চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

লঞ্চডুবি: বুড়িগঙ্গায় ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার

লঞ্চডুবি: বুড়িগঙ্গায় ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ জুন, ২০২০ | ৯:১৮ অপরাহ্ণ

ঢাকার শ্যামবাজারের কাছে বুড়িগঙ্গা নদীতে এক লঞ্চের ধাক্কায় আরেকটি ছোট লঞ্চ ডুবে মারা গেছেন অন্তত ৩২ জন। আজ সোমবার (২৯ জুন) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শ্যামবাজারের কাছে নদীতে চাঁদপুর থেকে আসা ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় এমভি মর্নিং বার্ড নামের মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে যাত্রী নিয়ে আসা সদরঘাটগামী লঞ্চটি ডুবে যায়।

ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকর্মীরা থেকে ৩০টি মরদেহ উদ্ধার করেন। এছাড়া স্থানীয়রা আরও দু’জনকে উদ্ধার করে নিকটস্থ মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা রোজিনা ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। পাশাপাশি নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মীরাও উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন।

বিআইডব্লিউটিএ’র পরিবহন পরিদর্শক মো. সেলিম জানান, মুন্সিগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা মর্নিং বার্ডে অর্ধশতাধিক যাত্রী ছিল বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও অনেকেই ভেতরে আটকা পড়ে যান। তবে ঠিক কতজন নিখোঁজ রয়েছেন তা স্পষ্ট নয়।

ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, দুর্ঘটনা ঘটার কাছাকাছি এলাকায় নদীর মাঝখানে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উল্টে রয়েছে। তাই ভেতরে কোনো মৃতদেহ আছে কিনা তা তল্লাশি করা যায়নি। কথা ছিল বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী নৌযান তল্লাশি শেষ হলে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি টেনে তুলে সরিয়ে নেবে। কিন্তু বাবুবাজার ব্রিজের নিচ দিয়ে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় আসতে না পারায় তা সম্ভব হয়নি।

এদিকে, দুর্ঘটনার পর হাজার হাজার মানুষ ঘাটে এসে ভিড় করেন। মর্নিং বার্ডের নিখোঁজ যাত্রীদের খোঁজে ঘাটে আসা স্বাজনদের বিলাপ করতে দেখ যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চাঁদপুর থেকে আসা ময়ূর-২ ভোর সাড়ে ৪টার দিকে লালকুঠী ঘাটে যাত্রী নামিয়ে অন্য ঘাটে গিয়ে বার্থিং করে। পরে আবার যাত্রী তোলার জন্য ব্যাক গিয়ারে চাঁদপুর ঘাটে আসছিল। ওই সময় পেছনে নদীতে থাকা এমভি মর্নিং বার্ডের সঙ্গে ধাক্কা লাগে।

সকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক সাংবাদিকদের বলেন, দুই লঞ্চের কর্মীদের অসতর্কতায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।

দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, একটি সিসিটিভি ফুটেজে যেভাবে ঘটনাটি দেখে ধাক্কা দেয়ার বিষয়টি ‘পরিকল্পিত’ বলে মনে করা হচ্ছে। লঞ্চডুবিতে মারা যাওয়া প্রত্যেকের পরিবারকে দেড় লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) মো. রফিকুল ইসলাম খানকে আহ্বায়ক ও বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা) মো. রফিকুল ইসলামকে সদস্য সচিব সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ঘটনার এ দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।

বিআইডিব্লিউটিএ’র পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, তাদের পক্ষ থেকেও নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ময়ূর-২ লঞ্চটি জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রাণ গেল যাদের

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা ওসি মোহাম্মদ শাহজামান জানান, ৩২ জনের মরদেহ মর্গে এসেছে। তাদের সবাইকে শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের সবার বাড়ি মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়।

মৃতরা হলেন- শাহাদাত হোসেন (৪৪), আবু তাহের বেপারী (৫৮), সুমন তালুকদার (৩৫), ময়না বেগম (৩৫), তার মেয়ে মুক্তা আক্তার (১৩), আফজাল শেখ (৪৮), মনিরুজ্জামান মনির (৪২), গোলাপ হোসেন (৫০), সুবর্ণা বেগম (৩৮), তার ছেলে তামিম (১০), আবু সাঈদ (৩৯), সুফিয়া বেগম (৫০), শহিদুল ইসলাম (৬১), মিজানুর রহমান কনক (৩২), সত্য রঞ্জন বনিক (৬৫), শামীম বৈপারী (৪৪), বিউটি আক্তার (৩৮), আয়শা বেগম (৩৫), মো. মিল্লাত (৩৫), মো. আমির হোসেন (৫৫), সুমনা আক্তার (৩২), পাপ্পু (৩২), মো. মহিম (১৭), দিদার হোসেন (৪৫), হাফেজা খাতুন (৩৮), হাসিনা রহমান (৩৫), সিফাত (৮), আলম বেপারী, তালহা (২), ইসমাইল শরীফ (৩৫), সাইফুল ইসলাম (৪২) ও বাসুদেব নাথ (৪৫)।

 

 

 

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট