চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভুতুড়ে বিল সংশোধন করে বিদ্যুতের বকেয়া আদায়ে ৬ দফা পদক্ষেপ

অর্থবছরের হিসেব মিলাতেই গ্রাহকের উপর বাড়তি বিল!

অনলাইন ডেস্ক

২৩ জুন, ২০২০ | ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ

মাসের পর মাস অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল এলেও ভোগান্তি নিরসনে নেই কোনও কার্যকর ব্যবস্থা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) অভিযোগ শুনে মৌখিকভাবে বিতরণ কোম্পানিকে নিরসনের জন্য বললেও লিখিত কোনও আদেশ দেয়নি। আর বিদ্যুৎ বিভাগ থেকেও বারবার বলা হচ্ছে গ্রাহক ভোগান্তি নিরসন করতে। কিন্তু এরপরও বিতরণ কোম্পানি একই কাজ করে চলেছে। বিতরণ কোম্পানি সূত্র বলছে, বাড়তি বিলের ভোগান্তি জুলাই থেকে থাকবে না। কারণ হিসাবে সংশ্লিষ্টরা বলেন, জুনে অর্থবছরের হিসাব মিলাতে গিয়ে তারা এসব করছে।

বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির বেশ কয়েকজন সাবেক এবং বর্তমান কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বিলের বিলম্ব মাশুলের ক্ষেত্রে সরকার ছাড় দিয়েছিল। ফলে এই সময়ে বিল পায়নি বিতরণ কোম্পানি। এরপর ৩০ জুনের মধ্যে বিল আদায়ে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। ফলে তারা গ্রাহককে ব্যবহার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল ধরিয়ে দিচ্ছে।

একজন কর্মকর্তা বলেন, সব সময়ই বিতরণ কোম্পানি এপ্রিল, মে এবং জুন এই তিন মাসে কিছু কিছু করে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল আদায় করে। তিনি বলেন, এটি অন্য সময় গ্রাহক টেরই পান না। কিন্তু এবার তিন মাসের বিল এক সঙ্গে জমে যাওয়ায় কিছুটা চোখে লাগছে। তিনি বলেন, জুনে যেহেতু অর্থবছর শেষ হয় সেজন্য হিসাব-নিকাশের একটি বিষয় থাকে। বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে বিতরণ কোম্পানিগুলো চুক্তি করে। এই চুক্তিতে পারফরমেন্স দেখানোর একটি বিষয় থাকে। যে কোম্পানি যত ভালো পারফরমেন্স দেখাতে পারে সেই কোম্পানি তত বেশি বোনাস পায়। আবার তাদের মূল্যায়নও বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে বেশি। এটি করতে গিয়ে দেখা যায় তিন মাসে ধারাবাহিকভাবে গ্রাহকের বিল কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তিন মাসে গড়ে প্রতি গ্রাহককে ১০ থেকে ১৫ ইউনিট বেশি বিদ্যুৎ বিল করা হয়। এতে করে বছর শেষে বিদ্যুতের সিস্টেম লসসহ অন্য সবকিছু মিলিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়। ফলে সরকারের কাছে বিতরণ কোম্পানির পারফরমেন্সও ঠিক থাকে।

এবার যেহেতু মার্চ থেকে মে এই সময়ে গ্রাহকে অতিরিক্ত বিল ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই মে মাসে এসেও একই পরিস্থিতির শিকার হওয়ার বিষয়টি সবার চোখে লাগছে। একটি বিতরণ কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জুনের পরে আর এই পরিস্থিতি থাকবে না। এই মাসটি কোনোরকমে গেলে জুলাই থেকে সব ঠিক হয়ে যাবে। গ্রাহকের আর অভিযোগ থাকবে না।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডিপিডিসি) নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) এটিএম হারুন অর রশিদ বলেন, এপ্রিল মে মাসে গরম বেশি থাকায় সাধারণত গ্রাহকরা বিদ্যুৎ বেশি খরচ করেন, যে কারণে বিল বেশি আসে। এছাড়া করোনার কারণে মানুষ এখন বাসায় বেশি থাকছে, যে কারণেও বিল বেশি আসতে পারে। বাজেট সমন্বয়ের কারণে বিল বেশি ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ একেবারেই সঠিক নয়। আমরা এ ধরনের কাজ করি না।

এদিকে, বিদ্যুতের বিলের এই ভোগান্তি নিরসনে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) চিঠি দিয়েছিল কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল বলেন, ক্যাবের চিঠি আমরা আইনগতভাবে গ্রহণ করতে পারি না। তবে তাদের অভিযোগ আমরা আমলে নিয়েছি। আমরাও বিদ্যুৎ বিলের ভোগান্তির বিষয়ে কিছুটা শুনেছি। তাই বিতরণ কোম্পানিগুলোতে মৌখিকভাবে গ্রাহকদের এই ভোগান্তি নিরসনের কথা জানিয়েছি। তবে কোনও আদেশ দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, বিতরণ কোম্পানিগুলো যদি কোনও গ্রাহকের কাছ থেকে অতিরিক্ত বিলের অভিযোগ পায় সেক্ষেত্রে তারা যেন বিলটি যাচাই বাছাই করে। যদি কোনও কারণে বিল বেশি আসে সেটি সমন্বয় করে দিতে বলেছি। পাশাপাশি দুঃখ প্রকাশ করতে বলেছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, ক্যাব সাধারণ মানুষের পক্ষে সব সময় কথা বলে। সাধারণ মানুষের সমস্যা হলে সেটি বিইআরসিকে চিঠি দিয়ে জানায়। এখন বিইআরসি যদি বলে তারা আইনগতভাবে আমাদের চিঠি নিতে পারবে না, তাহলে আমরা তাদের আর চিঠি দেব না। কিন্তু তারা তো কিছু জানায় না আমাদের। তিনি বলেন, গ্রাহক দিনের পর দিন বিদ্যুতের অতিরিক্ত বিল দেবে না। প্রয়োজনে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।

ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউসার আমির আলী বলেন, বিইআরসির সরাসরি কোনও আদেশ বা নির্দেশনা আমরা পাইনি। তবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় এই বিষয়ে আলোচনা হয়। সেখানে বিইআরসির প্রতিনিধিরাও ছিলেন। সেখানেই আমাদের এই বিষয়ে জানানো হয়। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি গ্রাহকের ভোগান্তি নিরসনের। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। চলতি মাসের পর থেকে আশা করি এই সমস্যা থাকবে না।- সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

 

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট