চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এখনই রাজনীতি নিয়ে ভাবছেন না খালেদা

ঢাকা অফিস

১৫ মে, ২০২০ | ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কি আলোচনা হয়েছে তা নিয়ে বেশ কৌতুহল লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিভিন্ন মহলে। সম্প্রতি খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় কথা বলেছেন তারা। এটা দলের নেতাকর্মীরা যেমন জানতে চান, তেমনি আগ্রহ আছে সরকারেও। কিন্তু ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘রাজনৈতিক নয়, ওটা ছিলো মূলত সৌজন্য সাক্ষাৎ। তিনি তো অসুস্থ। রাজনীতি নিয়ে কথা বলার সময় কোথায়!’ সূত্র ডয়চে ভেলে। গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের কোনও এক রাতে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় মির্জা ফখরুল দেখা করেন। তিনি খালেদা জিয়ার বাসায় প্রায় দেড় ঘণ্টা ছিলেন। এ সময় খালেদা জিয়াকে দলের ত্রাণ তৎপরতা ও বর্তমান অবস্থার কথা জানান খালেদা জিয়াকে। করোনায় চিকিৎসা, কৃষি উৎপাদন পর্যবেক্ষণ ও দলের ত্রাণ তৎপরতা পর্যবেক্ষণের জন্য জাতীয় করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সেল গঠনের কথা তিনি জানান দলের চেয়ারপারসনকে। সারাদেশে কর্মহীন ও গরিব মানুষকে সহায়তার জন্য দলের পক্ষ থেকে নেতা-কর্মীদের চিঠি দেয়ার কথাও জানানো হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এগুলোতো সাধারণ আলোচনা। করোনা পরিস্থিতি, ত্রাণ তৎপরতা এগুলো তাকে জানানো হয়েছে। সৌজন্য সাক্ষাতে তো আর বিস্তারিত আলোচনা হয় না।’ তিনি দলের জন্য কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা জানাতে চাইলে বলেন, ‘না কোনো নির্দেশনা দেননি, তিনি অসুস্থ।’ গত ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রিজন সেল থেকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পাওয়ার দিন খালেদা জিয়ার সাথে মির্জা ফখরুলের এক ঝলক দেখা হয়। দলের মহাসচিব ৪৮ দিন পর তার বাসায় গিয়ে দেখা করলেন। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি ১৪ দিনের হোম কোয়ারান্টিনে ছিলেন। কোয়ারান্টিন শেষ হওয়ার পরও তার পরিবারের লোকজন ছাড়া দলের কোনো নেতার দেখা করার অনুমতি মেলেনি। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এতদিন তো করোনার কারণে আমরা কেউ তার সাথে দেখা করতে পারিনি। এবার তিনি দেখা করলেন।’ তবে এর মধ্যে দলীয় আর কোনো নেতা খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেননি বলে জানান বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইং-এর সদস্য শায়রুল কবির খান। তিনি জানান, ‘খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবায়াদা রহমানের তত্ত্বাবধানে ঢাকায় তার বোন, ভাই, ভাইয়ের বউ তার দেখাশোনা করেন। এখন প্রতিদিন ইফতারির আগে তার বাসায় যান। আর তার ব্যাক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের চিকিৎসক দল তার চিকিৎসার দিকটা দেখছেন। তাকে এখন বাসায় রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতির কারণে আপাতত তিনি কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন না।’
খালেদা জিয়া দেশের বাইরে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে টেলিফোনে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। পরিবারের সদস্যদের বাইরে আপাতত তার যোগাযোগ সীমিত। বিএনপির এক নেতা জানান, ‘তিনি তো শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পেয়েছেন। তাই তার যোগাযোগ শর্ত বজায় রেখেই হচ্ছে। তিনি তারেক রহমানের সাথে ফোনে কথা বলবেন এটাইতো স্বাভাবিক। তারেক রহমান তার বড় ছেলে। তিনি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানও।’
মির্জা ফখরুল খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করার পর দলের অন্য নেতাদের এ নিয়ে কিছু শেয়ার করেছেন বলেন জানা যায়নি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘চেয়ারপারসনের সাথে দলের মহাসচিবের কি কথা হয়েছে জানি না। আর আমিও ফোন করে জানতে চাইনি। তবে হেলথ ইস্যু ছাড়া আলোচনার তেমন কোনো বিষয় নেই। আমার মনে হয় না তিনি এখন রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন।’
খালেদা জিয়ার বাসায় তার নিরাপত্তার দিকটি দেখছেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দলের সদস্যরা। নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার জানান, ‘সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে আলাদা কোনো নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে না। আমরা নিরাপত্তার জন্য পুলিশের আইজির কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো জবাব এখনো পাওয়া যায়নি।’
খালেদা জিয়ার সাথে তার চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যদের বাইরে কেউ দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন না। করোনা এবং তারা শারীরিক অবস্থার কারণেই দেখা করার সুযোগ সীমিত। একমাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দু’দিন আগে দেখা করেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের কারাদ- দেয়া হয়। ওইদিনই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে দুদকের আপিলে এই মামলায় সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়। এরপর তাঁকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাত বছরের কারাদ- দেয়া হয়। ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট