চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

তামাক ও নিকোটিন থেকে তরুণদের বাঁচানোর আহ্বান

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস আজ

অনলাইন ডেস্ক

৩১ মে, ২০২০ | ৩:২৯ অপরাহ্ণ

আজ ৩১ মে, বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ‘তামাক কোম্পানির কূটচাল রুখে দাও – তামাক ও নিকোটিন থেকে তরুণদের বাঁচাও’। দিবসটিকে ঘিরে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ তামাকবিরোধী সংগঠনসমূহ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে, তামাকপণ্য সেবনে প্রতিবছর ৮০ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। লাভ ধরে রাখতে তাই তামাক কোম্পানিগুলোকে প্রতিনিয়ত নতুন ক্রেতা সৃষ্টি করতে হয়। আর এক্ষেত্রে তাদের সবচেয়ে বড় টার্গেট তরুণ প্রজন্ম।

তামাক কোম্পানিগুলো তরুণ প্রজন্মকে টার্গেট করার জন্য বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করছে উল্লেখ করে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, স্থায়ীত্বশীল উন্নয়নের জন্য সংগঠন ইপসা। তামাক বিরোধী সংগঠনটি বলছে, তামাক কোম্পানিগুলো প্রতিবছর বিজ্ঞাপন ও বিপণনের জন্য ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় করে। আর এসব বিজ্ঞাপনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় তরুণ প্রজন্ম। বিবৃতিতে বলা হয়, শিশু-কিশোরদের আকৃষ্ট করতে ১৫ হাজারের বেশি সুগন্ধযুক্তার তামাকপণ্য (ই-সিগারেট, শিশা এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য) বাজারজাত করছে তামাক কোম্পানিগুলো। এতে শিশুখাদ্য আর তামাকের ফারাক করতে পারছে না অনেক স্কুলপড়ুয়া, স্বাস্থ্য ক্ষতিকে অগ্রাহ্য করে হাতে তুলে নেয় এসব তামাকপণ্য। আকর্ষণীয় ডিজাইন ও আকৃতির এবং একইসাথে বহন করা খুবই সহজ সেসব তামাকপণ্য (যেমন, ইউএসবি স্টিক, ক্যান্ডি কিংবা কলম আকৃতির তামাকপণ্য) বাজারজাত করছে কোম্পানিগুলো। এছাড়াও প্রথাগত সিগারেটের নিরাপদ বিকল্প হিসেবে ‘কম ক্ষতিকর’ বা ‘ক্লিনার’ হিসেবে চলছে নতুন প্রজন্মের তামাকপণ্যের প্রচার। এছাড়া চলচ্চিত্র, টিভি প্রোগ্রাম ও অনলাইন স্ট্রিমিং প্রোগ্রামগুলোতে তামাকের চিত্রায়ণ বাড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে তারুণ্যের মনে জায়গা করে নেয় তামাক কোম্পানি, তামাকপণ্যকে উপস্থাপন করা হয় বুদ্ধিমত্তা, শারীরিক সৌন্দর্য, যৌন আবেদনের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হিসেবে। তরুণদের প্রভাবিত করতে অর্থের বিনিময়ে ব্যবহার করা হয় মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়া আইকন। তরুণদের কাছে জনপ্রিয় এমন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তামাকপণ্যের প্রচার করার পাশাপাশি বিনামূল্যে দেয়া হয় নমুনা পণ্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তামাক কোম্পানির সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজন করা হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান (জব ফেয়ার, ব্যাটল অব মাইন্ডস ইত্যাদি)। শিশু এবং তরুণ শিক্ষার্থীরা যাতে স্বল্পমূল্যে এবং অনায়াসে তামাক ও নিকোটিন পণ্যের নাগাল পায় সেজন্য বিদ্যালয়ের আশেপাশে এসব পণ্য খুচরা বিক্রয়সহ যতদূর সম্ভব সহজলভ্য করা হয়। শিশুদের পছন্দের খাবার যেমন, ক্যান্ডি, চিপস, মিষ্টান্ন, নাস্তা খাবার ও কোমল পানীয়র কাছাকাছি তামাক পণ্যগুলো সাজানো হয় এবং বিক্রেতাদের প্রণোদনা দেয়ার পাশাপাশি উপহার দেয়া হয় বিপণন সরঞ্জাম এবং প্রদর্শনী বাক্স।

এই বছর বিশ্ব তামাক দিবস এমন এক সময়ে উদযাপিত হচ্ছে যখন ধূমপান ও তামাকপণ্য নিয়ে সচেতন করা হচ্ছে সকলকে। করোনাভাইরাসে সৃষ্ট মহামারিতে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে তামাকের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং এটি সংক্রমণ সহায়ক এই বিবেচনায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে।

স্যান ফ্র্যানসিসকোর ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকরা জানিয়েছেন, অধূমপায়ীদের তুলনায় করোনাভাইরাসের ধূমপায়ীদের আক্রান্ত হওয়ার ও মৃত্যুঝুঁকি ১৪ গুণ বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম ঘেব্রেইয়েসুস করোনার ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে ধূমপান পরিত্যাগের আহ্বান জানান। করোনা পরিস্থিতিতে সকল তামাকজাত দ্রব্য বিপণন ও বিক্রয় সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করার জন্য দাবিও উঠে সম্প্রতি।

ইপসার উপ পরিচালক নাছিম বানু বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের টার্গেট করে নিত্যনতুন কৌশল প্রয়োগ করে তাদের ব্যবসা প্রচার করছে। সারাবিশ্বে সকল ধরনের ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর ২৫ শতাংশের জন্য দায়ী তামাকপণ্য। সেজন্য তামাকপণ্যের ক্ষতি ও তামাক কোম্পানির কূটকৌশল সম্পর্কে শিশু-কিশোরসহ সকলকে সচেতন করে তুলতে হবে। একই সাথে সরকারকেও তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধি করে সেগুলো শিশু ও তরুণদের নাগালের বাইরে নিয়ে যেতে হবে। ’

এদিকে তামাক নিয়ন্ত্রণে তামাকের কর বৃদ্ধির দাবি উঠেছে বিভিন্ন সংস্থা থেকে। বর্তমানে বিদ্যমান সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা ৪টি থেকে ২টিতে (নিম্ন এবং প্রিমিয়াম) নামিয়ে আনা, বিড়ির ফিল্টার এবং নন-ফিল্টার মূল্য বিভাজন তুলে দেয়া, ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের (জর্দা ও গুল) মূল্য বৃদ্ধি করাসহ সকল তামাকপণ্যের খুচরামূল্যের ওপর ৩ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপ করার দাবি জানাচ্ছে তামাক বিরোধী সংস্থাসমূহ।

পূর্বকোণ/পিআর-রাজু

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট