চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সংবাদভাষ্য

অপপ্রচারমূলক পোস্টের জের শঙ্কায় চিকিৎসকের জীবন

ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী

১৯ মে, ২০২০ | ৩:৪০ পূর্বাহ্ণ

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের জেরে একজন তরুণ চিকিৎসক উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, এমন নজির ঘটেছে খোদ বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামে। গণমাধ্যমের কল্যাণে ঘটনাটি অনেকেই ইতিমধ্যে জেনে গেছেন। শ্বাসকষ্ট নিয়ে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সৈয়দ জাফর হোসাইন রুমি গত এক সপ্তাহ ধরে তীব্র রোগ-যন্ত্রণায় ভুগছেন। করোনাভাইরাসের নমুনা দুই- দুইবার পরীক্ষা করেও ফলাফল নেগেটিভ পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসা দেয়ার জন্য একটি এয়ার এম্বুলেন্স ভাড়া করে চট্টগ্রাম নিয়ে আসে। কিন্তু ফেসবুকে কেউ কেউ ওই রুগী ‘করোনায় আক্রান্ত’ এমন তথ্য প্রচার করায় এয়ার এম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষ রোগীকে ঢাকায় না নিয়েই ফেরত চলে যায়। ইমপ্রেস এভিয়েশন নামের ওই এয়ার এম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষের অভিযোগ অনেকটা এরকম, রুগী করোনা আক্রান্ত। রোগ সম্পর্কে তথ্য গোপন করায় তারা ফেরত গেছেন। কারণ এয়ার এম্বুলেন্সে করোনার রোগী বহন করেন না তারা।
শেষ খবর হলো- ঢাকায় পাঠাতে ব্যর্থ হওয়ায় ডা. সৈয়দ জাফর হোসাইন রুমিকে এখন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। সেখানেই সাধ্যমতো চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা চলছে।
একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে প্রশ্ন জাগে, যারা ওই চিকিৎসকের করোনা হয়েছে বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন, তাদের উদ্দেশ্য আসলে কি ছিল? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন পোস্ট দিয়ে একজন তরুণ চিকিৎসকের জীবন সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়ে কার-কি লাভ হল? মাঝখানে একজন সম্ভাবনাময় চিকিৎসক ও তার পরিবার অনাকাক্সিক্ষত ভবিষ্যতের সম্মুখীন হল। আর যদি শেষ পর্যন্ত অনাকাক্সিক্ষত কোন ঘটনা ঘটে যায় (আল্লাহ না করুন) তাহলে দেশের এই ক্ষতির দায় কে নেবে?
বলতেই হচ্ছে, আমাদের একটি সস্তা প্রবণতা হল- কিছু হলেই ফেসবুকে সেটা শেয়ার করা। সেটা নৈতিক- না অনৈতিক তার ধার আমরা ধারি না। এমনকি শিক্ষিত- সচেতন মানুষেরাও এমন কাজটি নির্দ্বিধায় করেন। তার পরিণাম কি হবে, সেটা বিন্দুমাত্র ভাবেন না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন অপ-প্রচারের বিষয়টি যারা করেছেন, তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শস্তির আওতায় আনা উচিত। একইভাবে আমাদের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা বোধও জাগ্রত করা দরকার। গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সচেতনতাবোধ গড়ে তোলার কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে সরকারের তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক দপ্তর। এগিয়ে আসা উচিত সামাজিক- স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট