোটি টাকা দিয়েছিলাম। অর্থ মন্ত্রণালয় সেই টাকা ছাড় করেছে। সেই টাকা নিয়ে কথা উঠছে।

পরিচালক বলেন, ২০ কোটি টাকার মধ্যে হোটেলে থাকা, খাওয়া ও যাওয়া-আসার খরচও অন্তর্ভুক্ত।

তিনি বলেন, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের যাতায়াতের জন্য বিআরটিসির চারটি দ্বিতল বাস ভাড়া করা হয়। এক মাসে বাস ভাড়া ৪৬ লাখ ৯৮ হাজার ৮৭০ টাকা। সেই হিসাবে দুই মাসে পরিবহন ব্যয় প্রায় ১ কোটি টাকা। হিসাব করে দেখা গেছে, পরিবহন ব্যয়, হোটেলে থাকা-খাওয়াসহ দুই মাসে প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এক মাসের ব্যয় হিসাব করে দুই মাসের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসক নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যয় নির্বাহের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। এতে হোটেল ভাড়া ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা, খাবার খরচ বাবদ সাড়ে ৫ কোটি, পরিবহন বাবদ ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এই টাকা এখনও কোনো হোটেল কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করা হয়নি।

হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী মহামারীর এ দুর্যোগকালীন জীবন ঝুঁকি নিয়ে করানো রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। এর পরও এ ধরনের সংবাদ আমাদের ব্যথিত করেছে।

নাসির উদ্দিন বলেন, একজন ভদ্রলোক একটা বক্তব্য দিলেন, সেটি নিয়ে সমগ্র দেশ বিভিন্ন রকম কমেন্টস করল, যা আমাদের দারুণভাবে হতবাক করেছে। একজন লোক একটা মিথ্যা বক্তব্য দিলে পুরো দেশের মানুষ তার পেছনে চলে যাবে?

তিনি জানান, সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর ওই অভিযোগ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। তারা এর ব্যাখ্যা দেবেন।

‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সব কিছুর প্রমাণ দেবে। আমরা তো সরকারি কর্মকর্তা, আমাদের বিষয়ে তো নিশ্চয় সেই সিদ্ধান্ত হবে যদি আমরা সঠিকভাবে কাজ না করি। কিন্তু যিনি বা যে প্রতিষ্ঠান বা যে ব্যক্তি ওই মন্তব্য করে আমাদের সমগ্র চিকিৎসক সমাজ ও আমাদের এই বৃহৎ প্রতিষ্ঠানকে অপদস্ত করেছে।’  আমি মনে করি তাকেও সামনে আনা উচিত।”

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট