চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

সাড়ে ১১ হাজার কৃষককে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার

সরকারের নজর এবার আউশ চাষে

বৃষ্টি থাকায় কম খরচ, ভূগর্ভের পানির ব্যবহারও কমবে

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৫ মে, ২০২০ | ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে আমনের চাষাবাদ হচ্ছে পৌনে দুই লাখ হেক্টর জমিতে। আর বোরোর ছিল ৬০ হাজার হেক্টরের কাছাকাছি। দুই চাষাবাদেই ভূ-স্তরের পানি ব্যবহৃত হয়। খরচও বেশি। সেই তুলনায় আউশের চাষাবাদ অনেক কম। অথচ আউশের চাষে ডিজেল, পানি ও সারের ব্যবহার অনেকটা কম। এজন্য আউশ আবাদ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। কৃষকদের প্রণোদনা ও বীজ সহায়তা দিয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগ জানায়, মূলত ভূ-গর্ভের পানির ব্যবহার কমাতে সরকার বোরোর চেয়ে আউশের চাষাবাদে জোর দিয়েছে। গত চার বছরে আউশের আবাদ বেড়েছে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, চলতি মৌসুমে আউশ আবাদে ১১ হাজার ৫শ কৃষককে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এছাড়াও আরও এক হাজার কৃষককে বীজ সহায়তা দেওয়া হবে। গত মৌসুমে আউশের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ হাজার হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ৩৭ হাজার হেক্টর। ২০১৮-১৯ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার হেক্টর। এছাড়াও এ মৌসুমে খরিপ শস্য ও শস্যদানা চাষাবাদ করা হয়। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, সরকার বোরোর আবাদ স্থিতিশীল রেখে আউশ আবাদ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে। কারণ আউশ চাষ হচ্ছে সম্পূর্ণ প্রকৃতি-নির্ভর। সেচের প্রয়োজন হয় না। বৃষ্টি পানিতে বীজ বপণ থেকে শুরু চাষাবাদ করা যায়। সার ও কীটনাশটক ব্যবহারও কিছুটা কম দিতে হয়। বোরো হচ্ছে সেচ-নির্ভর। বোরো আবাদ বাড়ানো হলে ভূ-গর্ভের পানির স্তর আরো নিচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আউশ চাষে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করতে নগদ প্রণোদনাসহ কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আউশের আবাদ বাড়ানোর জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। কৃষকদের প্রণোদনা হিসেবে নগদ টাকা, সার ও বীজ প্রদান করা হচ্ছে। তারই ধারবাহিকতায় কয়েক বছর ধরে আউশের চাষ বেড়েই চলেছে। কৃষি বিভাগ জানায়, বোরো ধানের চাষ বাড়ানোর জন্য আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করছি না। কারণ বোরো হচ্ছে সেচ-নির্ভর। ভূ-পৃষ্ঠের পানি বেশি ব্যবহার করা হয়। আর খরচও বেশি। তাই আউশের প্রতি জোর দিয়েছে সরকার। আউশের চাষ সম্পূর্ণ প্রকৃতি-নির্ভর। বৃষ্টির পানিতে চাষাবাদ করা হয়। কৃষি বিভাগ জানায়, এবার বোরো চাষা হয়েছে ৬১,১৮০ হেক্টরে। তবে বোরো মৌসুমে এখন শীতকালীন ও খরিপ ফসলের চাষাবাদ আগের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়েছে। লাভ বেশি হওয়ায় ধানের চেয়ে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে কৃষক। বোরো তুলনায় আউশের চাষ প্রায় ১০-১২ হাজার হেক্টর বেড়েছে। ২০১৪-১৫ মৌসুমে আউশের চাষ হয়েছিল ২৮ হাজার হেক্টর। ১৫-১৬ মৌসুমে তা বেড়ে ৩২ হাজার হেক্টরে দাঁড়ায়। ১৬-১৭ মৌসুমে ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে আউশের ৩৫,১৮২ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চলতি মৌসুমে আউশের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ৩৭ হাজার হেক্টর।
কৃষি বিভাগ জানায়, আউশের প্রণোদনা হিসেবে নগদ টাকা, সার ও বীজ প্রদান করা হচ্ছে। উফশী জাতের চাষাবাদের জন্য ৫ শ’ টাকা ও নেরিকা জাতের (আফ্রিকান জাত) জন্য এক হাজার টাকা করে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। নেরিকা জাতের বীজ অপেক্ষাকৃত শুষ্ক মৌসুমে এবং কম সেচে প্রস্তুত করা যায়। দাম কিছুটা বেশি বিধায় ভর্তুকির পরিমাণও দ্বিগুণ দেয়া হয়েছে।
বোরোতে সেচ খরচে বিদ্যুৎ বা ডিজেলের দরকার হয়। আর দিন দিন এ দুটির মূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে। এছাড়া সারের খরচও বাড়ছে। খরচের তুলনায় বোরো চাষে লাভ কম। তাই আমরা খরিপ ফসলের উপর জোর দিচ্ছি। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি।
কৃষকেরা জানান, বোরো চাষে কানিপ্রতি ১২ শ’ থেকে ১৫ শ’ টাকা পর্যন্ত সেচ খরচ গুনতে হয়। এ ছাড়াও লবণাক্ততা, পোকা-মাকড়ের আক্রমণের ঝুঁকিও বেশি থাকে। সেই হিসাবে আউশে ঝুঁকি কম। সম্পূর্ণ পানির ওপর নির্ভর করে চাষাবাদ করা যায়। অনেক খরচ সাশ্রয় হয়।
জুন মাসের শুরু থেকে আউশের চাষাবাদ শুরু হয়। জুন মাসজুড়ে চারা রোপণ করা হয়। তবে এপ্রিল-মে মাসে বীজতলা তৈরি শুরু হয়। অনেকটা শুষ্ক মৌসুমে বীজতলা তৈরি করা হয়। এসময় বৃষ্টি না হলে বীজতলা তৈরিতে দেরি হয়ে যায়। ধান কাটা হয় আগস্ট মাস থেকে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ধান কাটা হয়। তবে আউশের আবাদে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা বেশি থাকে বলে জানান কৃষকেরা। জুন-জুলাই মাসে দেশে প্রচুর বৃষ্টি, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস দেখা যায়। যার প্রভাব পড়ে আউশ চাষে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমন ও বোরোর চেয়ে বেশি পিছিয়ে পড়েছে আউশ চাষ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট